শেখ হাসিনা নকশিপল্লী

ক্ষতিপূরণ পেতে খাসজমিতে স্থাপনা গড়ার হিড়িক

প্রকাশ | ০৪ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:১৮

দুলাল হোসাইন, জামালপুর প্রতিবেদক

জামালপুরে বাস্তবায়নাধীন শেখ হাসিনা নকশিপল্লীর ভূমি অধিগ্রহণ খাতে ক্ষতিপূরণের টাকা আদায়ে খাসজমিতে রাতারাতি গড়ে উঠছে নতুন নতুন স্থাপনা। হাতবদল হচ্ছে জমির কাগজ। পাশাপাশি এ প্রকল্পের সুবিধা নিতে প্রকৃত হস্তশিল্প ব্যবসায়ীদের বাইরে জামালপুর পৌরসভায় হস্তশিল্প ব্যবসা কেন্দ্রের ট্রেড লাইসেন্স করারও হিড়িক পড়েছে।

হস্তশিল্পের ঐতিহ্যবাহী জেলা জামালপুর এ শিল্পের ব্র্যান্ডিং জেলা হিসেবেও স্বীকৃত। জেলার ঝিনাই নদীর পশ্চিম তীরে ৩০০ একর জমিতে শেখ হাসিনা নকশিপল্লী গড়ে উঠবে। পাঁচ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক)। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে মাটি ভরাট ও জমি অধিগ্রহণে ৭২২ কোটি টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের একমাত্র এই নকশিপল্লীতে থাকবে ফাইভ স্টার হোটেল, প্রশিক্ষণকেন্দ্র, লেক ও পার্কসহ দেশি-বিদেশি ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এ শিল্পে জড়িত বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে। প্রসার ঘটবে জামালপুরসহ সারাদেশের নকশিশিল্পের।

এলাকার লোকজনের অভিযোগ, নকশিপল্লী গড়ে ওঠার খবরে এই প্রকল্পের টাকা লুটপাটে নানা ফন্দি-ফিকির আঁটছে বেশ কয়েকটি চক্র। এর মধ্যে একটি সুবিধাভোগী চক্র প্রকল্প এলাকায় স্বল্পমূল্যে জমি কিনে অথবা ভাড়া নিয়ে নতুন করে স্থাপনা গড়ে তুলছে। তাদের উদ্দেশ্য, জমি অধিগ্রহণের সময় বেশি পরিমাণে ক্ষতিপূরণ আদায়।

সরেজমিনে ঝিনাই নদীর পশ্চিম পাড়ে চন্দ্রা এলাকায় গিয়ে দেখা  গেছে, সেখানে গড়ে উঠেছে সারি সারি পাকা ইমারত। আরও নতুন নতুন ভবন তোলার কাজ চলছে।

স্থাপনা নির্মাণকাজের তদারকি করা কম্পপুর এলাকার জাহাঙ্গীর হোসেন ঢাকা টাইমসের কাছে দাবি করেন, এই খাসজমির দখলসূত্রে মালিক তিনি। খাসজমি অধিগ্রহণের টাকা পাওয়া যাবে না। তাই ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশায় এখানে স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে।

পাশের জায়গাটিতে মালিকের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে টার্কি মুরগির তিনটি শেড গড়ে তুলছেন মেলান্দহ উপজেলার ভাবকী এলাকার নুরুল ইসলাম সরকার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই নুরুল ইসলাম শুধু নকশিপল্লীতেই নয়, তার নিজ এলাকা ভাবকীতে নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের জমি অধিগ্রহণের আগে পাকা ইমারত গড়ে তুলে এক কোটি ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করেছিলেন। জামালপুর-শেরপুরের চরাঞ্চলে অর্থনৈতিক জোনের নির্ধারিত স্থানে ক্ষতিপূরণ আদায়ে স্থাপনা গড়ে তুলেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

জামালপুর হস্তশিল্প ব্যবসায়ী সমিতির উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, নকশিপল্লীর খবরে সুযোগ সন্ধানীরা অবৈধ পন্থায় অপতৎপরতা শুরু করেছেন। প্রকৃত হস্তশিল্প উদ্যোক্তারা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি নজরদারির আহ্বান জানান তিনি।

সমিতির সভাপতি শাহিনুর আলম বলেন, কেউ নতুন করে হস্তশিল্প ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স নিলেও প্রকৃত হস্তশিল্প ব্যবসায়ী কি না যাচাই-বাছাই করেই সুপারিশ করা হবে।

জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর বলেন, ‘শেখ হাসিনা নকশিপল্লীর নির্ধারিত স্থানে ক্ষতিপূরণ আদায়ে কিছু লোকের নতুন করে স্থাপনা গড়ে তোলার খবর পেয়েছি। এসব করে কোনো লাভ হবে না। প্রকৃত ভূমি মালিক ও ক্ষতিগ্রস্তদেরই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। নকশিপল্লী নিয়ে কোনো অনিয়মেরও ছাড় দেওয়া হবে না।‘

নানা প্রতিকূলতা ও পুনর্বাসনের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে দেশের ঐতিহ্যবাহী নকশিশিল্প। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এসব শিল্প ও শিল্পীদের একই ছাদের নিচে আনার উদ্যোগ নিতে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সরকার। কাজ শেষ হলে বদলে যাবে জামালপুরের নকশিশিল্প ও শিল্পীদের ভাগ্যও।

এ আশায় প্রকৃত হস্তশিল্পীরা যেন নকশিপল্লীর সুবিধাভোগ করতে পারেন- সে দাবি জানাচ্ছেন এ জেলার নকশিশিল্পীরাও।

(ঢাকাটাইমস/৪এপ্রিল/প্রতিবেদক/এআর)