চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে পানির জন্য হাহাকার

প্রকাশ | ১৭ এপ্রিল ২০১৯, ১৮:০২

শওকত আলী, চাঁদপুর, ঢাকা টাইমস

২৫০ শয্যার চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের পানিতে আঁশটে গন্ধ। আয়রন এতো বেশি থাকে যে, তা পুরোপুরি পানের অনুপযোগী। ফলে রোগীরা পান না পানীয় জল।

প্রতিদিন সূর্যোদয়ের পর রোগী ও রোগীর স্বজনদের হাসপাতাল থেকে বের হতে হচ্ছে বিশুদ্ধ খাবার পানির খোঁজে। এদিকে ভোরে দোকানপাট বন্ধ থাকায় বোতলজাত মিনারেল ওয়াটারও সংগ্রহ করতে পারছেন না। তাদের হন্যে হয়ে পানি খুঁজতে থাকার বড়ই কষ্টদায়ক দৃশ্যটি এতো বড় হাসপাতালের অসহায়ত্বকেই প্রকাশ করে বলে মন্তব্য করেছেন শহরের সুশীলজনেরা।

জেলার সবচেয়ে বড় সরকারি এ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ২৪ ঘণ্টাই খোলা রেখে এবং বহির্বিভাগ (আউটডোর) ও অন্ত:বিভাগে (ইনডোর) রোগীদের সব ধরনের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। আউটডোরে গড়ে প্রতিদিন এক হাজারের বেশি রোগী স্বাস্থ্যসেবা নেন এবং ইনডোরে গড়ে তিন শতাধিক রোগী ভর্তি  থাকেন। এ হাসপাতালে চিকিৎসকসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী সংকটের চেয়েও প্রকট আকার ধারণ করেছে পানীয় জল তথা খাবার পানির সংকট।

চাঁদপুর রোটারি ক্লাব ও চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি এবং জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, `হাসপাতালটি এতো বড় হওয়া সত্তে¡ও রোগী ও স্বজনদের জন্যে নেই সামান্য খাবার পানি। হাসপাতালের গভীর নলকূপ থেকে টয়লেটে ও বেসিনে যে পানি সরবরাহ করা হয়, তাতে আঁশটে গন্ধের আয়রন এতো বেশি থাকে যে, তা মুখে নেওয়ার রুচি কারোই হয় না।‘

প্রতিদিন রোগীর স্বজনদের ছোটাছুটির দৃশ্যের প্রত্যক্ষদর্শী সুভাষ চন্দ্র রায় বলেন, `আমি প্রতিদিন রুটিন প্রাতঃভ্রমণ করতে গিয়ে খাবার পানির জন্য রোগী ও তাদের স্বজনদের ইতস্তত-বিক্ষিপ্ত ঘোরাফেরা করতে দেখি। কখনো পৌর পাঠাগার, প্রেসক্লাব বা অন্য কোনো স্থান থেকে রোগীদের পানি সংগ্রহে সহযোগিতা করে থাকি। দীর্ঘদিন আমাদের রোটারি ভবন থেকে খাবার পানি সরবরাহের ব্যবস্থা ছিলো। কিন্ত মাদকাসক্ত বা চোরদের কল চুরি করে নেওয়া এবং পানি সংগ্রহকারীদের কল খুলে রেখে পানির ব্যাপক অপচয় করার কারণে অনিবার্য কারণে সে ব্যবস্থা বন্ধ করে দিতে হয়েছে।`

তার মতে, ডাকাতিয়া নদীর তীরে চাঁদপুর পৌরসভার আর্সেনিকমুক্ত দুটি সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট চালুর পর প্রতিদিন যে পানি উৎপাদিত হয়, তা থাকে উদ্বৃত্ত। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পৌরসভার সঙ্গে যোগাযোগ করলেই বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দূর করা খুব কষ্টকর হবে বলে মনে হয় না।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আনোয়ারুল আজিম জানান, হাসপাতালের পানির সমস্যার সমাধান হতে যাচ্ছে। বুধবারের আইন-শৃঙ্খলা সভায় চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র নাছির উদ্দিন আহম্মেদ পৌরসভা থেকে পানি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

হাসপাতালের হেডক্লার্ক মো. সফিউল আলম বলেন, `আমাদের পানি আছে, তবে ভালো ও খাবার পানি নেই। দুটি বড় ডিপ টিউবয়েল রয়েছে। সেগুলোর পানি আয়রন ও লবণযুক্ত বলে লাল হয়ে যায়। পৌরসভার লোকজন এসে দেখে গেছেন। তবে তাদের পানির লাইন আমাদের এখনও দেওয়া হয়নি।`

(ঢাকাটাইমস/১৭এপ্রিল/প্রতিবেদক/এআর)