দাবি আদায়ে ফের রাস্তায় পাটকল শ্রমিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৫ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:৩৭ | প্রকাশিত : ১৫ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:০৪

নয় দফা দাবি আদায়ে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ও প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে রাজপথ-রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেছেন রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা। সোমবার ভোর ছয়টা থেকে রাষ্ট্রয়ত্ত পাটকলে উৎপাদন বন্ধ রেখে শ্রমিকরা টানা ৯৬ ঘণ্টার ধর্মঘট শুরু করেছে। সকাল আটটা থেকে রাজপথ-রেলপথ অবরোধ শুরু হয়।

বকেয়া মজুরি প্রদান, মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন, চাকরি স্থায়ী করা এবং পাওনা পরিশাধ হয়রানি বন্ধ করাসহ নয় দফা দাবিতে সারাদেশের ২৬টি পাটকলের শ্রমিকরা দুই দফা আন্দোলন করে।

দুই দফা আন্দোলনের পরও বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) পক্ষ থেকে দাবি মেনে নেওয়ার বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। বিজেএমসির চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করেও কোনো ধরণের আশ্বাস না পাওয়ায় গত শুক্রবার চার দিনের ধর্মঘটের ডাক দেন শ্রমিক নেতারা। কর্মসূচি অনুযায়ী ১৫-১৮ এপ্রিল ধর্মঘট পালন করবে তারা। এই চার দিন সড়কপথ ও রেলপথ অবরোধ করারও ঘোষণা দেন।

বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগ ও রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ পরিষদের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা এসব কর্মসূচির মধ্যে ১৪ এপ্রিল প্রতিটি মিল গেটে সভা করে শ্রমিকরা।

অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ এপ্রিল পাটকল ধর্মঘট এবং প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৪ ঘণ্টা করে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ। ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে শ্রমিক সমাবেশ। ২৭, ২৮ ও ২৯ এপ্রিল আবারও পাটকল ধর্মঘট এবং প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টা করে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ। খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলসহ সারা দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ২২টি পাটকলে একযোগে এই কর্মসূচি পালন করা হবে।

ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সোমবার সকাল আটটা থেকে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলের শ্রমিকরা সড়কে নেমে চার দিনের ধর্মঘট শুরু করে। নতুন রাস্তা মোড়ে অবস্থান নিয়ে খুলনা-যশোর মহাসড়ক, নতুন রাস্তা মোড় থেকে সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড সড়ক, বিআইডিসি সড়ক এবং রেলপথ অবরোধ করে রেখেছেন শ্রমিকরা। এছাড়া টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করছেন তারা। শ্রমিকদের আন্দোলনে খুলনার শিল্পাঞ্চল উত্তাল হয়ে উঠেছে। সড়ক অবরোধ থাকায় মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করা যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

এছাড়া অবরোধের কারণে খুলনা থেকে ছেড়ে যাচ্ছে না কোনো ট্রেনও। সকাল আটটা থেকে ট্রেন অবরোধ করাও কথা থাকলেও ছয়টা থেকে বন্ধ রয়েছে ট্রেন। ফলে যাত্রীরা স্টশনেই অবস্থান নিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। খুলনা প্ল্যাটফর্মে যাত্রীরা অবস্থান করছেন।

খুলনা স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার বলেন, সকাল ছয়টা থেকে ট্রেন ছাড়া সম্ভব হয়নি। অবরোধ সকাল আটটা থেকে শুরু হলেও যাত্রী ও ট্রেনের নিরাপত্তা চিন্তা করে ভোর ছয়টা থেকেই ট্রেন ছাড়া বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে ভোর ছয়টার কমিউটার, সাড়ে ছয়টার কপোতাক্ষ এক্সপ্রেসে, সোয়া সাতটার রূপসা এক্সপ্রেস ছাড়া হয়নি। এছাড়া সকাল আটটা ৪০ এ চিত্রা এক্সপ্রেস, নয়টা ১০ মিনিটে রকেটসহ দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোনো ট্রেনই ছাড়া সম্ভব হবে না।

পাটকল শ্রমিক নেতা সোহরাব হোসেন জানান, শ্রমিকরা ৭ থেকে ৯ সপ্তাহের মজুরি না পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তারা তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ, ঘর ভাড়া দিতে পারছেন না। এ অবস্থায় বাধ্য হয়েই তারা আন্দোলনে নেমেছেন।

খুলনার মতো চট্টগ্রামেও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে শ্রমিকরা। এর ফলে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

আন্দোলনরত শ্রমিক নেতারা বলেন, সরকার ঘোষিত জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫ সুপারিশ বাস্তবায়ন, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কর্মচারীদের পি এফ. গ্র্যাচুইটি ও মৃত শ্রমিকের বীমার বকেয়া প্রদান, টার্মিনেশন, বরখাস্ত শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহাল, শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগ ও স্থায়ী করা, পাট মৌসুমে পাটক্রয়ের অর্থ বরাদ্দ, উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিলগুলোকে পর্যায়ক্রমে বিএমআরই করাসহ প্রশাসন নয় দফা দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু আমাদের দাবিগুলো এখনও বাস্তবায়ন না হওয়ায় আমরা রাজপথে আবার নামতে বাধ্য হয়েছি।

ঢাকাটাইমস/১৫এপ্রিল/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :