‘মশা মারতে কামান লাগে না’

নারায়ণগঞ্জ প্রতিকেদক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ০৬ এপ্রিল ২০১৯, ২২:৫৪

নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগের এমপি একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, ‘বাইরের লোককে দোষ দিয়ে লাভ নেই। দোষ তো আপনার ঘরের ভেতরে। এখন কেউ যদি মনে করেন কাউকে ব্যবহার করে নারায়ণগঞ্জে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নষ্ট করবে, নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা পুলিশ না। হোসিয়ারি ব্যবসা করতে করতে গার্মেন্টস মালিক হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে যারা দোকান চালায় তারা এখানকার স্থানীয়। যারা বাস চালায় তারা স্থানীয়। আমাদের এ লোকদের কেউ ফোন করে বলবেন দেখা করেন, আমি বলব- ‘দেখা করার সময় শেষ শেখ হাসিনার বাংলাদেশ।’ এতে উত্তেজিত হওয়ার দরকার নেই। মশা মারতে কামান লাগে না।’

তবে শামীম ওসমান বক্তব্য শুরুর আগে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হাসান নিপু বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের এই নারায়ণগঞ্জকে আমরা গাজীপুর হতে দেব না। এসময় শামীম ওসমানের কর্মীরা ‘পুলিশ সুপারের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে’ স্লোগান দিলে শামীম ওসমান থামিয়ে দেন।

প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ এর আগে গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

৬ এপ্রিল শনিবার বিকালে নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার বাংলা ভবনে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত জরুরি কর্মী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শামীম ওসমান।

তিনি কেন্দ্রীয় শ্রমিকলীগের শ্রমিককল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাউসার আহমেদ পলাশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘খেলা কোনটা? আমি কারো নাম বলব না। এগুলোকে আমি গোনায় ধরি না। সন্ত্রাসের কারণে যাকে আমি মৃত্যুর মুখ থেকে দুইবার বাঁচাই নিয়ে আসছি। আমার দল ক্ষমতায় থাকাবস্থায় শ্রমিক আন্দোলনের নামে, চাঁদাবাজির কারণে সরকারের নির্দেশে কয়েকবার গ্রেপ্তার করা হলো, এইবারও নির্বাচনের আগে গ্রেপ্তারের নির্দেশ ছিল, আমি বলেছি গ্রেপ্তার কইরেন না। অন্তত আপনি সরাই দেন। এরাও এখন দেখি সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি করে!’

তিনি মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আরেকজন মহিলা আছে নারায়ণগঞ্জে। আমি ওর নাম বলতে বলতে নাম ফুইলা গেছে। নাম আর বলতে চাই না। যার সঙ্গে জামায়াতের কানেকশন প্রকাশ পেয়েছে। জামায়াতের আমির বলল- জামাতের সাথে কাদের কানেকশন। পুলিশের কাছে জবানবন্দিতে জামায়াতের আমির বলল নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে হলে, শামীম ওসমানকে ধ্বংস করতে হলে উমুক নেত্রীকে আওয়ামী লীগে রাখতে হবে। এই কথার ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেল। আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে ওই উমুককে আওয়ামী লীগে রাখতে হবে বলল। জামায়াতের কানেকশন প্রকাশ করায় ওসির বিরুদ্ধে মামলা করবে বলল। তো মামলা করছেন না কেন? সাংবাদিক ভাইয়েরা তাকে গিয়ে বলেন- মামলাটা করতে। সৎ সাহস থাকলে তো তাদেরই মামলা করা উচিৎ।’

আইভীকে ইঙ্গিত করে শামীম ওসমান আরও বলেন, ‘আমার বাপ-দাদাকে গালি দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে ওসমান পরিবার খুনি পরিবার। যা বলছেন আমি বলি আল্লাহ তাদের হেদায়েত দান করুক। আমি তার জন্য দোয়া করি। কারণ এই গালিটা না দিলে প্রমাণ হতো না নারায়ণগঞ্জের মানুষ ওসমান পরিবারকে কতটা ভালবাসে।’

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৩৬জন কাউন্সিলর মধ্যে ২৯ জন কাউন্সিলরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ জানিয়ে শামীম ওসমান বলেন, ‘আমি দেশে এমন কোন সিটি কর্পোরেশন দেখি নাই যেখানে একজন মেয়রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছে ২৯ জন কাউন্সিলর। তার বিরুদ্ধে ২৯ জন কাউন্সিলর স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেছে। তার তো এতেই মাথা হেট হয়ে যাওয়া উচিৎ।’

শামীম ওসমান বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে এসে খালেদা জিয়াও বলেছিল- কোথায় আওয়ামী লীগ? কোথায় শামীম ওসমান। আমরা তখন ভাবলাম, যেহেতু তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আমাদের দেখতে চায়- তখন আমাদের শ্রমিক ভাইদের বললাম, ভাই তোমাদের গাড়িগুলো রাস্তায় বাঁকা করে রাখো, খালেদা জিয়া আমাদের একটু দেখতে চায়- আমরা দেখাই। উনি কিন্তু মেইন রোড দিয়ে ঢাকা যেতে পারেনি। ভেতরের রাস্তা দিয়ে ঢাকায় যেতে হয়েছিল। ওটা প্রধানমন্ত্রী থাকাবস্থায়। নারায়ণগঞ্জে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও ছিল, যাকে রাতে পালিয়ে যেতে হয়েছিল।’

শামীম ওসমান বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবে। কাউকে টেক্স দেবে না। আমার নেত্রী চায় কথা বলতে চাইলে কথা বলবে। সাংবাদিকতা করতে চাইলে সাংবাদিকতা করবে। কাউকে ভয় পাবে না। কারো উপর আঘাত আসবে না।’

নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে শামীম ওসমান বলেন, ‘বিষয়টা আপনারা যা দেখছেন তা না। পর্দার অন্তরালে কিছু খেলা থাকে। সেই খেলায় কেউ কেউ ভুল করে পা দেয়। হয়তো নারায়ণগঞ্জে যারা হঠাৎ করে এসেছেন বিদেশি মেহমান কারো খেলাতে পা দিয়েছেন।’

জেলা পুলিশ সুপারকে ইঙ্গিত করে শামীম ওসমান বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীদের যদি কেউ খেলাতে চান, প্লিজ ডোন্ট প্লে, নারায়ণগঞ্জে খেইলেন না। সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করবে। আর প্রশ্ন করার আগে তাকে জুয়ার মামলার আসামি করে দেবেন। কইরেন না। আমার আত্মীয়-স্বজনকে মদের সাপ্লাইয়ার বানাবেন, মনে করবেন আমি ভয় পেয়ে যাব। এগুলো করে আমাকে কাবু করা মসিমত। আমাকে কাবু করা যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের মাঝে যদি খারাপ থাকে তাকে ছাড় দেব না। কিন্তু আমাদের মধ্য থেকে যদি কাউকে ইচ্ছা করে ঝামেলায় ফেলার চেষ্টা করা হয়, তাহলে কথা দিচ্ছি- নারায়ণগঞ্জের মাটিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চাড়া নাচাই দেব। এক সেকেন্ড ছাড় দেব না, এক সেকেন্ডও না। একটা সেকেন্ড কোন নেতাকর্মীকে বিনা কারণে ঝামেলায় ফেলতে কেউ চেষ্টা করলে ছাড় দেব না। কোন ব্যবসায়ী মাথা নত করে ব্যবসা করবে না। কারন এই দেশ শেখ হাসিনার। এই নারায়ণগঞ্জও শেখ হাসিনার।’

তিনি নেতাকর্মীদের বলেন, ‘সমস্যা শুধু একটাই আমাদের হাত পা বাঁধা। কারণ আমরা দল করি। আমরা নারায়ণগঞ্জে ৫ লাখ লোকের সমাবেশ কইরা দেখাইতে চাই নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতারা নেতাকর্মীদের পাশে আছে।’

নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কি খালেদা জিয়া? না। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা। উনি নারায়ণগঞ্জের খোঁজ রাখেন কখন কি হচ্ছে। জাস্ট আগামী ১০/১২ দিনেই টের পাবেন। আপনারা শান্ত থাকুন। তবে বাইরের মানুষকে দোষ দিতে নাই। ভুল পদক্ষেপ নেয়াই বাইরের মানুষকে ব্যবহার করতে চায়। সরকার আমাদের, প্রশাসন আমাদের, সিভিল প্রশাসন আমাদের, পুলিশ বাহিনী আমাদের, দায়িত্বও আমাদের। তাই নেত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে- তা আমরা করব না। আমাদের মৃত্যু হয়ে যাবে তাও নেত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে দেব না।’

তিনি বলেন, ‘এই নারায়ণগঞ্জকে কেউ যদি এসে মনে করে ওই কাউন্সিলরকে ফাঁসাব, ওই চেয়ারম্যানকে ঢুকাব, কারো সাথে কন্ট্রাকে যাব, ওইদিক থেকে চাঁদাবাজি করব, এখান থেকে চাঁদাবাজি করব, ব্যবসায়ীদের ফোন করব, শ্রমিক নামধারী শ্রমিকরা আইসা নিট গার্মেন্টস মালিকদের ভয় দেখাবে, বাস মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা তুলবেন, অটোরিকশা থেকে পয়সা খাবেন- না ওইটা হবে না। এই নারায়ণগঞ্জে হবে না।’

কর্মী সভায় সভাপতিত্ব করেন ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম সাইফুল্লাহ বাদল।

এতে আরও বক্তব্য রাখেন- নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি চন্দন শীল, সেক্রেটারি খোকন সাহা, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলী, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুজিবুর রহমান, বন্দর আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ রশিদ, সোনারগাঁও থানা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/৬এপ্রিল/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :