নজর রাখুন বিদ্যুতের লাইন আর রান্নাঘরে

প্রকাশ | ০৯ এপ্রিল ২০১৯, ১০:০৩

সিরাজুম সালেকীন, ঢাকাটাইমস
নওগাঁর একটি বাসায় লাগা আগুন

কী কী কারণে আগুন ধরতে পারে, এই তালিকাটা মোটেও ছোট নয়। তবে প্রধান প্রধান কারণগুলো কিন্তু খুব বেশি নয়। এর মধ্যে আবার প্রধানতম দুটি কারণ প্রাত্যহিক জীবনের অনুষঙ্গ।

বিদ্যুৎ। হ্যাঁ, জীবনের চাকা দ্রুত করতে ব্যবহার করা বিদ্যুতের কারণেই ঘটছে বেশিরভাগ আগুন। নিম্নমানের সরঞ্জাম বা বছরের পর বছর তদারকি না করায় বৈদ্যুতিক গোলযোগে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়।

ফায়ার সার্ভিসের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর দেশে আগুনের যতগুলো ঘটনা ঘটেছে তার ৩৯ শতাংশ ছিল বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে।

আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনে ব্যবহার করা বৈদ্যুতিক সরঞ্জামগুলো কতটা নিরাপদ সেই প্রশ্ন নতুন নয়। ভালো প্রতিষ্ঠানের নামে চলা পণ্য কিনলেও সেটি নকল না, তা বোঝার উপায় জহুরির চোখ ছাড়া সম্ভব নয়। আবার এসব সরঞ্জামেরও যে আয়ুষ্কাল রয়েছে, সেটা মনে থাকে কজনার? ফলে সেগুলো দীর্ঘদিন ধরে পরিবর্তন করা হয় না।

২০১৮ সালে সারা দেশে ১৯ হাজার ৬৪২টি আগুনের তথ্য রয়েছে ফায়ার সার্ভিসের কাছে। তাদের অনুসন্ধান বলছে, এর মধ্যে সাত হাজার ৮২৫টি ঘটনা ঘটেছে সঞ্চালন লাইন বা ব্যবহারকারীর বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে।

২০১৮ সালে সারা দেশে আগুনের দ্বিতীয় প্রধান কারণ রান্নাঘর। মোট তিন হাজার ৪৪৯টি বা ১৮ শতাংশ অগ্নিকা- ঘটে চুলার আগুন থেকে।

সামান্য ব্যবধানে পিছিয়ে ধূমপান। এই বদঅভ্যাস আপনাকে কেবল অসুস্থ করতে পারে এমন নয়, পুড়িয়েও করতে পারে নিঃস্ব। এক বছরে তিন হাজার ১০৮টি বা ১৫ শতাংশ আগুনের সূত্রপাত যখন হয় জ্বলন্ত সিগারেটের টুকরা থেকে তখন এ নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার উপায় আছে?

এছাড়া ছোটদের আগুন নিয়ে খেলার কারণে ৫৮৯টি, যন্ত্রাংশের ঘর্ষণের কারণে ৩১৫টি, হামলা ও আইন ভঙ্গের কারণে ২৫৭টি, মাত্রাতিরিক্ত তাপ সৃষ্টির কারণে ১৬৫টি, মিস ফায়ার ৬৫০টি, চিমনি থেকে ৪৯টি, রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ায় ৩৪টি ও বাজি পোড়ানোয় ৪২টি ঘটনা ঘটেছে।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) এ কে এম শাকিল নেওয়াজ এই সময়কে বলেন, ‘বড় বড় ভবনে আগুন লাগলে সেখানে ধোঁয়া তৈরি হয় এবং আগুনের তীব্রতা বাড়তে থাকে। কারণ ভবনের অফিসগুলোতে চেয়ার থাকে অধিকাংশ ফোম, প্লাস্টিক, সিনথেটিক দিয়ে তৈরি। টেবিলগুলো প্লাস্টিক ও কাঠের বোর্ডের তৈরি। আমরা বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুনের সময় দেখেছি সেখানে অনেক কম্পিউটার ছিল, বৈদ্যুতিক ক্যাবল ছিল, এসি ছিল। তাছাড়া এসব ভবনের অফিসগুলোর ডেকোরেশন সম্পূর্ণ কাচ দিয়ে তৈরি করা হয়। এ রকম পরিবেশে যদি আগুন ধরে তাহলে প্রচুর ধোঁয়া তৈরি হয় এবং সেখানে প্রচুর উত্তপ্ত হয়।’

করণীয় তাহলে কী?

* বৈদ্যুতিক তার ত্রুটিপূর্ণ কি না মাঝেমধ্যে পরীক্ষা করা।

* ইস্ত্রিতে বৈদ্যুতিক সংযোগ রেখে কখনো সরে যাবেন না।

* খোলা বাতির ব্যবহার পরিহার করুন।

* বাড়িঘর, কল-কারখানা, অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনির্বাপণী যন্ত্র স্থাপন করুন এবং মাঝেমধ্যে পরীক্ষা করুন।

* প্রতিটি শিল্প-কারখানায় অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইনের বিধান মতে ওয়্যার হাউজ/ওয়ার্কশপ লাইসেন্স গ্রহণ নিশ্চিত করুন।

* অনভিজ্ঞ লোক দিয়ে রাসায়নিক ও দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করবেন না। মিশ্রণ কক্ষে অগ্নি স্ফুলিঙ্গ নিরোধক সুইচ ও প্লাগ ব্যবহার করুন।

* বিয়ারিং ও অন্যান্য চলমান যন্ত্রাংশে নিয়মিত লুব্রিকেন্ট দিন।

* সহজ দাহ্য বস্তু দিয়ে ঘরবাড়ি তৈরি কমিয়ে দিন। বিশেষ করে রান্নাঘরের দর্জা ও বাঁশের বেড়ার ওপর মাটির প্রলেপ দিন।

* শিল্প-কারখানার কাছে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা রাখুন। মাসে একবার অগ্নি নির্বাপণী মহড়া দিন।

* মিল-কারখানায় ধূমপান বর্জন করুন ও সতর্কীকরণ পোস্টার লাগান। ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও শিল্প-কারখানায় মাকড়সার জাল বিস্তৃত হতে দেবেন না।

* হাতের কাছে সব সময় এক বালতি পানি ও এক বালতি বালু রাখুন।

* ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক তার ত্রুটিমুক্ত কি না মাঝেমধ্যেই পরীক্ষা করুন। রান্নার পর চুলা নিভিয়ে রাখুন।

* ধূমপান করলে অবশিষ্ট অংশ নিভিয়ে নিরাপদ স্থানে ফেলুন।

(ঢাকাটাইমস/০৯এপ্রিল/জেবি)