হিসাবের হালখাতা

সিরাজুম সালেকীন
 | প্রকাশিত : ১৩ এপ্রিল ২০১৯, ১৯:৫৬
ফাইল ছবি

নতুন বছর নতুন করে জীবন শুরুর যে আলোচনা, তার আনুষ্ঠানিক আচরণের দেখা মেলে ব্যবসায়ী মহলে। সারা বছরের বাকির হিসাব গুটিয়ে এনে নতুন করে খাতা খোলার যে আনুষ্ঠানিকতা, সেটা পরিচিত হালখাতা নামে। শত শত বছর ধরে এই চল আছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে।

আধুনিক জীবনে ব্যবসার ধরন যেমন পাল্টাচ্ছে, তেমনি এই হালখাতার আনুষ্ঠানিকতাও এখন সব জায়গায় দেখা মেলে না। যদিও পাইকারি আড়ত আর বড় বড় বাজার এলাকায় এখনো চল রয়েছে এই আনুষ্ঠানিকতার।

বাংলা বছরের প্রথম দিন নতুন হিসাব খোলার এই আনুষ্ঠানিকতায় অর্থ পরিশোধের সময় ক্রেতারাও আপ্যায়িত হন মুখরোচক নানা খাবারে। পুরোনো বকেয়া পরিশোধের পর একই ব্যবসায়ীর নামে খোলা হয় নতুন খাতা। হাল এই খাতাই ধীরে ধীরে পরিচিতি পায় হালখাতা নামে।

বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ছোট-বড়-মাঝারি দোকানে এই উৎসব পালন করা হয়ে থাকে।

হালখাতাকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঝেড়ে-মুছে পরিষ্কার এবং সাজসজ্জা করেন। পরিপাটি করে সাজানো প্রতিষ্ঠানে আমন্ত্রণ থাকে তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীদের।

রাজধানীতে এই ঐতিহ্যের সবচেয়ে বেশি অনুশীলন দেখা যায় পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে। তাঁতিবাজার, শাঁখারিবাজার, শ্যামবাজার, ফরাশগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং চকবাজারে পয়লা বৈশাখে ঘটা করে চলে উদযাপন।

পয়লা বৈশাখের সকালে সনাতন ধর্মাবলম্বী দোকানি ও ব্যবসায়ীরা সিদ্ধিদাতা গণেশ ও বিত্তের দেবী লক্ষ্মীর পূজা করে থাকেন। সারা বছর যেন ব্যবসা ভালো যায় সে কামনাই থাকে তাদের। দেবতার পূজা- অর্চনার পর তার পায়ে ছোঁয়ানো সিন্দুরে স্বস্তিকা চিহ্ন অঙ্কিত ও চন্দন চর্চিত খাতায় নতুন বছরের হিসাব নিকাশ শুরু হয়।

চকবাজারে কথা হয় কাপড় ব্যবসায়ী ফারুকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সারা বছর দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দোকানে আসে ব্যবসায়ীরা। অনেক সময় বাকি দেওয়া হয়। সেগুলো পয়লা বৈশাখে হালখাতার সময় আদায় করা হয়। তাই প্রতি বছর হালখাতা করেন। যেসব ব্যবসায়ীর কাছে বকেয়া আছে তাদেরকে হালখাতার তাগাদা দিয়েছি।’

তবে উৎসবের আমন্ত্রণে কিছুটা আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। আগে হালখাতার কার্ডের মাধ্যমে দাওয়াত দেওয়া হতো ব্যবসায়ীদের। কিন্তু এখন মোবাইলের মাধ্যমে তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়।

এই ব্যবসায়ী জানান, প্রতি বছর হালখাতা করে বকেয়ার অনেক টাকা আদায় সম্ভব হয়।

চকবাজার মোড়ের মেসার্স সততা ট্রেডার্সে কথা হয় মাহিদুল আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই বাজারের অধিকাংশ ক্রেতা এখান থেকে মাল কিনে বিক্রি করেন। যারা কিনেন তারা বিভিন্ন দোকান থেকেই বাকিতে কিনে থাকেন। তাই এখানকার ব্যবসায়ীরা নিজেদের সুবিধা মতো হালখাতার আয়োজন করেন; যাতে পাওনা টাকা আদায় করতে পারেন। তাই অনেকে পয়লা বৈশাখের আগে-পরে হালখাতার আয়োজন করে।’

শাঁখারিবাজার স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল কর্মকার বলেন, ‘একটা সময় ছিল যখন পয়লা বৈশাখে বিরাট বিরাট প্যান্ডেল উঠতো বিভিন্ন দোকানের সামনে। ক্রেতাদের সন্তুষ্ট করতে সিনেমার নায়ক-নায়িকাদেরকেও নিয়ে আসতেন কোনো কোনো ব্যবসায়ী। তবে আগের মতো কেউ আর ঝামেলায় যেতে চায় না। কোনো রকম বাকি টাকা তুলতে পারলেই হলো। অনেকে সরাসরি না আসতে পারলেও বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে দেন।’

উর্দু রোডের মাদার কেয়ার গার্মেন্টের কর্মচারী রিফাত বলেন, ‘আমরা পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী হলেও খুচরা দোকানদাররা খুব কমই হালখাতা

বাংলা বাজার ঘুরে দেখা গেল বেশ কয়েকটি দোকানে হালখাতা বিক্রি হচ্ছে। ২০ থেকে শুরু করে ৫৫০ টাকার মধ্যে এসব খাতা পাওয়া যাচ্ছে দোকানগুলোতে।

ইমরুল হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী জানালেন, আগের মতো এখন আর সালু খাতা বিক্রি হয় না এই সময়টাতে। বেশ কয়েক বছর আগেও জমজমাট থাকতো লাল টালি খাতার বাজার। কিন্তু হালখাতাই হয় কম, আর অনেক সময় ব্যবসায়ীরা পুরোনো খাতাতেই হিসাব চালু রাখেন।

রাজীব প্রোডাক্টসের এক কর্মচারী বললেন, ‘সারা দেশে তারা খাতা বিক্রি করতে পারেন বলে বিক্রি ততটা খারাপ না। কিন্তু ১০ বছর আগে শুধু ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছেই খাতা বিক্রি করে কুলানো যেত না।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :