কোটালীপাড়ায় স্কুলঘর ভেঙে খালে ফেললেন ইউপি চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক, গোপালগঞ্জ
 | প্রকাশিত : ০৬ এপ্রিল ২০১৯, ১৯:৪৬

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেকুজ্জামান স্কুল নামের একটি বিদ্যালয়ের ঘর ভেঙে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে পিঞ্জুরী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু সাইদ সিকদারের বিরুদ্ধে।

আজ শনিবার সকালে চেয়ারম্যান তার লোকজন নিয়ে বিদ্যালয়ের ঘরটি ভেঙে ফেলেন।

এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে চেয়ারম্যান বলেন, বিদ্যালয়ের ঘরটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জায়গায় করা হয়েছিল। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উন্নয়নের জন্য সীমানাপ্রাচির নির্মাণ করা হবে। তাই স্কুলঘরটি ভেঙে ফেলা হয়। তবে এর আগে স্কুল কর্তৃপক্ষকে বারবার ঘরটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ঘর ভেঙে ফেলায় বিদ্যালয়ের সাড়ে তিন শ শিক্ষার্থীর লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে জানান কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্কুলঘরটি নির্মাণসহ দোষীদের শাস্তির দাবি জানান তারা।

মুক্তিযোদ্ধা সাদেকুজ্জামানের ছেলে ও বিদ্যালয়ের শিক্ষক কামরুজ্জামান বলেন, ‘২০০৫ সালে কাকডাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে সরকারি জায়গার ওপর আমার বাবার নামে বিদ্যালয়টি স্থাপন করি। প্লে-গ্রুপ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। বর্তমানে সাড়ে তিন শ ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করছে এখানে। আজ সকালে ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাইদ সিকদার তার লোকজন নিয়ে এসে জোর করে স্কুল থেকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বের করে দেন। পরে স্কুলঘরটি ভেঙে পাশের খালে ফেলে দেন।’ স্কুলের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে আশঙ্কা করে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর বিচার দাবি করেন।

মুক্তিযোদ্ধা সাদেকুজ্জামানের স্ত্রী জয়নাব বিবি বলেন, ‘জীবন বাজি রেখে আমার স্বামী যুদ্ধ করে এ দেশ স্বাধীন করেছে। সেই বীর যোদ্ধার নামের স্কুলটি আজ চেয়ারম্যান তার লোকজন নিয়ে ভেঙে ফেলল। আমি সরকারের কাছে এর উপযুক্ত বিচার চাই।’

আজ বিদ্যালয়ে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা চলছিল বলে জানায় অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী হুমায়রা খানম, সোহাদা খানম, সোয়ামনিসহ শিক্ষার্থীরা। জানা যায়, শিক্ষকরা পরীক্ষা কক্ষে প্রশ্নপত্র দেওয়ার পরপর হঠাৎ করে চেয়ারম্যান ও তার লোকজন স্কুলে গিয়ে গালিগালাজ করে শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম থেকে বের করে দেয়। পরে স্কুলটি ভেঙে দেয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন অভিভাবক বলেন, হঠাৎ করে স্কুলটি ভেঙে ফেলায় এখন তাদের সন্তানরা কীভাবে পড়ালেখা করবে তা নিয়ে চিন্তিত তারা।

উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভা থেকে স্কুলটি সরিয়ে ফেলতে বলা হয়েছিল বলে দাবি করছেন পিঞ্জুরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সাইদ সিকদার। তার ভাষ্য, ‘জায়গাটি পিঞ্জুরী ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের। যে জায়গার ওপর স্কুলটি ছিল সেখানে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উন্নয়নমূলক কাজ হবে। বছরের শুরু থেকে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা কামরুজ্জামানকে ঘরটি সরিয়ে নিতে বলা হচ্ছিল। কিন্তু তিনি তা সরিয়ে নেননি। আগামী জুনের মধ্যে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সীমানাপ্রচীরের কাজ না করলে বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরত যাবে। উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভা থেকে স্কুলটি সরিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। তাই আমি সরিয়ে ফেলেছি।’

কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মাহফুজুর রহমান স্কুল ভাঙার বিষয়টি জেনেছেন বলে জানান। তিনি বলেন, ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকার কেউ হরণ করতে পারে না। চেয়ারম্যান যেটি করেছেন সেটি আইনসম্মত নয়। এ বিষয়ে অভিযোগ এলে তিনি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান। (ঢাকাটাইমস/৬এপ্রিল/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :