হারিয়ে যাচ্ছে ‘গরিবের এসি’

প্রকাশ | ১৬ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:০৯ | আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:১১

সাতক্ষীরা প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস

‘গরিবের এসি’ মাটির দেয়ালে গড়া সাতচালা বা আটচালা জোড়া বাংলাঘর এখন আর দেখা যায় না। দেখা মেলে না গোলপাতায় বা খড়ে ছাওয়া মাটির ঘরও। সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাড়ির সামনে সেই বৈঠকখানা বা দহলুজঘর তো বিলুপ্তই হয়ে গেছে। শান্তির নীড় সেসব মাটির ঘরের স্থান দখল করেছে ইট-পাথরের দালান।চিরচেনা গ্রামগুলোকেও তাই এখন অচেনা লাগে।

ঝড়-বৃষ্টি থেকে বাঁচার পাশাপাশি তীব্র গরম ও কনকনে শীতে আদর্শ বসবাস-উপযোগী এসব ঘর তৈরি হতো মাটিতে। প্রবীণেরা জানান, এঁটেল মাটি কাদায় পরিণত করে দুই-তিন ফুট চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হত। ১০-১৫ ফুট উঁচু দেয়ালের ওপর কাঠ বা বাঁশের চাল তৈরি করে খড়-কুটা, গোলপাতা, টালি অথবা ঢেউটিন দিয়ে ছাওয়া হতো। মাটি কুপিয়ে ও পানি দিয়ে কাদায় পরিণত করার পদ্ধতিকে জাব বলা হয়। জাব কেটে তা সুচারুভাবে গেঁথে ভাজে ভাজে তৈরি করতে হয় দেয়াল। দেয়ালের একেকটি ভাজের পুরত্ব তিন থেকে চার ফুট। এভাবে পাঁচ থেকে ছয়টি ভাজ শেষ হওয়ার পর দেয়ালের উচ্চতা দাঁড়ায় ১৫-১৮ ফুট। যিনি মাটির চাপ গেঁথে দেয়াল  ও বাঁশ দিয়ে চাল তৈরি করেন তাকে ঘরামি বলা হয়। 

ঘরের বারান্দা ও চালের ধরনের ওপর ভিত্তি করে ঘরকে বিভিন্ন নামকরণ করা হয়। চারপাশে বারান্দা থাকা ঘরকে আটচালা এবং তিনপাশে বারান্দা থাকা ঘরকে সাতচালা ঘর বলা হয়। গৃহিণীরা মাটির দেয়ালে বিভিন্ন রকমের আল্পনা একে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতেন। শৈল্পিক আল্পনায় ফুটে উঠতো নিপুণ কারুকার্য।

বৈঠকখানা বা দহলুজঘরে এক সময় বসতো গ্রামের মানুষের আড্ডা, বিনোদন আর গল্পের আসর। সাধারণ মানুষ তাদের সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্না, মান-অভিমান, আনন্দ-বেদনা প্রকাশ করতেন মোড়ল বা মাতবরের এ দহলুজঘরে বসে। হুকোয় টান দিয়ে জমিয়ে আড্ডা দিতেন।

ভূমিকম্প বা বন্যা না হলে একটি মাটির ঘর শত বছরেরও বেশি স্থায়ী হয়। অথচ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বর্ষা মৌসুমে মাটির ঘরের ক্ষতি হয় বলে ইট-সিমেন্টের ঘর নির্মাণে উৎসাহী হচ্ছে মানুষ। আধুনিকতার ছোঁয়া আর কালের আবর্তে তাই দালান-কোঠা আর অট্টালিকার কাছে হার মানছে মাটির ঘর। 

এক সময় সাতক্ষীরার ৭৮টি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামেই অনেক পরিবার মাটির ঘরে বাস করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করত। আশির দশকেও এসব গ্রামে কাঁচা ঘরবাড়ি দেখা যেত। আর নব্বইয়ের দশকে অতীতের সাক্ষী হিসেবে ছিল জোড় বাংলাঘর।

গরিবের এসির সংখ্যাধিক্যে ইট-পাথরের তৈরি পাকা দালানের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। সেই দিন বদলে গেছে। কাঁচাঘর ফেলে পাকাঘর নির্মাণে ঝুঁকছেন এ জেলার মানুষ। ফলে হাতেগোনা দু'একটি মাটির ঘর দেখা যায়। অধিকাংশ বাড়ি এখন ইট পাথরের তৈরি।

(ঢাকাটাইমস/১৬এপ্রিল/প্রতিবেদক/এআর)