নববর্ষ উপলক্ষে চাঁদপুরে গোপনে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ

শওকত আলী, চাঁদপুর
 | প্রকাশিত : ১১ এপ্রিল ২০১৯, ১৯:৩৬

ইলিশের পোনা জাটকা রক্ষায় সরকার মার্চ-এপ্রিল দুই মাস পদ্মা-মেঘনা নদীতে সব ধরনের মাছ আহরণ, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ ও পরিবহন নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু বাংলা নববর্ষ (পহেলা বৈশাখ) উদযাপন করার জন্য এক শ্রেণির বিক্রেতা গোপনে ইলিশ বিক্রি করছেন। তবে দাম অন্য সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ।

চাঁদপুর শহর কিংবা জেলার অন্য কোন বাজারে প্রকাশ্যে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে না। চাহিদা থাকলেও আইনি ভয়ে ক্রেতারাও নীরব। কারণ প্রতিনিয়ত বাজারগুলো মনিটরিং করছে জেলা ট্রাস্কফোর্স।

বৃহস্পতিবার সকালে জেলার সব চেয়ে বড় মৎস্য আড়ত বড় স্টেশন মাছঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, সব আড়ৎই নীরব। কারণ ইলিশের আমদানি না থাকলে আড়ৎগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতি থাকে না। শুধুমাত্র দুপুরে শরীয়তপুর জেলা ও চাঁদপুরের বিভিন্ন জলাশয়ের চাষকৃত রুই, কাতল, তেলাপিয়া ও চিংড়ি মাছ আড়তে বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসেন লোকজন। এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যেই এসব মাছ বিক্রি হয়ে যায়। এরপর থেকে আড়তের কার্যক্রম বন্ধ থাকে।

মৎস্য ব্যবসায়ী হযরত আলী বলেন, ‘মৎস্য ব্যবসায়ীরা সরকারি নিষেধাজ্ঞা মান্য করে। নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে গত কয়েক বছরই চাঁদপুরের ইলিশ ম্যানু থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এ কারণে স্থানীয় প্রশাসনসহ কোন সংগঠনেই ইলিশের চাহিদা নেই। কেউ গোপনে বিক্রি করে কিনা তা আমার জানা নেই।’

কচুয়া উপজেলা থেকে ইলিশ ক্রয় করতে আসা ক্রেতা মানিক জানান, ‘মৎস্য আড়তে গিয়ে ইলিশ চাওয়া হলে ওজন জেনে এনে দেয়া হয়। আমি ৫শ’ গ্রাম ওজনের দুই কেজি দেড় হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করেছি।’

মৎস্য ব্যবসায়ী ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার আগে চাঁদপুরের নদীর ইলিশ সংরক্ষণ আছে। ওইসব ইলিশের মধ্যে ৫শ’ গ্রাম ইলিশ প্রতি কেজি ৬শ’ টাকা, ৮শ’ গ্রাম এক হাজার ৫০ টাকা, ১ কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৬শ’ টাকা ও ১ কেজি ৭শ’ থেকে ৯শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ ২ হাজার ২শ’ টাকা। তবে কেউ কেউ বার্মা থেকে আমদানিকৃত ইলিশ আরো কম দামে বিক্রি করে।’

চাঁদপুর মৎস্য বহুমুখী সমবায় সমিতি লি.-এর সভাপতি আব্দুল খালেক মাল বলেন, ‘চাঁদপুর মৎস্য আড়তে কোন তাজা ইলিশ বিক্রি হয় না। কেউ যদি অর্ডার দেয়, তাহলে কোল্ড স্টোরেজ থেকে এনে পূর্বে সংরক্ষিত ইলিশ সরবরাহ করা হয়।’

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকি বলেন, ‘চাঁদপুর মাছঘাটে গত কয়েকদিন আগে অভিযান চালানো হয়েছে। চাঁদপুর মাছঘাটেন একটি আড়ত থেকে জেলা পুলিশ ও মৎস্য বিভাগের যৌথ অভিযানে বিপুল পরিমাণে ইলিশ মাছ জব্দ করা হয়েছে। ওই দিন বেলা ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত ফরিদগঞ্জ উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ও চাঁদপুর নতুন বাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সিরাজুল মোস্তফার নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়। এ সময় মাছ ঘাটের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রাখা অবস্থায় প্রায় দুই মণ বড় সাইজের ইলিশ মাছ জব্দ করা হয়। এ বিষয়ে মৎস্য আইনে নিয়মিত মামলা করা হয়। ওই সময় কিছু জাটকাও পাওয়া গেছে। কেউ কেউ গোপনে ইলিশ বিক্রি করে বলে অভিযোগ, আমার কাছে আসে। তবে আমরা এখন আবার অভিযান পরিচালনা করব।’

চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, ‘চাঁদপুরে জাটকা সংরক্ষণের জন্য মার্চ-এপ্রিল দুই মাস অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে। এই সময়ে প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে ইলিশ বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ইলিশ বিক্রয়ের কোন সংবাদ পেলে আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। চাঁদপুরে পহেলা বৈশাখ উদযাপন কিংবা কোন অনুষ্ঠানে এই দুই মাস ইলিশ খাওয়ানো বাদ দেয়া হয়েছে।’

(ঢাকাটাইমস/১১এপ্রিল/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :