জয়পুরহাটে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, নিহত ৮

জয়পুরহাট প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০১৯, ২২:২৬ | প্রকাশিত : ১২ এপ্রিল ২০১৯, ১৪:২৬

বগুড়া থেকে জয়পুরহাটগামী একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে নারী ও শিশুসহ আটজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৩০ জন। শুক্রবার দুপুরে জেলা সদরের বানিয়াপাড়া এলাকার ভূতগাড়ী নামক স্থানে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

আহতদের জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে গুরুতর ১০ জনকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।

নিহতদের মধ্যে ছয়জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার কাদিরপুর গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিকের স্ত্রী হেনা বেগম (৩৪), পাঁচবিবির কড়িয়া গ্রামের হুমায়নের সাত মাসের শিশু সন্তান হুমায়রা আক্তার, রতনপুর গ্রামের সামছুদ্দিনের স্ত্রী জাকিয়া বেগম (৭০), উঁচনা গ্রামের আমীর হোসেনের স্ত্রী জাহেরা বেগম (৫৫), জয়পুরহাট নার্সিং ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের ছাত্রী শারমিন আক্তার (১৯) ও রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা সদরের দিলীপ মুর্মুর শিশু সন্তান রিপা মুর্মু (০৩)। বাকি দুজনের পরিচয় জানা যায়নি।

পুলিশ ও বাসযাত্রী সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৫০ জন যাত্রী নিয়ে এম.পি পরিবহনের বাসটি বগুড়া থেকে রওনা দেওয়ার পর বেলা দেড়টার দিকে জয়পুরহাট সদর উপজেলার বানিয়াপাড়া পুলিশ বক্সের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। খবর পেয়ে জয়পুরহাট ফায়ার সার্ভিসের দল ছুটে এসে ঘটনাস্থল থেকে তিনজন শিশু ও পাঁচজন নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করে। একই সঙ্গে প্রথম দফায় ১৮ জন ও পরে আরও ১২ জন আহত যাত্রীকে উদ্ধার করে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করে।

দুর্ঘটনার পর থেকে বাসের চালক ও হেলপার পলাতক আছে। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক জাকির হোসেন, পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান রকেট ঘটনাস্থলে আসেন। তারা নিহত ও আহতদের বিষয়ে খোঁজখবর নেন।

এ সময় সরকারিভাবে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে নিহতদের তাৎক্ষণিকভাবে নগদ ছয় হাজারসহ ২০ হাজার টাকা প্রদান করার ঘোষণা দেওয়া হয়। একইভাবে জয়পুরহাট পৌরসভার মেয়র মোস্তাফিজার রহমানের পক্ষ থেকে নিহতদের জনপ্রতি ছয় হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়।

ঘটনার কারণ উদঘাটনে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সোনিয়া বিনতে তাবিবকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে এই টিমকে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে।

জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া আহত বাসযাত্রী বগুড়ার এমরানুল কবীর বলেন, বেপরোয়াভাবে চালানোর ফলে বাসটি দুর্ঘটনা কবলিত হয়। তিনি ওই বাসে জয়পুরহাট আসছিলেন। তার মাথায় প্রচণ্ড আঘাত লাগে। তিনি অল্পের জন্য বেঁচে যাওয়ায় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন।

হাসপাতালে চিকিৎসারত আহত যাত্রী কালাই উপজেলার কাদিরপুর গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, তারা স্বামী-স্ত্রী দুজন একটি বিয়ের দাওয়াতে অংশ নিতে বগুড়া থেকে ওই বাসে জয়পুরহাট আসছিলেন। চালক খুব দ্রুত গাড়ি চালাচ্ছিলেন। হঠাৎ করেই কিছু বুঝে উঠার আগেই তাদের বাস খাদে পড়ে যায়। দুর্ঘটনায় তিনি বেঁচে গেলেও তার স্ত্রী হেনা বেগম মারা গেছেন। তবে বিষয়টি স্বজনরা তাকে জানতে দেননি।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নুরুন্নবী জানান, দুর্ঘটনায় ৩০ জন রোগীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আহতদের মধ্যে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় দশজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়ার শজিমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনে তিন সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করে দেওয়া হয়েছে। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ছাড়া নিহতদের জনপ্রতি ২০ হাজার টাকার সহযোগিতার ঘোষণা দিয়ে তাদের সৎকারের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে ছয় হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

এদিকে দুর্ঘটনার খবর জানার পর নিহত ও আহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের হুইপ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি।

(ঢাকাটাইমস/১২এপ্রিল/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :