৩০ বছর ধরে শিকলবন্দি!

আরাফাত রায়হান সাকিব, মুন্সীগঞ্জ
 | প্রকাশিত : ১৭ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:০৮

মাত্র ৬৪ বর্গফুট ঘরে ৩০ বছর ধরে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে রামকৃষ্ণ সাহা রমাকে। ৫৫ বছরের এই বৃদ্ধকে দিনে দুবার অস্বাস্থ্যকর খাবার দেওয়া হয় আর ড্রামের ময়লা-আবর্জনাযুক্ত পানি পান করতে হচ্ছে তাকে। বিদ্যুৎবিহীন অন্ধকার দুর্গন্ধময় ঘরের ভেতর গর্তে প্রস্রাব ও খোলা জানালা দিয়ে ঘরের পেছনের অংশে পায়খানার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তার জন্য।

সম্পূর্ণ সুস্থ ও সঠিকভাবে কথা বলতে পারলেও ‘পাগল’ আখ্যা দিয়ে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ। এমনকি গত তিন দশকে তাকে দেওয়া হয়নি কোনো চিকিৎসা।

মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম পৌরসভার রামগোপালপুর এলাকার এই বৃদ্ধের সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে তার পরিবারের স্বজনেরাই এমন অমানবিক কাজ করে আসছেন বলে অভিযোগ এলাকার লোকজনের। রামকৃষ্ণ নিজেও একই অভিযোগ তুলেছেন।

স্থানীয় সূত্রের অভিযোগ, মিরকাদিমের দুধপট্টি এলাকার প্রয়াত গৌরাঙ্গ সাহার ছেলে রামকৃষ্ণ সাহা রমাকে তার আপন ছোট ভাই গনাই সাহা ৩০ বছর আগে ঘরে শিকলবন্দি করেন। পাঁচ বছর আগে গনাই মারা গেলেও শিকলমুক্ত হতে পারেননি রামকৃষ্ণ। গনাইয়ের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী মনি রানী সাহা ও তার সন্তানেরা এখনো তাকে ছোট অন্ধকার খুপড়ি ঘরটিতে আটকে রেখেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দোচালা টিনের ঘরে ৮ ফুট বাই ৮ ফুট ঘরটিতে ছোট্ট একটি কাঠের চৌকি। তার ওপরে শিকলবন্দি অবস্থায় বসে আছেন সুঠাম দেহের রামকৃষ্ণ। সব কথাই স্পষ্ট স্বরে ও সঠিকভাবে বলতে পারেন তিনি। চোখে-মুখে তার মুক্ত হওয়ার আকুতি। ঘরের এক কোণে বড় একটি গর্ত, সেখানেই প্র¯্রাবের ব্যবস্থা। আর খোলা জানালা দিয়ে ঘরের পেছনের অংশে পায়খানা করেন। ঘরটিতে নেই কোনো বিদ্যুৎ, চারদিকে দুর্গন্ধ। ড্রামে রাখা ময়লা-আবর্জনাযুক্ত পানি পান করতে হয় তাকে। খাবার মেলে দিনে দুবার, স্থানীয় লোকজনও মাঝে মাঝে তাকে খাবার কিনে দেন।

এভাবে ৩০ বছর ধরে চলা বন্দি জীবনে সংসার পাতাও হয়নি রামকৃষ্ণের। পরিবারের লোকজন তাকে ‘পাগল’ দাবি করে শিকলবন্দি করে রাখলেও কোনোদিন চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থা নেননি।

রামকৃষ্ণ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বরিশাল থেকে চাল-ডাল এনে মিরকাদিম বন্দরে বিক্রি করতাম। ব্যবসাও ভালো চলছিল। জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে নিয়মিত সম্পৃক্ত ছিলাম। পৈতৃক সম্পত্তি একা ভোগ করতে ছোট ভাই আমাকে শিকলে বেঁধে রেখেছে। বিয়ে করিনি, সংসার নেই আমার। আমার সম্পদ নেবে, নিয়ে যাক। এভাবে আমাকে আটকে রেখেছে কেন? ছেড়ে দিক, আমি কাজ করে নিজের পেট চালাব।’

ছোট ভাই প্রয়াত গনাই সাহার স্ত্রী মনি রানী সাহা দাবি করেন, ‘৩০ বছর আগে বরিশাল ব্যবসা করতে গিয়েছিলেন। তখন তাকে কারা যেন অনেক মারধর করে। এতে তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ ও পাগল হয়ে যান। তারপর থেকে তাকে এভাবে শিকলে আটকে রাখা হচ্ছে। ছেড়ে দিলে এলাকার লোকদের মারধর করেন। তাই বাধ্য হয়ে এটা করা হচ্ছে।’

তবে মনি স্বীকার করেন, তাকে আজ পর্যন্ত কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এখন তিনি সুস্থ আছেন।

স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর আমির হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘এটা অমানবিক ঘটনা। একজন সুস্থ মানুষকেও যদি এভাবে শিকলবন্দি রাখা হয়, তাহলে তিনি পাগল হয়ে যাবেন।’

মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর আলমেরও সন্দেহ- রামকৃষ্ণ শিক্ষিত, তার সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে তাকে ‘পাগল’ বানিয়ে রাখা হতে পারে। দ্রুত তাকে মুক্ত করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক আহাম্মেদ বলেন, ‘বিষয়টি জানলাম, খুবই অমানবিক। আমি দ্রুত খোঁজ নিয়ে দেখব। এমন হয়ে থাকলে প্রচলিত আইনে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি রামকৃষ্ণের পুনর্বাসনের যাবতীয় ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।’

(ঢাকাটাইমস/১৭এপ্রিল/প্রতিবেদক/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :