মাটির দেয়ালে গাঁথা বাংলাঘর

প্রকাশ | ১৭ এপ্রিল ২০১৯, ১০:৪৭

এম. বেলাল হোসাইন
ঢাকাটাইমস

মাটির দেয়ালে গাঁথা জোড়া বাংলাঘর এখন আর দেখা মেলে না। দেখা মেলে না গোলপাতায় কিংবা খড়ে ছাউনি দেওয়া মাটির ঘর। বাড়ির সামনে সেই বৈঠকখানা বা দহলিজও এখন বিলুপ্ত। চিরচেনা গ্রামও এখন অচেনা লাগে। শান্তির নীড় মাটির ঘরের স্থান দখল করেছে ইট-পাথরের দালান। 

গরিবের এসি মাটির দেয়ালে গাঁথা বাংলাঘর এখন বিলুপ্তির পথে। সাতচালা কিংবা আটচালা মাটির বাংলাঘর এখন আর নজরে পড়ে না। গ্রামে সম্ভ্রান্ত পরিবারের সেই দহলিজও এখন দেখা যায় না। অথচ এই দহলিজে এক সময় বসতো গ্রামের মানুষের আড্ডা। বিনোদন আর গল্পের আসর বসতো বৈঠকখানায়। গ্রামের সাধারণ মানুষ তাদের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, মান-অভিমান, আনন্দ-বেদনা প্রকাশ করতো এ দহলিজে বসে। হুকোয় টান দিয়ে জমিয়ে আড্ডা দিতেন মোড়ল কিংবা মাতব্বররা দহলিজে। সেই হুকাও নেই, সেই দহলিজও নেই।

আধুনিকতার ছোঁয়া আর কালের আবর্তে গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। ঝড়-বৃষ্টি থেকে বাঁচার পাশাপাশি তীব্র গরম ও কনকনে শীতে আদর্শ বসবাস-উপযোগী মাটির তৈরি এসব ঘর আগের মতো এখন আর তেমন একটা নজরে পড়ে না।

জানা যায়, আশির দশকেও গ্রামে কাঁচা ঘরবাড়ি দেখা যেত। নব্বইয়ের দশকেও অতীতের সাক্ষী হিসেবে গ্রামে দেখা যেত জোড় বাংলাঘর।

সাতক্ষীরা জেলার ৭৮টি ইউনিয়নের প্রত্যেক গ্রামে মাটির তৈরি ঘর ছিল গরিবের এসি। ইট-পাথরের তৈরি পাকা দালানের সংখ্যা ছিল গ্রামে হাতেগোনা। সেই দিন বদলে গেছে। এখন হাতেগোনা দু-একটি মাটির ঘর দেখা যায়। অধিকাংশ বাড়ি এখন ইট-পাথরের তৈরি।

এঁটেল মাটি কাদায় পরিণত করে দুই-তিন ফুট চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হতো। ১০-১৫ ফুট উঁচু দেয়ালের ওপর কাঠ বা বাঁশের চাল তৈরি করে খড়-কুটা, গোলপাতা, টালী অথবা ঢেউটিন দিয়ে ছাওয়া হতো। 

মাটি কুপিয়ে ও পানি দিয়ে কাদায় পরিণত করার পদ্ধতিকে জাব বলা হয়। জাব কেটে তা সুচারুভাবে গেঁথে ভাজে ভাজে তৈরি করতে হয় দেয়াল। দেয়ালের একেকটি ভাজের পুরুত্ব তিন থেকে চার ফুট। এভাবে পাঁচ থেকে ছয়টি ভাজ শেষ হওয়ার পর দেয়ালের উচ্চতা দাঁড়ায় ১৫-১৮ ফুট। যিনি মাটির চাপ গেঁথে দেয়াল ও বাঁশ দিয়ে চাল তৈরি করেন তাকে ঘরামি বলা হয়। ঘরের বারান্দা ও চালের ধরনের ওপর ভিত্তি করে ঘর বিভিন্নভাবে হয়। চারপাশে বারান্দাবিশিষ্ট ঘরকে আটচালা এবং তিনপাশে বারান্দাবিশিষ্ট ঘরকে সাতচালা ঘর বলা হয়। গৃহিণীরা মাটির দেয়ালে বিভিন্ন রকমের আলপনা এঁকে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতেন। শৈল্পিক আলপনায় ফুটে উঠতো নিপুণ কারুকার্য।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বর্ষা মৌসুমে মাটির ঘরের ক্ষতি হয় বলে ইট-সিমেন্টের ঘর নির্মাণে এখন উৎসাহী হচ্ছে মানুষ। এক সময় সাতক্ষীরার বিভিন্ন গ্রামে অনেক পরিবার মাটির ঘরে বাস করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করলেও প্রবল বর্ষণে মাটির ঘরের ক্ষতি হয় বলে এখন কাঁচাঘর ফেলে পাকাঘর নির্মাণে ঝুঁকছেন বেশি।

ভূমিকম্প বা বন্যা না হলে একটি মাটির ঘর শত বছরেরও বেশি স্থায়ী হয়। কিন্তু কালের আবর্তে দালানকোঠা আর অট্টালিকার কাছে হার মানছে মাটির ঘর।

(ঢাকাটাইমস/১৭এপ্রিল/এজেড)