কোয়েল পালনে আকাশতাঁরার নারীদের দিনবদল

এনাম আহমেদ, বগুড়া প্রতিবেদক
 | প্রকাশিত : ০৬ এপ্রিল ২০১৯, ১০:২২

স্বামী বেকার। তেমন ছিল না কোনো জমিজমাও। সংসারে অভাব ছিল তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। দুই সন্তানের ভবিষ্যত কী হবে তা নিয়েও চিন্তার অন্ত নেই। এমন পরিস্থিতিতে একজনের পরামর্শে ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করানোর পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে কেনেন আড়াই হাজার কোয়েলের বাচ্চা। এরপর থেকেই ঘুরতে থাকে তার ভাগ্যের চাকা।

জেবুন্নাহারের দিনবদলের গল্পের শুরু সেখান থেকেই। বগুড়া সদরের আকাশতাঁরা গ্রামের জেবুন্নাহার এখন একজন সফল ব্যবসায়ী ও কোয়েল পাখির খামারি। তাকে অনুসরণ করে আকাশতাঁরার এলাকার আড়াই শ’ নারী কোয়েলের খামার করে তাদের ভাগ্যবদল করেছেন। পুরুষের পাশাপাশি সংসারের অভাব মোচনে তারা কোয়েল পালন করছেন।

জেবুন্নাহার জানান, তার বাবার বাড়ি নওগাঁ জেলার ধামইরহাটে। ২০০০ সালে তার বিয়ে হয় বগুড়া সদরের আকাশতারা গ্রামের মজনু রহমানের সঙ্গে। বিয়ের পর তার স্বামী ঘরজামাই থেকে তার বাবার রড সিমেন্টের দোকানে কাজ করতেন। এভাবে বাবার বাড়িতে ১০ বছর কেটে যায় তাদের। এক সময় তারা দুই ছেলে মেয়েকে নিয়ে বগুড়ায় স্বামীর বাড়ি আকাশতাঁরায় চলে আসেন। তখন তার স্বামী বেকার ছিল। পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটছিল তাদের। এমন সময় গ্রামের আব্দুল বারী নামের ব্যক্তি তাকে পরামর্শ দেন কোয়েল পাখি পালনের। তার পরামর্শেই জেবুন্নাহার ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করানোর পাঁচ হাজার টাকায় আড়াই হাজার পিস একদিন বয়সী কোয়েল পাখির বাচ্চা কেনেন।

বাড়িতে পালন করা কোয়েল পাখি এক মাস পর বিক্রি করে লাভ হয় ১০ হাজার টাকা। এবার চার হাজার বাচ্চা দিয়ে শুরু করেন কোয়েল পাখি পালন। একমাস পর পাখি বিক্রি করে লাভ হয় ৪০ হাজার টাকা। ৪০ হাজার টাকার মধ্যে ১০ হাজার টাকা খরচ করে পাখি পালনের জন্য আলাদা একটি টিনের ঘর তৈরি করেন। এরপর তিনি কোয়েল পাখি পালন ব্যবসার প্রসার ঘটানো শুরু করেন। গ্রামে বাড়ি বাড়ি ঘুরে নারীদের তার ব্যবসায় লাভের কথা বলে উদ্বুদ্ধ করেন কোয়েল পাখি পালনে।

জেবুন্নাহার আরও জানান, কোয়েল পাখির ব্যবসা করেই তিনি পাঁচতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এছাড়া কোনো হ্যাচারির শরণাপন্ন না হতে তিনি ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর জন্য ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ইনকিউবেটর কিনেছেন। তার খামারে ১০ জন কর্মচারী কাজ করে। নিজের ভাগ্যের উন্নয়নের পাশাপাশি এলাকার নারীদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটাতে পেরে সফল এই নারী উদ্যোক্তা এখন অনেক খুশি।

সফল এই নারী উদ্যোক্তা বলেন, কোয়েল পাখি বগুড়াতে ব্যাপকহারে পালন হলেও বগুড়ার বাজারে এই পাখির চাহিদা কম। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ফেনী এবং রাজশাহী অঞ্চলে কোয়েল পাখির চাহিদা বেশী। আকাশতাঁরা ছাড়াও এই অঞ্চল থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ হাজার পাখি বাইরের জেলাগুলোতে বিক্রি হয়।

নয় বছরের ব্যবধানে আকাশতাঁরা গ্রামের প্রায় আড়াই শ নারী এখন বাড়িতে কোয়েল পাখি পালন করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন বলে জানান জেবুন্নাহার।

আকাশতাঁরা গ্রামের হিরা বেগম নামে কোয়েল পাখি খামারি জানান, তিনি নিজেই এখন বাড়িতে কোয়েল পাখির খামার গড়ে তুলেছেন। তার খামারে এখন চার হাজার কোয়েল পাখি রয়েছে। একদিন বয়সী কোয়েল পাখির বাচ্চা পিস ছয় টাকা দরে কিনে খামারে ২৪ দিন পালন করেন তিনি। ১৮-১৯ দিন পার হলেই কোয়েল পাখি বিক্রি শুরু করেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যাপারীরা বাড়ি থেকেই ২২ টাকা থেকে ২৫ টাকা পিস দরে কোয়েল পাখি কিনে নিয়ে যায়।

হিরা বেগম ছাড়াও আকাশতাঁরা গ্রামের বাড়ি বাড়ি নারীরা গড়ে তুলেছেন কোয়েল পাখির খামার। সংসারে অন্যান্য কাজের পাশাপাশি কোয়েল পাখি পালন করে নারীরা হয়ে উঠেছেন স্বাবলম্বী।

(ঢাকাটাইমস/৬এপ্রিল/প্রতিনিধি/এমআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :