বিলুপ্তির পথে চাঁদপুরের লবণশিল্প

শরীফুল ইসলাম, চাঁদপুর, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০১৯, ১০:২০ | প্রকাশিত : ১৭ এপ্রিল ২০১৯, ১০:১০

আর্থিক ক্ষতি আর প্রয়োজনীয় পুঁজির অভাবে বিলুপ্তির পথে চাঁদপুরের লবণশিল্প। এক সময়কার ৪০টি লবণমিলের মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ৩৬টিই। বর্তমানে চারটি মিল সচল থাকলেও মাত্র দুটিতে লবণ উৎপাদিত হয়। বাকি দুটি চলছে নামমাত্র।

মালিকরা লবণশিল্প বিলুপ্তির পেছনে উৎপাদন ব্যয় বাড়াসহ নানা সীমাবদ্ধতাকে দায়ী করছেন। তবে উন্নত প্রযুক্তিতে তৈরি লবণের সঙ্গে দেশি এনালগ পদ্ধতির এ শিল্প টিকে থাকতে ব্যর্থ হচ্ছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

যোগাযোগের সুবিধা ও কাঁচামালের সহজলভ্যতার কারণে চাঁদপুরের পুরানবাজার এলাকার ডাকাতিয়া নদীর তীরে পাকিস্তান আমলে গড়ে উঠেছিল এই লবণশিল্প। তখন দেশি পদ্ধতিতে তৈরি এই লবণের চাহিদা ছিল জেলাজুড়ে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লবণ উ’পাদন ডিজিটালাইজড হলেও চাঁদপুরের কারখানাগুলো এখনো রয়ে গেছে এনালগ পদ্ধতিতেই। ফলে এ শিল্পে ভাটা পড়তে থাকে।

অন্যদিকে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলেও উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় দিনের পর দিন আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে অনেকটা বাধ্য হয়েই লবণমিলগুলো একে একে বন্ধ করে দেন মালিকরা। ‘এসআইপি’ (সল্ট আয়োডাইজেশন প্লান্ট) না থাকায় বাতিল করা হয় কয়েকটি লবণমিলের নিবন্ধন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ২০-২৫টি লবণমিলের বর্তমানে কোনো চিহ্নমাত্র নেই। কোনো কোনো মিলের জায়গায় তৈরি হয়েছে বড় ইমারত। আবার কোনোটিতে লবণের পরিবর্তে গড়ে উঠেছে রাইসমিল।

লবণশিল্পে জড়িত ব্যবসায়ীরা জানান, পদ্মা সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ, আয়োডাইজড সল্ট মিলস, মুনলাইট সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ, ইসলামিয়া সল্ট মিলস, জালালাবাদ সল্ট মিলস, সীমা সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ, রিয়াদ সল্ট ফ্যাক্টরি, নবারুণ সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজসহ বন্ধ হয়ে গেছে ৩৬টি কারখানা। তবে এতো প্রতিকূলতার মাঝেও বিসমিল্লাহ প্লাস সল্ট ফ্যাক্টরি ও জনতা সল্ট মিলস টিকে আছে।

তাদের দাবি, চাষিদের কাছ থেকে কাঁচামাল কিনে চট্টগ্রাম থেকে ট্রলারযোগে চাঁদপুরে আনতে অনেক খরচ পড়ে। আয়োডিনের মূল্য বৃদ্ধি ও পুঁজির অভাবে মিলগুলো আধুনিকায়ন করতে না পারায় যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যবসা চালানো তাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এতে করে লাভের চেয়ে লোকসানই গুণতে হয় বেশি।

ব্যবসায়ীরা আরও বলছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। ব্যাংকে আবেদন জানালেও কোনো ঋণ সুবিধা পাচ্ছেন না। প্রয়োজনীয় সরকারি সহযোগিতাও পাওয়া যাচ্ছে না।

এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে ব্যাংকঋণের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সরকারি ভর্তুকিও দাবি করেন লবণ ব্যবসায়ীরা।

জনতা সল্ট মিলে কর্মরত কয়েকজন শ্রমিক বলেন, ‘চাঁদপুরের লবণশিল্প ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় আমাদের এখন সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। অনেকেই কর্মহারা হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আমরাও আতঙ্কে আছি, কখন আমাদের লবণমিলটিও বন্ধ হয়ে যায়।’

এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারের হস্তক্ষেপ ও এই শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিও জানান তারা।

বিসমিল্লাহ প্লাস সল্ট ফ্যাক্টরির মালিক মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘চাঁদপুরের লবণশিল্প মৃতপ্রায়। নানা সীমাবদ্ধতায় এর জৌলুস অনেক আগেই হারিয়ে গেছে। এখন যে কয়েকটি লবণমিল টিকে রয়েছে, সেগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য।’

‘যদি ভর্তুকি ও ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়, তবে আমরা লবণশিল্প নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবো। না হলে যে কয়েকটি টিকে রয়েছে, সেগুলোও অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। লবণশিল্প বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের কার্যকর ভূমিকার দাবি জানাচ্ছি।’

চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম বলেন, ‘একটা সময় চাঁদপুরে জমজমাট লবণ ব্যবসা ছিল। যোগাযোগ ও বিভিন্ন সুবিধার কারণে এখানে ৪০টি কারখানা গড়ে ওঠে। এসব ফ্যাক্টরিতে কাজ করে হাজার হাজার শ্রমিক তাদের সংসার চালাতেন। কিন্তু বর্তমানে মালামালের মূল্যবৃদ্ধি ও ব্যবসায়ীরা ঋণ সুবিধা না পাওয়ায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এই শিল্প। শ্রমিকরা বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। লবণশিল্পে যদি ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। নয়তো এই শিল্প টিকে থাকবে না।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :