জমি হাতিয়ে নিয়ে মাকে ভিখারি বানাল ছেলেরা

প্রকাশ | ০৭ এপ্রিল ২০১৯, ২০:৪৫

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

আজেদা খাতুন। বয়স ৭০ পেরিয়ে। স্বামী মারা গেছেন চার-পাঁচ বছর আগে। বয়সের ভারে ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারেন না। খাওয়া-দাওয়াও মিলে না তেমন। কানে কম শুনেন। চোখেও ঠিক মতো দেখতে পান না। অসুখে পড়ে থাকলেও ছেলেমেয়েরা কেউ খোঁজ নেন না।

বড় দুই ছেলে মোজ্জাম্মেল ও মফিজুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে হাজির হয়েছিলেন বৃদ্ধা আজেদা বেগম। তার অভিযোগ, ‘স্বামীর দেয়া ২২ বিঘা জমি কৌশলে বড় ছেলে হাতিয়ে নিয়ে এখন খোঁজ নেয় না।’

ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার ভাতুরিয়া ইউনিয়নের মাগুরা গ্রামে মৃত বজির উদ্দীনের স্ত্রী আজেদা খাতুন। স্বামীর জীবদ্দশায় সুখের সংসার ছিল তার। স্বামী বজির উদ্দীন হাসকিং মিলে ব্যবসা করতেন। জমিও ছিল প্রায় ১০০ বিঘা। তার তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় ছেলে  মোজ্জামেল হক, মেঝো ছেলে মফিজুল হক এবং ছোট ছেলে  হাফিজুল হক। ছেলে-মেয়েরা সকলে বিবাহিত।

স্বামী বজির উদ্দীন তার জীবদ্দশায় স্ত্রীর নামে ২২ বিঘা জমি লিখে দেন। ওইসব জমির আবাদ ফলন হতে আজেদার জীবন ভালয় চলত। কিন্তু স্বামী মারা যাবার তিন বছর পর ওই জমির উপর চোখ পড়ে তার দুই ছেলে মোজাম্মেল ও মফিজুলের। তারা মারা ভুল বুঝিয়ে দুই বছর আগে কৌশলে ওই জমি লিখে নেন।

চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী তাৎক্ষণিক বড় ছেলে মোজাম্মেল হককে ফোন করলে তিনি উত্তর দেন- ‘মায়ের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তার কথায় কান দিয়ে লাভ নেই।’

বড় ছেলের কাছে এরূপ উত্তর পেয়ে চেয়ারম্যান ছোট ছেলে হাফিজুলকে ডেকে তার মাকে তুলে দেন। বিধবা আজেদা এখন তার ছোট ছেলের হেফাজতে রয়েছেন।

জমি লিখে নেয়ার ব্যাপারে চেয়ারম্যান শাহজাহান জানান, ‘অভিযোগ সত্য। যারা জমি লিখে নিয়েছে তারা আসলে ওই বৃদ্ধার খোঁজখবর নেয় না।’

তিনি বলেন, ‘বৃদ্ধার স্বামী ছিল ধনবান। স্ত্রী এক সময় অনেক পয়সা নাড়াচাড়া করেছেন। এখন তার দুর্দিন। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাকে একটা বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেব।’

এ বিষয়ে বৃদ্ধার ছেলে মোজ্জামেল হক মায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘মায়ের অভিযোগ সত্য নয়।’

ভাতুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী বলেন, ‘মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে ছেলেদের বাড়িতে গিয়ে আলোচনা করেছি। ছেলে ও বৌমারা বৃদ্ধার দায়িত্ব নেবে বলে কথা দিয়েছিল। কিন্তু কথা রাখেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ ব্যপারে হরিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ জেড আরিফ বেগ জানান, ‘বৃদ্ধা আজেদার খবর স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে পেয়েছি। কোন ব্যক্তি তার বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে ভরণ-পোষণ না দিলে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে। তার উপর জমি হাতিয়ে নিয়ে দেখাশোনা না করার অভিযোগ গুরুতর। স্থানীয়ভাবে ছেলেরা মায়ের দায়িত্ব না নিলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

(ঢাকাটাইমস/৭এপ্রিল/এলএ)