ডিম খান বেশি করে, ভুল ধারণা আর নয়

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১২ এপ্রিল ২০১৯, ২২:৪৮

সাদা অংশের মধ্যে লুকিয়ে থাকা কাঁচা হলুদ বা কমলা রঙের নরম কুসুম। আহা! ডিমপ্রিয় বাঙালির পাতে ডিম যেমন ভাবেই আসুক না কেন, জিভে জল আসবেই। সেদ্ধ হোক বা স্ক্র্যাম্বেলড, ওমলেট বা পোচ--- বাঙালির ডিমপ্রীতি রেসিপি ভেদে একটুও কমে না।

আজকাল নানা অসুখের ভয়ে, আবার কখনও বা চলতি কিছু ধারণার বশে ডিম নিয়ে নানা মিথ মেনে চলি আমরা। ডিম এমনিতেই উচ্চ প্রোটিন সম্পন্ন খাবার। এ ছাড়াভিটামিন ও, বি ২, বি ৬, বি ১২, ডি ইত্যাদি ভিটামিন ও জিঙ্ক, আয়রণ, কপারের মতো খনিজের সম্ভার ডিম। তবু সাহস করে ডিম আর খেতে পারেন ক’জন!

অসুখের চোখরাঙানি কিংবা প্রচলিত কোনো ভয়ের কারণে কি আপনিও ডিম সংক্রান্ত এ সব মিথে বিশ্বাস করে এসেছেন? তা হলে আজ থেকেই বদলে ফেলুন কিছু কিছু ধারণা।

ডিম ব্রণ বাড়ায়: অনেকেরই ধারণা, ব্রণের অন্যতম কারণ ডিম। ডায়েটে বেশি পরিমাণে ডিম থাকা মানেই ব্রণ ডেকে আনা। ত্বকবিশেষজ্ঞরা কিন্তু মোটেও এমন ধারণাকে নম্বর দিচ্ছেন না। বরং, তাদের স্পষ্টমত, ডিম থেকে কোনো রকম অ্যালার্জির শিকার হন যারা, একমাত্র তাদের ক্ষেত্রেই ডিম থেকে ত্বকে কোনো রকম সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নইলে ডিম মোটেও ত্বকের জন্য ক্ষতিকর নয়। আর ডিম খেলেই ব্রণ হওয়ার ধারণারও কোনো ভিত্তি নেই।

কিডনির অসুখ: বেশি ডিম খেলে কিডনির ক্ষতি হয়, এমন ধারণাতেও বিশ্বাস করেন অনেকেই। তবে এই ভাবনাতেও সায় নেই চিকিত্সকদের। বরং কিডনির নানা সমস্যা উচ্চ প্রোটিন সম্পন্ন ডিম মেটাতে পারে।

ডিমের কুসুম ও কোলেস্টেরল: ডিমের কুসুম খেলে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ে, এই ভয়ে আজকাল অনেকেই পাত থেকে বাদ দেন সুস্বাদু কুসুমটিকে। আর কুসুম ছাড়া ডিম খাওয়ার এমন শাস্তির চোটে ডিম বিষয়টাই বাদ চলে যায় পাত থেকে। আধুনিক চিকিত্সাবিজ্ঞান কিন্তু আশ্বস্ত করছে এদের। ডিমের কুসুমের সঙ্গে কোলেস্টেরলের ব্যস্তানুপাতিক সম্পর্ক আগেকার যুগে বিশ্বাস করা হলেও সম্প্রতি নানা গবেষণায় উঠে এসেছে, কুসুম ও কোলেস্টেরলের মধ্যে কোনও শত্রুতা নেই। কাজেই কুসুম খান নিশ্চিন্তে।

ডিম একটার বেশি নয়: দিনে ক’টা ডিম খাওয়া উচিত, এ প্রশ্ন বোধ হয় সকলের মনেই ঘোরে। পুষ্টিবিদদের মতে, এমন কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। ডিম শরীরের তাপমাত্রাতেও ভারসাম্য রক্ষা করে। তাই অনেকেই ভাবেন, বেশি ডিম মানেই শরীর বেশি মাত্রায় গরম হয়ে যাওয়া। এমন ধারণায় কোনো বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই। আসলে শরীরে প্রোটিন ও ফ্যাটের চাহিদা বুঝেই ডায়েটে ডিমের সংখ্যা নির্দিষ্ট করেন পুষ্টিবিদরা। যে কোনো সুস্থ মানুষ দিনে চার থেকে পাঁচটা ডিম খেতেই পারেন বলে মত পুষ্টিবিদ সুমেধা সিংহের। তবে যে কোনো জিনিসই অত্যধিক খেয়ে ফেলা কাজের কথা নয়। তাই ডিমের সংখ্যাটা চার-পাঁচটা থেকে খুব বেশি না ওঠাই ভালো। খুব গরমের দিনেও ডিম খাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ আনলে ভালো হয়। তবে ডিম থেকে কোনো অ্যালার্জি না হলে দিনে দুই-তিনটা ডিম সবসময়ই স্বাস্থ্যকর।

ডিম সংরক্ষণ: অনেকেরই ধারণা, ডিম মানেই তা ফ্রিজে জমিয়ে রাখতে হবে, নইলে টাটকা থাকবে না বেশি দিন। কিন্তু জানেন কি, ফ্রিজে রাখতেই হবেএমন কোনো নিয়ম কিন্তু নেই। কোনও দেশের আবহাওয়া ও তাপমাত্রার উপর অনেকটাই নির্ভর করে সেই দেশে খাবার সংরক্ষণ করে রাখার পদ্ধতি। খুব গরমের দিনক্ষণ ছাড়া এ রাজ্যেও ফ্রিজ ছাড়াও ডিম ১৫-২০ দিন টাটকা রাখা যায়।

লাল ডিম না সাদা ডিম: এ এক অদ্ভুত দোটানা! কোন খোলার ডিম বেশি পুষ্টিকর, লাল না কি সাদা! এ নিয়ে সারা বিশ্বে নানা গবেষণাও চলেছে। সম্প্রতি এই নিয়ে গবেষণা চালালেন কর্নেল ইউনিভার্সিটির প্রাণীবিজ্ঞানের ভিজিটিং ফেলো ট্রো ভি বুই। তিনি এক সর্বভারতীয় দৈনিকে জানিয়েছেন, এই দুই ধরনের ডিমে পুষ্টিগত ভাবে বিশেষ কোনো তফাত নেই। তাঁর সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেছেন নিউ ইয়র্কের এক দল গবেষকও। তবে তাঁদের মতে, লাল ডিমে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড একটু বেশি রয়েছে। কিন্তু এই পরিমাণ এতই অল্প যে তাতে খুব একটা ফারাক পড়ে না। গবেষকদের মতে, ডিমের স্বাদ নির্ভর করে মুরগিকে কী ভাবে প্রজনন করানো হচ্ছে এবং মুরগির খাদ্যাভ্যাসের উপর।তাঁদের দাবি, সাদা ডিম পাড়ে সাদা পালকের মুরগিরা। লাল ডিম পাড়ে গাঢ় রঙের পালকের মুরগি।সুতরাং, লাল হোক বা সাদা— ভালবেসে ডিম খান নিশ্চিন্তে।

ঢাকাটাইমস/১২এপ্রিল/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :