ফ্রান্সের নটরডেম ক্যাথেড্রাল

২০০ বছর ধরে তৈরি, আগুনে ধ্বংস কয়েক ঘণ্টায়

প্রকাশ | ১৬ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:১০ | আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:৩১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস

ফ্রান্সের সবচেয়ে বিখ্যাত স্থাপনার একটি প্যারিসে মধ্যযুগীয় নটরডেম ক্যাথেড্রাল সোমবার আগুনে অনেকটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। ৮৫০ বছরের প্রাচীন ভবনটি পুরোপুরি তৈরি করতে সময় লেগেছিল দুই শতক। গির্জাটি দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতক ধরে নির্মাণ করা হয়।

তবে অগ্নিকাণ্ডের পর মূল কাঠামো এবং দুটো বেল টাওয়ার রক্ষা করা গেছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। প্রাচীন গোথিক ভবনটিকে রক্ষার জন্য দমকল কর্মীরা ব্যাপক চেষ্টা চালালেও এর উঁচু মিনার এবং ছাদ ধ্বসে পড়ে।

অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনো পরিষ্কার নয়, তবে কর্মকর্তারা বলছেন, চলমান সংস্কার কাজের সঙ্গে কোনও যোগসূত্র থাকতে পারে। ক্ষয়িষ্ণু ভবনটি রক্ষার জন্য গতবছর ফ্রান্সের ক্যাথলিক চার্চ তহবিলের আহ্বান করেছিল।

একটি দেশের প্রতীক

বিবিসি ওয়ার্ল্ড অনলাইনের হেনরি আস্টয়ের এর বিশ্লেষণ অনুসারে, নটরডেমের মত অন্য কোনো নিদর্শন বা জায়গা ফ্রান্সের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেনা। জাতীয় প্রতীক হিসেবে এর কাছাকাছি প্রতিদ্বন্দ্বী আইফেল টাওয়ার।

১২০০ শতক থেকে প্যারিসে দাড়িয়ে ছিল নটরডেম। ভিক্টর হুগোর ‘দ্য হাঞ্চব্যাক অব নটরডেম’ ফরাসিদের কাছে নটরডেম ডি প্যারিস হিসেবে পরিচিতি এনে দিয়েছিল। এই ক্যাথেড্রালটি সর্বশেষ বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হয়েছিল ফরাসি বিপ্লবের সময়।

নটরডেম সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য

• প্রতিবছর নটরডেম ক্যাথেড্রাল দেখতে এক কোটি ৩০ লাখ দর্শনার্থী (১৩ মিলিয়ন) আসেন।

• এটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটিজে সাইট যা ১২ এবং ১৩ শতক জুড়ে নির্মিত হয়েছিল এবং বর্তমানে এর বড় ধরনের সংস্কারকাজ চলছিল।

• সংস্কার কাজের জন্য ঢোকার মুখের বেশ কয়েকটি প্রতিমা সরানো হয়েছিল।

• ভবনের ছাদের বেশিরভাগই ছিল কাঠ দিয়ে তৈরি, যা আগুনে পুড়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে

. দুই বিশ্বযুদ্ধের ধকল থেকে এটি টিকে গিয়েছিল।

একটি জাতির অটলতার প্রতিমূর্তির এভাবে পুড়তে এবং মিনার চোখের সামনে গুড়িয়ে যেতে দেখা যেকোনো ফরাসি নাগরিকের জন্য বিরাট এক ধাক্কা।

প্রত্যক্ষদর্শী সামান্থা সিলভা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘আমার অনেক বন্ধু-বান্ধব দেশের বাইরে থাকে এবং যখনই তারা আসে প্রতিবার আমি তাদের বলি নটরডেম বেরিয়ে এসো। অনেকবার আমি সেখানে গেছি, কিন্তু কখনোই একরকম মনে হয়নি। এটা প্যারিসের সত্যিকারের প্রতীক’।

বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া

প্রাচীন এই স্থাপনায় আগুনের ঘটনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পরামর্শ দিয়েছেন যে, ‘সম্ভবত উড়ন্ত জল-কামান’ এই আগুন নেভাতে কার্যকর হতে পারে। জার্মান চ্যাঞ্চেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল ফ্রান্সের জনগণের প্রতি তার সমর্থনের কথা জানিয়েছেন এবং নটরডেমকে ‘ফ্রান্স এবং ইউরোপীয় সংস্কৃতির প্রতীক’ বলে অভিহিত করেছেন।

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে এক টুইটে লিখেছেন, ‘ফ্রান্সের জনগণের সঙ্গে এবং জরুরি পরিষেবাগুলির সঙ্গে যারা নটরডেম ক্যাথেড্রালে ভয়ানক অগ্নিকাণ্ডের বিরুদ্ধে লড়াই করছে আজ রাতে তাদের প্রতি আমার সমবেদনা’।

ভ্যাটিক্যান থেকে বলা হচ্ছে, এই অগ্নিকাণ্ডের খবর তাদের শোকাহত এবং ব্যথিত করেছে এবং তারা ফরাসি ফায়ার সার্ভিসের জন্য প্রার্থনা করছে।

ঢাকা টাইমস/১৬এপ্রিল/একে