বিক্রমপুরের প্রাচীন স্থাপনা মাথা তুলছে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে

মুন্সীগঞ্জ প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ০৯ এপ্রিল ২০১৯, ১৭:০৪

ঐতিহাসিক বল্লাল বাড়িতে উৎখননে প্রাচীন বসতির আলামতসহ নানা ধরনের মৃৎপাত্র, ধাতব ও পাথরের প্রত্নবস্তু, উদ্ভিজ্জ ও প্রাণিজের অবশেষ ইত্যাদি আবিষ্কৃত হয়েছে। যা বিক্রমপুর তথা মুন্সীগঞ্জের প্রাচীন ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করবে ও পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটাবে।

`মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুর অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণা` কর্মসূচির ২য় পর্যায় ২০১৮-১৯ এ আবিষ্কৃত প্রত্নবস্তু নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার টঙ্গীবাড়ী উপজেলার নাটেশ্বর দেউল এলাকায় অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের সংবাদ সম্মেলনে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ঐতিহাসিক বল্লাল বাড়িতে উৎখনন ছাড়াও এর আগে আবিষ্কৃত বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণা কর্মসূচির গবেষণা পরিচালক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় এতে উপস্থিত ছিলেন মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আশফাকুজ্জামান, টঙ্গীবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জগলুল হালদার ভুতু, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আহমেদ, টঙ্গীবাড়ীর ইউএনও হাসিনা আক্তার প্রমুখ।

ফাউন্ডেশন সংবাদ সম্মেলনে জানায়, ২০১০-১৩ পর্যন্ত ৯টি প্রত্নস্থানে পরীক্ষামূলক উৎখনন কাজ পরিচালিত হয়। রামপাল ইউনিয়নের রঘুরামপুর গ্রামে বিক্রমপুরী বৌদ্ধবিহারের ছয়টি ভিক্ষুকক্ষ, একটি মণ্ডপ ও পঞ্চস্তুপ আবিষ্কৃত হয়। ২০১৩ সাল থেকে নাটেশ্বর দেউলে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে বের হয়ে আসতে থাকে বৌদ্ধ মন্দির, অষ্টকোণাকৃতি স্তুপ, ইটনির্মিত রাস্তা, ইটনির্মিত নালা প্রভৃতি।

প্রায় দশ একর ঢিবিতে উৎখনন কাজের বিশালতা ও সংরক্ষণের কথা চিন্তা করে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন চীনের হুনান প্রাদেশিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও প্রত্নতত্ত্ব ইনস্টিটিউটকে আমন্ত্রণ জানায়। ২০১৪ সাল থেকে যৌথভাবে নাটেশ্বর দেউলে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। ২০১৩-২০১৮ পর্যন্ত উৎখননে পাঁচ হাজার বর্গমিটারের বেশি এলাকা উন্মোচিত ও তাৎপর্যপূর্ণ প্রত্নবস্তু আবিষ্কৃত হয়েছে। আমেরিকার বেটা পরীক্ষাগারে ২৬টি কার্বন-১৪ তারিখ নির্ণয় করা হয়েছে। স্তরায়ন ও কার্বন-১৪ তারিখের ভিত্তিতে নাটেশ্বর বৌদ্ধ বসতির দুটি সময়কাল পাওয়া গেছে। প্রথম পিরিয়ড ৭৮০-৯৫০ খ্রিষ্টাব্দ ও দ্বিতীয় পিরিয়ড হলো ৯৫০-১২২৩ খ্রিষ্টাব্দ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রঘুরামপুর ও নাটেশ্বরে বিশাল আকার ও ভিন্ন ভিন্ন কাজে ব্যবহৃত স্থাপত্যিক নিদর্শনের আবিষ্কার ঐতিহাসিক সূত্রে উল্লেখিত বিক্রমপুরের রাজধানীর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ইট-নির্মিত মন্দির, মণ্ডপসহ অষ্টকোণাকৃতির তিনটি স্তুপ, ৫১ মিটার দীর্ঘ ইটনির্মিত উন্নত প্রযুক্তির রাস্তাসহ মোট চারটি রাস্তা ও পার্শ্বরাস্তা, চারদিকে চারটি স্তুপ, হলঘর বিশাল আকারের ক্রুশাকৃতির কেন্দ্রীয় স্তুপ, বিভিন্ন কক্ষ, সীমানা প্রাচীর, প্রবেশপথ ইত্যাদি প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কৃত হয়েছে।

এর আগে অতিথিরা নাটেরশ্বর দেউল ও রঘুরামপুর বৌদ্ধবিহার এলাকার প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশনগুলো পরিদর্শন করেন।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ও অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে বিক্রমপুর অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণা কর্মসূচিটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০১০ সাল থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা কেন্দ্র ঐতিহ্য অন্বেষণ বিক্রমপুর অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণা কাজ করে আসছে।

(ঢাকাটাইমস/০৯এপ্রিল/প্রতিবেদক/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :