`সুদহারের পার্থক্য দুই শতাংশে আনতে কাজ করছে সরকার`

প্রকাশ | ১১ এপ্রিল ২০১৯, ২১:০২ | আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৯, ২২:১৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস

ব্যাংকের আমানত ও  ঋণের সুদহারের পার্থক্য দুই শতাংশের নিচে নিয়ে আসতে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বলেছেন, ভোক্তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার পাশাপাশি তাদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়াতেও কাজ করছে সরকার।

বৃহস্পতিবার কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব)  সেমিনারে  এসব কথা বলেন তিনি। রাজধানীর বিদ্যুৎভবনে জেলা প্রতিনিধিদের সম্মেলন ও ‘ভোক্তা অধিকার শক্তিশালীকরণ ‘ শীর্ষক সেমিনারটির আয়োজন করে ক্যাব।

ব্যাংক ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে দাবি করে আসছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেও ব্যাংকগুলোকে বারবার  নির্দেশনা দেওয়া হয় সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার। কিন্তু সেটি বাস্তবায়ন করেনি কোনো ব্যাংক। এ নিয়ে সরকারে অসন্তোষ আছে।

টিপু মুনশি বলেন, ‘যে টাকা ব্যাংক সুদ দেয় জনগণকে এবং যে টাকা তারা সুদ নেয়, এই পার্থক্যটা পৃথিবীর কোথাও ২-৩ শতাংশের বেশি না। একমাত্র বাংলাদেশেই ৫ শতাংশের ওপরে এই পার্থক্য।’

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের ডিপোজিটের বিপরীতে কত টাকা তারা দিচ্ছে, আর কত টাকা তারা নিচ্ছে, এটা একটা সিস্টেমে আনা দরকার। এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বারবার নির্দেশনা দিচ্ছেন, সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা হোক।’ সুদের হার কমলে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হলে তাতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশে পণ্যে কেনার আগে ভোক্তারা জানতে পারেন, তার গুণাগুণ সম্পর্কে। মোড়কে সেটা লেখা থাকে। যা লেখা, ঠিক সেই উপাদানই থাকে সেখানে। বাংলাদেশেও সেটা হবে। হয়তো পাঁচ বছর সময় লাগবে।’ ভোক্তাদের অধিকার সম্পর্কে তাদের সচেতন করারও আহ্বান জানান তিনি। 

সভাপতির বক্তব্যে ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান সেমিনারে বলেন, `ভোক্তাবান্ধব অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে। আমরা ভোক্তাবান্ধব অর্থনীতি চাই। শুধু ব্যবসাবান্ধব অর্থনীতি হলেই হবে না সেটা ভোক্তাবান্ধবও হতে হবে।  ভোক্তাবান্ধব হলে সেটাই ব্যবসাবান্ধব হবে।‘

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক এই চেয়্যারম্যান বলেন, অনেক দেশে ভোক্তাদের স্বার্থ দেখার জন্য মন্ত্রণালয় আছে। কিন্তু বাংলাদেশে সেটা নেই।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ভোক্তাদের জন্য আলাদা  উইং করারও দাবি জানান তিনি। বলেন, যেখানে শুধু ভোক্তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কাজ হবে। এর ফলে ভোক্তাদের কথা বলার প্রতিনিধি পাওয়া যাবে।   

গোলাম রহমান বলেন, মাত্র ১৬ জন জনবল নিয়ে চলছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। তারা এ জনবল নিয়ে কী কাজ করবে ভোক্তাদের জন্য?  আর  ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতি জেলায় দুইজন করে লোকবল আছে। তাও বিভিন্ন জেলায় নেই।  তাদের লোকবল বাড়ানো প্রয়োজন। 

`আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। মালিকদের  দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি যেন সরকারের পলিসিতে এনকারেজ না হয়।`

ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, `ব্যাংকে এখন এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপি। এখন ব্যাংকের মালিক হয়ে গেছেন কয়েকজন। দেখা যায়, মালিকদের টাকা থাকে ৫ শতাংশ। বাকি টাকা আমরা যারা ব্যাংকের সেবাগ্রহিতা তাদের কাছ থেকে নেওয়া হয়। কিন্তু আমরা তো এর সুফল পাচ্ছি না।‘

`ব্যাংক ও মালিকদের অব্যবস্থাপনায় ঋণখেলাপি বাড়ছে। এর ফলে আমরা খুব কম সুদে টাকা জমা দিচ্ছি। ব্যাংকে টাকা রেখে আমরা কোনো সুফল  পাই না। আবার আমরা যখন ঋণ নেই, তখন উচ্চ হারে সুদ দিতে হয়। আর যারা হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছেন, তাদের জন্য রিসিডিউল হচ্ছে।

` ব্যাংক পরিচালনা পরিষদে  একই পরিবারের অনেক সদস্য রয়েছেন।  ব্যাংকের সব সিদ্ধান্ত পারিবারিকভাবে হবে, এটা হতে পারে না। এসব বিষয়ে সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।‘

বিশেষ অতিথি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শফিকুল ইসলাম লস্কর বলেন,  ভোক্তাদের জন্য অনেক সংস্থা কাজ করলেও তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে।  এখানে সমন্বয় সাধন করতে হবে।

বিশেষ অতিথি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মফিজুল ইসলাম বলেন, বাজারে যে বেগুন পাওয়া যায়, তার প্রতিটির মধ্যেই ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া যাবে। কোন পণ্যের গুণাগুণ কি সেটা ভোক্তারা কেনার আগে জানতে পারছেন না।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হকও সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন।

সেমিনারে ক্রেতা-ভোক্তা অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণে সোচ্চার করতে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানানো  হয়।

(ঢাকাটাইমস/১১এপ্রিল/জেআর/এআর)