ষোলোআনা বাঙালি আলপনা

প্রকাশ | ০৭ এপ্রিল ২০১৯, ১৭:৫৬ | আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৯, ১৯:৩৫

জহির রায়হান, ঢাকাটাইমস

বাংলাদেশের মানসম্মত ফ্যাশন হাউসগুলোর অন্যতম ‘বিবিয়ানা’। এবার বৈশাখে ‘বাঙালির আলপনা’ মোটিভ নিয়ে করছে ফ্যাশন হাউস বিবিয়ানা। আলপনা এক ধরনের লোকশিল্প এবং বলা যায় মানুষের সহজাত অভিব্যক্তি। এতে সমাজের অতীত অভিজ্ঞতা যেমন প্রকাশ পায়, তেমনি একই সঙ্গে ফুটে ওঠে বর্তমানের অস্তিত্ব।

বিবিয়ানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ফ্যাশন ডিজাইনার লিপি খন্দকার বলেন, ‘বিবিয়ানা বরাবরই দেশজ ঐতিহ্যের চর্চা তাদের কালেকশনে ফুটিয়ে তোলে। এবারের বৈশাখ আয়োজনেও সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। আমরা বৈশাখেই শুধু একটি মোটিভ নিয়ে কাজ করি। এবারে বিবিয়ানা কাজ করবে আলপনা নিয়ে। আমরা এর নাম দিয়েছি পোশাকে বাঙালি আলপনা । আলপনায় ফুটিয়ে তুলেছি শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, কুর্তা, পাজামা-পাঞ্জাবি। সেই সাথে আছে শিশুদের পোশাক, গহনা, ব্যাগ ও গৃহসামগ্রী পণ্য।’

বিবিয়ানার শুরুটা সম্পর্কে লিপি খন্দকার বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকতাম। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় নিজের কাপড় নিজেই বানিয়েছি। সেই থেকেই আগ্রহ তৈরি। পারিবারিকভাবেই আমার বাসায় অনেক চর্চা ছিল পোশাক তৈরি করার। আমরা কয়েক বোন ছিলাম। আমাদের পোশাক পারিবারিকভাবেই বানানো হতো। আগে একটা চর্চা ছিল দর্জিবাড়ি যেত না। আর এ কাপড় তৈরি করাও ছিল অনেক আয়োজন। ডিজাইন নিয়েও অনেক কথা হতো- কী ডিজাইন হতে পারে এসব নিয়ে। আবার দেখা যায় ঘরে একটা কুশন কভার বানানো সেটা নিয়েও কথা হচ্ছে। আর এই আগ্রহ থেকেই চারুকলায় পড়া। চারুকলায় পড়া শেষ করে চাকরি করলাম আড়ংয়ে। ২০০১ সালে নিজের প্রতিষ্ঠান বিবিয়ানার শুরু করি। ১২ লাখ টাকা দিয়ে শুরু করি ব্যবসা। সেই টাকা দিয়ে ডেকোরেশন করা, পণ্য সাজানো সব। শুরু থেকেই বেশ ভালো সাড়া পাই।’

এবারের বৈশাখের থিম সম্পর্কে লিপি খন্দকার বলেন, ‘একমাত্র বৈশাখে আমরা থিম বেজ কাজ করি। এবারে আমাদের থিম আলপনা । আমরা নাম দিয়েছি ‘বাঙালির আলপনা ।’আমরা রাস্তায় যে সব আলপনা  দেখি, বিয়ে বাড়িতে যে সব আলপনা  দেখি সেটা নিয়ে এবারে কাজ করছি। শাড়ি, সেলোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবি ফতুয়া আমাদের যা আইটেম আছে সেগুলোতে এ থিম আছে।’

উৎসবে দেশি পোশাক কেমন বিক্রি হয়-  এমন প্রশ্নের জবাবে লিপি খন্দকার বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন শুধু বৈশাখে দেখতে পাই সবাই দেশি কাপড়ের পোশাক পরে। অন্য উৎসবে সেটা কমে যায়। তখন ক্রেতারা দেশি ও বিদেশি পোশাক সমান সমান কেনে। কেননা, বিদেশি কাপড় কেনার ক্ষেত্রে মানসিক একটা বিষয় কাজ করে। অনেকে মনে করে কম টাকায় ঝকঝকে-চকচকে বিদেশি কাপড় পাওয়া যায়। আসলে বিদেশ থেকে যে পোশাক আসে সেটা হলো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পোশাক। আর আমাদের পোশাক হলো হ্যান্ডমেড। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পোশাকের সঙ্গে এর তুলনা চলে না। আমাদের পণ্য অনেক ভালো ও পরতে আরামদায়ক।’

বর্তমানে বিবিয়ানায় আট হাজার কর্মী কাজ করে। সারা দেশে এর আউটলেট ১১টি। এসব আউটলেটে বিবিয়ানার কর্মীদের হাতে তৈরি পোশাক বিক্রি ও প্রদর্শন হচ্ছে। কোন কাপড় দিয়ে পোশাক তৈরি হয় জানতে চাইলে লিপি খন্দকার বলেন, ‘আমরা দেশি কটন নিয়ে কাজ করি। আমাদের পোশাকে ৯০ শতাংশ কটন। আমরা একটা পরিবারের সবার পরার জন্যই প্রয়োজনীয় পোশাক আনি। বাচ্চাদের পোশাক, সালোয়ার-কামিজ, শাড়ি, পাঞ্জাবি সবই আছে আমাদের পোশাক তালিকায়। একটা পরিবারের সবাই যদি মিলিয়ে পোশাক পরতে চান তাদের জন্য সেই সুযোগও আছে। আর পোশাক ছাড়াও আছে গয়না, ঘর সাজানোর উপকরণ। পয়লা বৈশাখে আলপনায় সাজবে আমাদের পোশাক। আলপনার সঙ্গে রঙের বৈচিত্র্যটা বেশ যায়।’

(ঢাকাটাইমস/০৭এপ্রিল/জেআর/জেবি)