পহেলা বৈশাখ

ঠাকুরগাঁও সীমান্তে দুই দেশের মিলনমেলা

প্রকাশ | ১৫ এপ্রিল ২০১৯, ২১:১১

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

সীমান্তের দুই পাশে দুটি পৃথক দেশের মানুষের বাস হলেও ভাষায় তারা বাঙালি। বিয়ে ও জীবিকার তাগিদসহ নানা কারণে অনেকে এখন দুই পাড়ের বাসিন্দা। তাই বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখে কাঁটাতারের বেড়ার বাধা ভুলে স্বজনদের সাক্ষাত পেতে ঠাকুরগাঁও সীমান্তে উপস্থিত হন লাখো মানুষ।

জেলার রানীশংকৈল মোলানী গ্রেরাডাঙ্গী এবং হরিপুর উপজেলার হরিপুর কাড়িগাঁও বিওপি, কান্ধাল, মলানী, ডাবরী, বেতনা, বুজরুক সীমান্তে এপার-ওপারে দুই দেশের হাজারো মানুষের উপস্থিতি মিলন মেলায় পরিণত হয়।

রবিবার সকাল ১০ টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত চলে দুই দেশের হাজার হাজার মানুষ উপস্থিতি।

সীমান্তের তারকাটার এপারে-ওপারে ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও  দু-দেশে বসবাসরত  স্বজনরা দীর্ঘদিন পর প্রিয়জনকে কাছে পান এ দিনটিতে। দীর্ঘদিন পর প্রিয়জনকে কাছে পাওয়ায় আনন্দ অশ্রুতে ভেসে যান অনেকে।

প্রথমে অনুমতি না দিলেও সকাল ১০টার পর স্বজনদের চাপ সামলাতে পারেনি  বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও ভারতের বিএসএফ। তারকাটার গেট না খুললেও অনানুষ্ঠানিকভাবেই তারকাটার এপারে-ওপারে দাঁড়িয়ে স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে ছুটে যান সবাই।

এ সময় প্রিয়জনকে কাছে পেয়ে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারকাটার কারণে প্রিয়জনকে ছুয়ে দেখতে পারেননি আগতরা। এ অবস্থায় প্রিয়জনদের খাবারসহ অন্যান্য সামগ্রী বিনিময় করেন বেড়ার ওপর দিয়ে ছুড়ে দিয়ে।

স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা নাসিমা বেগম (৪০) ও তার মামা নাসির আলীসহ অনেকে।

ঠাকুরগাঁও গরেয়ার গ্রামের শ্রী গজেন চন্দ্র রায় (৭০) জানান, এবার দেখা করেছেন তার মেয়ে গিতা রানী রায় সঙ্গে। ১০ বছর আগে গিতা রানী রায়ের বিয়ে হয় ভারতের মাল্দা জেলার রতুয়া থানার চাঁনমনি গ্রামে। বিয়ের পর এই প্রথম মেয়ের দেখা পেয়ে প্রথমে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে তার মেয়ে ও জামাইকে কাপড় ও মিষ্টি দিয়ে বেশ আনন্দ উপভোগ করেন।

ভারতের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে আসা জয়পুর হাটের পূর্ণিমা রাণী বলেন, সাত বছর আগে আমার ছোট বোন শ্রীমতি রাণীর বিয়ে হয় ভারতের গোয়ালপুকুর থানার পাঁচঘরিয়া গ্রামে। বিয়ের পর আর কথা হয়নি তার সাথে। কিন্তু আজ বোনের সাথে তাঁরকাটার এপার-ওপারে দাঁড়িয়ে কথা বলে এবং কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে মিষ্টি ও শাঁড়ি কাপড় দিতে পেড়ে মনে বড় আনন্দ পেয়েছি।

মিলন মেলায় ঘুরতে আসা অনেকেই তাদের আতœীয়-স্বজনদের সাথে দেখা করেন এবং কথা বলেন ও জিনিষ পত্র আদান-প্রদান করেন। তবে দু-দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মৌখিক অনুমতির প্রেক্ষিতে বিজিবি ও বিএসএফ’র কঠোর নিরাপত্তা ও উপজেলা প্রশাসনের বিশেষ নজরদারির মধ্য দিয়ে এই মেলা শান্তি পূর্ণভাবে শেষ হয়।

ঢাকাটাইমস/১৫এপ্রিল/ইএস