বিবিএসকে বাংলায় প্রতিবেদন প্রকাশের পরামর্শ পরিকল্পনামন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৬ এপ্রিল ২০১৯, ২২:৩৮

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মূল প্রতিবেদন বাংলায় প্রকাশ করার পরামর্শ দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিবিএসের কর্কমর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা কাজ করলেন বাংলায়, ছাপালেন ইংরেজিতে। কিন্তু বেশি প্রয়োজন বাংলায় করা। এতে যাদের জন্য প্রতিবেদন করা হয়েছে তারা সহজে বুঝতে পারবে।’

মঙ্গলবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বিবিএসের‘তাঁত শুমারি ২০১৮’-এর প্রাথমিক প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস ভবনে এ অনুষ্ঠান হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী, বিবিএসের মহাপরিচালক ড. কৃষ্ণা গায়েন। তাঁত শুরমারির প্রতিবেদটি ‘ PRELIMINARY REPORT HANDLOOM CENSUS 2018’ শিরোনামে ইংরেজিতে বই আকারে প্রকাশ করা হয়।

পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ কররেন বাংলায়, লিখলেন বাংলায়, কিন্তু ছাপলেন ইংরেজিতে। কিন্তু বেশি প্রয়োজন বাংলা। এতে সবাই বুঝবে, তাঁতীরাও সহজে বুঝবে। বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিও করা যায় কিন্তু বাংলাটা বেশি প্রয়োজন। এটা নিয়ে বোধহয় চিন্তা করা দরকার।’

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৮ বছরের ব্যবধানে সাত লাখ ২৫ হাজার ৬৫০ জন তাঁতীর সংখ্যা কমেছে। আর এই সময়ে তাঁত ইউনিটের সংখ্যা কমেছে ৯৬ হাজার ৪১৫টি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে এম এ মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান তাঁতশিল্পসহ আমাদের যে পণ্য আছে এসব যেন আরও উন্নয়ন করি। তিনি এগুলোর জন্য গবেষণার জন্য বলেন। তিনি বলেন, যেটা আমি এখানে শুনলাম, তাঁত বোধহয় ধীরে ধীরে সংকুচিত হচ্ছে। এটা কোনো আবেগের বিষয় নয়, এটা রুক্ষ্ম বাস্তবতা। সংকুচিত হবেই। যান্ত্রিকীকরণের ফলে এটা হচ্ছে।’

পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী বলেন, তাঁতশিল্পের বিকাশের জন্য একনেকে একটা তাঁত পল্লী করার জন্য প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। পদ্মার পাড়ে হবে এ পল্লী। এ শিল্প রক্ষা করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে এ পেশা ধরে রেখেছে।

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিবিএস মহাপরিচালক ড. কৃষ্ণা গায়েন। তিনিও প্রতিবেদন বাংলায় হওয়া দরকার বলে মত দেন। বলেন, ‘তাঁত শুমারির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে এই খাতের বর্তমান অবস্থার মূল্যায়ন করা, কার্যকর ও অকার্যকর তাঁতখানা সনাক্ত করা। তাঁতি ও স্বজাতীয় কর্মীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা নির্ধারণ করা। আমি আশা করব, এই শুমারির তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড এই খাতের উন্নয়নের জন্য নীতিমালা ও কার্যক্রম প্রণয়ন করতে সহায়ক হবে। তাঁতীরাসহ ব্যবসায়ীরাও প্রয়োজনীয় তথ্য পাবে।’

হ্রাস পাচ্ছে তাঁতশিল্প

প্রতিবেদনে জানানো হয়, দিনে দিনে হ্রাস পাচ্ছে তাঁত শিল্প। ২০১৮ সাল থেকে ২০০৩ এবং ১৯৯০ সালে এ হার যথাক্রমে ৩৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ, ৪৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, তাঁত পেশায় আয় কম, হস্তশিল্প থেকে যান্ত্রিক শিল্পের পরিবর্তন, পর্যাপ্ত মূলধনের অভাব, তাঁত শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকের অভাব, বাজারজাতকরণের সমস্যা ইত্যাদি কারণে তাঁত শিল্প দিন দিন কমছে বলে প্রতিবেদেন উল্লেখ করা হয়।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ১৯৯০ প্রথম তাঁত শুমারি প্রথম হয়। এরপর হয় ২০০৩ সালে। তৃতীয়বারের মতো তাঁত শুমারি হচ্ছে ২০১৮-তে। ২০১৮ সালের তাঁত শুমারির তুলনামূলক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৯৯০ সালে ১০ লাখ ২৭ হাজার ৪০৭ জন তাঁতি ছিল। এর মধ্যে পুরুষের পরিমাণ ছিল পাঁচ লাখ ৭১ হাজার ৭৬৫ জন (৫৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ)। আর নারী ছিল চার লাখ ৫৫ হাজার ৬৪২ জন, অর্থাৎ ৪৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

২০০৩ সালে আট লাখ ৮৮ হাজার ১১৫ জন তাঁতি ছিলেন। এর মধ্যে পুরুষ চার লাখ ৭২ হাজার ৩৬৭ জন, যা ৫৩ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং নারীর সংখ্যা চার লাখ ১৫ হাজার ৭৪৮ জন, যা ৪৬ দশমিক ৮১ শতাংশ।

২০১৮ সালে প্রতিবেদন থেকে বলা হয়েছে, তিন লাখ এক হাজার ৭৫৭ জন তাঁতি রয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা এক লাখ ৩৩ হাজার ৪৪৪ জন, যা পরিমাণ ৪৪ দশমিক ২২ শতাংশ এবং নারীর সংখ্যা এক লাখ ৬৮ হাজার ৩১৩ জন, যার পরিমাণ ৫৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

১৯৯০ ও ২০০৩ সালের তাঁত শুমারিতে পুরুষ তাঁতির সংখ্যা বেশি থাকলেও ২০১৮ সালের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, নারী তাঁতির সংখ্যা পুরুষের চেয়ে বেশি।

অন্যদিকে ১৯৯০ সালে কারখানা/ শিল্প প্রতিষ্ঠান ও খানাভিত্তিক তাঁত ইউনিট ছিল দুই লাখ ১২ হাজার ৪১২টি। ২০০৩ সালে তাঁত ইউনিট কমে দাঁড়ায় এক লাখ ৮৩ হাজার ৫১২টি। এর মধ্যে কারখানা/ শিল্প প্রতিষ্ঠান ইউনিট ১২ হাজার ৮১৯টি এবং খানাভিত্তিক এক লাখ ৭০ হাজার ৬৯৩টি। ২০১৮ সালে আরও কমে মোট তাঁত ইউনিট কমে দাঁড়ায় এক লাখ ১৬ হাজার ছয়টি। এর মধ্যে কারখানা/ শিল্প প্রতিষ্ঠান ৫৮১টি এবং খানাভিত্তিক এক লাখ ১৫ হাজার ৪২৫টি।

প্রকল্পের প্রজেক্ট ডিরেক্টর মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তাঁত শুমারি ২০১৭ প্রকল্পটি ‘২০১৭ সালের জুলাইয়ে শুরুতে একনেকে পাস হয়। কিন্তু কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে তাই প্রতিবেদনের নাম দেয়া হয়েছে তাঁত শুমারি ২০১৮। এ প্রকল্প শেষ হবে চলতি বছরের জুনে। সরকারি অর্থায়নে এই প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে সাত কোটি ৬৬ লাখ টাকা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

প্রকল্প পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগে তাঁত শিল্পের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই দুই বিভাগে দেশের মোট তাঁত ইউনিটের মধ্যে ৭৩ দশমিক ১০ শতাংশ। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম বিভাগে এই হার ৫৬ দশমিক ২০ শতাংশ। সেই সঙ্গে শহর অঞ্চলের তুলনায় গ্রামে তাঁত ইউনিটের সংখ্যা অনেক বেশি। শহরে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং পল্লী এলাকায় ৮৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ। মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তাঁত শিল্পের আর্থ সামাজিক চিত্রও পাওয়া যাবে।

(ঢাকাটাইমস/১৬এপ্রিল/জেআর/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :