`আর যেন কোনো মা সন্তানের পোড়া দেহ না দেখেন`

প্রকাশ | ০৩ এপ্রিল ২০১৯, ২১:০২ | আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৯, ২২:৫৭

রাহেবুল ইসলাম টিটুল, লালমনিরহাট আঞ্চলিক প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস

`আল্লাহ আমাদের অনেক দিয়েছেন, টাকা-পয়সা কিছুই চাই না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন, আগুন নেভাতে ২০তলা পর্যন্ত যেন পানির ব্যবস্থা থাকে। দেশের ফায়ার সার্ভিসের আধুনিক সরঞ্জাম ও ব্যবস্থাপনা করেন। আর যেন কোনো সন্তানের মা আগুনে পোড়ার দেহ না দেখেন। কোনো মায়ের বুক খালি না হয়।`

কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর বনানীর বহুতল ভবন এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে নিহত আনজির সিদ্দিক আবিরের (২৬) মা তাশরিফা খানম তামান্না।

বুধবার দুপুরে পাটগ্রাম পৌর শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকার নিজ বাড়িতে একই ধরনের কথা বলেন নিহত আবিরের পরিবারের অন্য সদস্যরাও।

নিহত আবির ওই এলাকার আবু বকর সিদ্দিক বাচ্চু মিয়ার ছেলে। তার মা তাশরিফা খানম তামান্না পাটগ্রাম মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট আবির বনানীর এফআর টাওয়ারে মিকা সিকিউরিটিজ লিমিটেড কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন।

 

 

গত ২৮ মার্চ দুপুর ১২টা ৫২ মিনিটে বনানীর এফআর টাওয়ারের ২৩তলা ভবনটিতে আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

নিহত আবিরের মা তামান্না বলেন, `বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের খেলোয়াড়দের নিয়ে ঢাকা গিয়েছিলাম বিজয়ের খবর নিয়ে আসতে। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, ছেলের মরদেহ নিয়ে আসতে হলো, এটা কখনো চিন্তাও করিনি।`

ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে সন্তানহারা এই মা বলেন, `সকালে সে ফোন করে বললো- আম্মু, তুমি আমার বনানী অফিসে আসো। আমি তোমার সঙ্গে বাসায় ফিরব। আবিরের শেষ ইচ্ছা ছিলো এটাই। অগ্নিকাণ্ডের দিন ১টা ৫ মিনিটে তার ফোন বন্ধ হয়ে যায়। অফিসের ২০ জনের মধ্যে ১৯ জনই বের হতে পেরেছেন, সেই শুধু বের হতে পারেনি।`

`সে প্রায়ই বলতো, মামা আমেরিকা থেকে এলে ডিসেম্বরে বিয়ে করব। আমাদের পরিবারের আলো ছিল আবির। খুব মিশুক স্বভাবের ছিলো। আল্লাহ আমার ছেলের এইটুকু হায়াত রেখেছিলেন। ছেলেকে শেষ দেখা দেখবো বলেই মনে হয় আল্লাহ আমায় ঢাকা নিয়ে গিয়েছিলেন।`

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে আবিরের বাবা আবু বকর সিদ্দিক বাচ্চু বলেন, `আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু তৈরি করতে পারি। সেখানে কেন আগুন নেভাতে ও মানুষ উদ্ধারে আধুনিক সরঞ্জাম ও ব্যবস্থাপনা নেই? তাই সার্ভিসকে উন্নত করুন।`

পরিবারের সদস্যরা জানান, অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের সময় আবির ওয়াশ রুমে ছিলেন। ওই মুহূর্তে আবিরসহ অফিসে ছিলেন ২০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। আগুন লাগার খবর শুনে ১৯ জনই তৎক্ষণাৎ কক্ষ থেকে বের হয়ে আসেন। এদিকে আবির ওয়াশরুশ থেকে বের হয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে হতভম্ব হয়ে পড়েন। সহকর্মী একজনকে  মোবাইলে কল দিয়ে জানতে পারেন, ভবনে আগুন লেগেছে, তারা সবাই ভবন থেকে বের হয়ে এসেছেন। এ সময় আবির আর্তচিৎকার করে বাঁচার আকুতি জানান। এর কিছুক্ষণ পর থেকে আবিরের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। শেষ পর্যন্ত উদ্ধারকর্মীরা তার মরদেহ উদ্ধার করেন ১৩তলা থেকে।

(ঢাকাটাইমস/০৩এপ্রিল/প্রতিবেদক/এআর)