ঐতিহ্যের ছোঁয়ায় মৃৎশিল্পে নতুন দিন

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ১৩ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:১৭

দিন দিন মৃৎশিল্পের চাহিদা কমলেও রাজশাহীর বাবু সরকারের হাতে তৈরি এ শিল্পপণ্যের কদর বাড়ছেই। কারণ, বাবু সরকার তার পণ্যের গায়ে ফুটিয়ে তোলেন পুরনো দিনের দেশীয় ঐতিহ্য। নান্দনিক এসব পণ্যের সবটাই নিয়ে যায় হস্ত ও কারুশিল্পের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘আড়ং’।

বাবু সরকার রাজশাহী মহানগরীর সাগরপাড়া শিবালয় মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক। মন্দির প্রাঙ্গণে দুটি ঘর করে পরিবার নিয়ে থাকেন তিনি। সেখানেই প্রায় ৩০ বছর ধরে মাটির নানা শো-পিস তৈরি করছেন। চাহিদা বাড়ায় সম্প্রতি নগরীর নওদাপাড়া এলাকায় আরেকটি কারখানা চালু করেছেন তিনি।

তবে কারুকাজ জানা মৃৎশিল্পীর সংকটে উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাবু সরকার। ঢাকা টাইমসকে তিনি জানান, আগে শুধু সাগরপাড়ায় তার বাড়িতে মাটির জিনিসপত্র তৈরি করা হতো। কিন্তু এ এলাকায় এখন দক্ষ মৃৎশিল্পীর সংকট দেখা দিয়েছে। তাই উৎপাদন বাধাগ্রস্থ হচ্ছিল। এরপরও পণ্যের চাহিদা বাড়ায় নওদাপাড়ার কারখানাটি খোলা হয়েছে। সেখানে চারজন মৃৎশিল্পী কাজ করেন। আর সাগরপাড়ায় শুধু স্ত্রী মলি সরকারকে নিয়ে কাজ করেন তিনি।

বাবু সরকারের সাগরপাড়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, একটি ঘরে থরে থরে সাজানো মাটির আয়নার ফ্রেম। অনেক ফ্রেমে আয়নার কাঁচও লাগানো হয়েছে। রয়েছে নানা ধরনের শো-পিস, প্রদীপদানি, আগরদানি ও শিশুদের খেলনা। তৈরি করে রাখা হয়েছে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধের ছোট ছোট দৃষ্টিনন্দন মূর্তিও। সবকিছুতেই রয়েছে পুরনো দিনের টোরাকাটার নানা নকশা।

৪৬ বছর বয়সী বাবু সরকার জানান, প্রায় ৩০০ ধরনের মাটির শো-পিস ও খেলনাসহ ব্যবহার্য জিনিসপত্র তৈরি করতে পারেন তিনি। এসব তৈরি করতে প্রথমে কাদামাটি একটি ডাইসে ভরতে হয়। এতে মাটির কাদা নির্দিষ্ট শো-পিসের অবয়ব পায়। বাকি কাজগুলো করতে হয় হাতে। তিনি সর্বনিম্ন ৩৫ টাকায় প্রদীপদানি বিক্রি করেন। গৌতম বুদ্ধের মূর্তি বিক্রি করেন সর্বোচ্চ ৮০০ টাকায়।

প্রায় ৩০ বছর ধরে এসব পণ্য তৈরি করলেও আড়ং তার কাছ থেকে নিচ্ছে গত ২০ বছর ধরে। আড়ংয়ের চাহিদা মেটাতেই তিনি হিমশিম খান। অন্য কোথাও পণ্য দিতে পারেন না।

বাবু বলেন, পুরনো সবকিছুর ঐতিহ্য আছে। সেগুলো এখনও মানুষ পছন্দ করেন। এই ভাবনা থেকেই তিনি পুরনো টোরাকাটা দিয়ে মাটির পণ্যের নকশা করেন। আর এ কারণেই তার পণ্যের চাহিদা খুব বেশি। প্রতি মাসে তিনি প্রায় ৭০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেন। কারখানায় কর্মরত মৃৎশিল্পীদের বেতনসহ আনুষঙ্গিক সব খরচ বাদ দিলেও তার আয় হয় ৪০ হাজার টাকা।

মলি সরকার বলেন, তার স্বামী প্রতিমাও তৈরি করেন। কিন্তু প্রতিমা তৈরির কাজ সব সময় থাকে না। তাই দেশীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে মিল রেখে গৃহসজ্জার নানা জিনিসপত্র তৈরিতেই তারা সারা বছর ব্যস্ত থাকেন। বর্তমানে মৃৎশিল্পের দুর্দিন চললেও তাদের ওপর কোনো প্রভাব পড়েনি। বরং চাহিদা অনুসারে পণ্য সরবরাহ করতে পারছেন না জনবল সংকটে।

দক্ষ অন্য মৃৎশিল্পীরাও এসব পণ্য তৈরি করলে তাদের জীবনেও নতুন দিন আসবে বলে মনে করেন মলি সরকার।

(ঢাকাটাইমস/১২এপ্রিল/ব্যুরো/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :