ঘরে ফিরতে চান চার ভারতীয় নারী

প্রকাশ | ০৯ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:১২ | আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:৪০

রিমন রহমান, রাজশাহী

রাজশাহীতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহিলা ও শিশু নিরাপদ আবাসনে (সেফহোম) এখন হেফাজতির সংখ্যা ১২৪ জন। তবে এদের মধ্যে চার নারী একটু আলাদা। তাদের কথা কেউ বোঝে না। শুধু নিজেরাই নিজেদের সঙ্গে কথা বলেন। আর সেফহোম কর্তৃপক্ষের কাছে ইশারায় ঘরে ফিরতে চান। কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা ভারতীয় নাগরিক।

চার নারীর মধ্যে দুজনের আসল নাম জানা গেছে। তারা হলেন, পার্বতী (৪৪) ও সাবিত্রি সিং (৫০)। অপর দুই নারীর নাম রেখেছে সেফহোম কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ৩০ বছরের এক নারীর নাম রাখা হয়েছে মমতা। আর ৬০ বছরের আরেক নারীর নাম রাখা হয়েছে অদিতি। পার্বতী ভারতের তামিলনাড়ুর থিরুনিলভেলি শহরের বাসিন্দা। আর মমতার বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ।

বাকি দুজনের বাড়ি ভারতের কোথায় তা জানে না সেফহোম কর্তৃপক্ষ। একমাত্র মমতা একটু বাংলা জানে। কিন্তু কথা বলতে চান না। বাকিরা কোন ভাষায় কথা বলেন তা কেউ বলতে পারে না। ফলে তাদের ঘরে ফেরাতে পারছে না সেফহোম কর্তৃপক্ষ। তবে তারা চারজন নিজেরা নিজেদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তাই সেফহোমের বন্দি জীবনে তারা একে অপরের খুব প্রিয়।

দিনাজপুরের কোতোয়ালী থানা এলাকায় উদ্ধার পার্বতী ২০১২ সালের ২৪ জুলাই থেকে রাজশাহীর পবা উপজেলার বায়া এলাকার এই সেফহোমে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। এছাড়া গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলা থেকে উদ্ধার সাবিত্রি ২০১৭ সালের ২৮ অক্টোবর, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর থেকে উদ্ধার অদিতি ২০১৭ সালের ১১ নভেম্বর এবং রংপুরের তারাগঞ্জ থেকে উদ্ধার মমতা গত বছরের ২৩ জানুয়ারি থেকে সরকারি এই সেফহোমে আছেন। সেফহোমই যেন তাদের ঠিকানা।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পার্বতীর পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার আগে তারও সেফহোম থেকে একটি নাম দেয়া হয়েছিল। সে নাম ছিল পারুল। সেফহোমে আসার পর জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা তার সঙ্গে কথা বলে ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। কিন্তু পারুল কোনো কথা বোঝেন না। তার কথাও বোঝা যায় না। ২০১৫ সালের ২৫ নভেম্বর রাজশাহীতে ‘বাংলাদেশ-ভারত জেলা প্রশাসক-জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের সীমান্ত বৈঠক’ ছিল। এতে যোগ দিতে এসেছিলেন মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার শ্রী সি সুধাকর। তাকে পারুলের সঙ্গে দেখা করাতে সেফহোমে নিয়ে যাওয়া হয়।

তিনি সেফহোমে গিয়ে প্রশ্ন করেন, ‘উন পেরু এন্না? (তোমার নাম কী?)’ পারুল বলেন, ‘পার্বতী’। এরপরই পারুলের আসল নাম জানা যায়। পুলিশ সুপার পাবর্তীকে এবার প্রশ্ন করেন, ‘উন ভিডু এঙ্গে? (তোমার বাড়ি কোথায়?)’ পার্বতী বলেন, থিরুনিলভেলি টাউন, তামিলনাড়–’। তারপর একের পর এক প্রশ্ন। একের পর এক উত্তর। পাবর্তীর নাম ঠিকানা নিশ্চিত হয়। কিন্তু তিনি নয় বছরেও তিনি বাড়ি ফিরতে পারেননি। সেফহোমই তার ঠিকানা। তবে বাড়ি ফেরার আশায় বসে আছেন তিনি।

পার্বতীর বাবার নাম সিলাতুদামা। মায়ের নাম কল্যাণী। পার্বতীর স্বামী মারা গেছেন। কোনো সন্তান নেই তার। পার্বতী জানিয়েছিলেন, তিনি ট্রেনে উঠেছিলেন। তারপর দিনাজপুর চলে আসেন। আর কিছু মনে নেই। অস্পষ্ট বাংলায় মমতাও জানিয়েছেন, মুর্শিদাবাদ থেকে ট্রেনে উঠেছিলেন। তারও কিছু মনে নেই। অন্য দুইজন কীভাবে এসেছেন তা জানা যায়নি। তবে তারা ঘরে ফিরতে কান্নাকাটি করেন। ইশারায় দরজা খুলে দিতে বলেন বলে জানিয়েছে সেফহোম কর্তৃপক্ষ।

সেফহোমের আনসার সদস্য জাকিয়া সুলতানা জানান, এই চার নারী শুধু কান্নাকাটি করেন। অনেক সময় বলেন ‘ঘরমে যায়েগা’। ইশারায় গেট খুলে দিতে বলেন। সেফহোমের তত্বাবধায়িকা লাইজু বেগম বলেন, চারজনের মধ্যে শুধু মমতা একটু বাংলা জানেন। সেটাও অস্পষ্ট। তিনি কথা বলতে চান না। শুধু কান্নাকাটি করেন। অন্য তিনজনের ভাষার নাম কী তা তিনিও জানেন না।

লাইজু বলেন, ভাষা না জানার কারণে তারা এই নারীদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন না। তবে চারজন নিজেরা নিজেদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। গল্প করেন। একসঙ্গে সময় কাটান। তারা ধারণা করছেন, চারজনেরই বাড়ি ভারতে। এদের দেশে ফেরাতে তারা নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু নানা জটিলতায় তারা সফল হতে পারেননি। তবে এখনও তারা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক রাশেদুল ফিরোজ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ভারতীয়দের দেশে ফেরানোর ব্যাপারটি সম্পূর্ণ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায়। সেফহোমের পক্ষ থেকে ভারতীয়দের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। বিষয়টি রাজশাহীস্থ ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনারের দপ্তরকেও জানানো হয়েছে।

জানতে চাইলে রাজশাহীতে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার সঞ্জিব কুমার ভাটি বলেন, তিনি গত ৩ মার্চ রাজশাহীতে যোগ দিয়েছেন। এখানে আসার পর বিষয়টি শুনেই তিনি গত ৫ এপ্রিল হাইকমিশনের পক্ষ থেকে একটি দল সেফহোমে পাঠানো হয়েছিল। তারা বিষয়টি তদন্ত করছেন। তদন্তের পর এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তারপর বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানো হবে।

(ঢাকাটাইমস/০৯এপ্রিল/জেবি)