`শিশুসাহিত্যের পরশে স্বপ্নময় জীবন গড়বে নতুন প্রজন্ম`

প্রকাশ | ১৮ এপ্রিল ২০১৯, ২১:২১ | আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৯, ২২:০৪

ঢাকা টাইমস ডেস্ক

শিশুমনে স্বপ্ন জাগিয়ে তোলে, বড় ও ভালো মানুষ হওয়ার প্রেরণা যোগায় শিশুসাহিত্য। কেননা, তাদের জন্য লেখা রুপকথা, গল্প, ছড়া-কবিতা, উপন্যাসসহ নানা শাখার কাহিনীচিত্র এবং ইতিহাস-জীবনীগ্রন্থ ছোটদের চোখ খুলে দেয়। সেগুলোর চরিত্র ও গল্পশৈলী ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তোলে।

সারা পৃথিবীতে তাই শিশুসাহিত্যের মর্যাদা সবচেয়ে বেশি বলে মন্তব্য করেছেন দেশবরেণ্য ও আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন শিশুসাহিত্যিক আলী ইমাম।

বৃহস্পতিবার আবু হাসান শাহীন স্মৃতি শিশুসাহিত্য পুরস্কার-২০১৯ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই মিডিয়াব্যক্তিত্ব আরও বলেন, বাংলা ভাষার শিশু ও কিশোরসাহিত্য অনেক বেশি সমৃদ্ধ। সাম্প্রতিককালে বৈচিত্র্যমণ্ডিত লিখনশৈলী, অলঙ্করণ ও উন্নতমানের প্রকাশনা দিয়ে এ ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে গেছে। ডিজিটালাইজেশন ও প্রযুক্তির উন্নয়ন এ দেশের শিশু-কিশোরদের স্বপ্ন দেখতে দিচ্ছে না, স্বপ্নহীন হয়ে গড়ে উঠছে তারা। সে মুহূর্তে এই শিশুসাহিত্যের পরশে পাল্টে দেবে তাদের জীবন।

চারপাশে অমানুষদের আধিক্যে এইসব গল্প-ছড়া-রুপকথার বইই ছোটদের বড় করে গড়ে তুলবে। সে লক্ষ্যে শিশু প্রকাশনা ও শিশু সংগঠনগুলোকে আরও সমৃদ্ধ করতে সকলকে এগিয়ে আসা এবং এ বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দাবি করেন তিনি।  

ছোটদের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ছোটদের মেলার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এবং ছোটদের পত্রিকার সম্পাদক-প্রকাশক অকালপ্রয়াত আবু হাসান শাহীন স্মরণে গত বছর থেকে শিশুসাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় এ পুরস্কার দিচ্ছে ছোটদের আরেকটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সপ্তডিঙা। এবারের আবু হাসান শাহীন স্মৃতি শিশুসাহিত্য পুরস্কার পান ছয়জন।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি শিশুসাহিত্যিক আমীরুল ইসলাম বলেন, শাহীন তার স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। তাই তাকে বাঁচিয়ে রাখতে তার কাজগুলোকে প্রচার-প্রকাশ করতে হবে।এজন্য ছোটদের পত্রিকার প্রকাশিত সবগুলো সংখ্যা একটি মলাটে পুনর্প্রকাশ করা হবে বলেও জানান তিনি।

কর্মজীবনে আবু হাসান শাহীন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম, দৈনিক ভোরের কাগজ ও বাংলাদেশ সময়ে সহ সম্পাদক হিসেবে সাংবাদিকতা করেছেন। শিশু সংগঠক শাহীন ছিলেন খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটি ও ঢাকা মহানগর কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক। মাত্র ৩৯ বছর বয়সে ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তার। 

অনুষ্ঠানের সভাপতি শিশুসাহিত্যিক আসলাম সানী, অন্য বিশেষ অতিথি শিশুসাহিত্যিক সুজন বড়ুয়া এবং আলোচক বাংলাদেশ শিশুসাহিত্যিক ফোরামের সভাপতি শিশুসাহিত্যিক-প্রকাশক হুমায়ূন কবীর ঢালী, সাংবাদিক অশোকেশ রায় ও শিশুসাহিত্যিক অরুণ কুমার বিশ্বাস জানান,  আবু হাসান শাহীন তার অল্প বয়সেই বেশকিছু মানসম্মত প্রকাশনা ও ছোটদের পত্রিকা দিয়ে শিশুসাহিত্যকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আদর্শিক এই শিশু সংগঠক এর মাধ্যমে ও তার কাজে-কর্মে এবং স্বপ্ন দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তবুদ্ধির চেতনায় শিশুদের গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।

আলোচকরা আরও বলেন, অপরিসীম কষ্ট সহ্য করেও নিজের কর্মসাধনা, কঠোর পরিশ্রম ও ত্যাগ দিয়ে শিশুসাহিত্য ও ছোটদের পত্রিকা প্রকাশনা এবং শিশু সংগঠন পরিচালনায় অনেক উত্তরসূরী তৈরি করেছেন আবু হাসান শাহীন। দেশবরেণ্য ও খ্যাতিমানদের দিয়ে কালজয়ী লেখা লিখিয়ে ও সেগুলো প্রকাশ করে নিস্বার্থ সমাজহিতৈষীর ভূমিকায় ছিলেন তিনি। তার দেখানো পথে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই এখন ছোটদের সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে উন্নতমানের কাজ করে দেশ-জাতি-সমাজকে অনেক ভালো কিছু দিচ্ছেন।

শাহীনের স্ত্রী ইশরাত ইভা ও ছোট ভাই জুয়েল আহসান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এই দুই শিশুসাহিত্যকর্মীই এখন ছোটদের মেলা ও ছোটদের পত্রিকার দায়িত্ব পালন করে শাহীনের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।

এ বছরের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত ছয়টি শাখায় ছয়টি সেরা বইয়ের জন্য পুরস্কার হিসেবে অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে তুলে দেওয়া হয় শিশুসাহিত্য স্মারক, অভিজ্ঞানপত্র এবং নগদ অর্থমূল্য।

ছড়া-কবিতায় মানজুর মুহাম্মদ বোনের চিঠি, গল্পে মামুন সারওয়ার কবি মামা ও অন্যান্য গল্প, কিশোর উপন্যাসে স ম শামসুল আলম গল্পের গাড়ি মিরধা ভাই, , মুক্তিযুদ্ধে আহমেদ রিয়াজ একাত্তরের কমলপ্রভা), রূপকথায় রিফাত কামাল সাইফ ছোট্ট পরি ও অন্যান্য গল্প এবং অনুবাদে ইফতেখার শিবলী নেফারতিতি গ্রন্থের জন্য পুরস্কার গ্রহণ করে অনুষ্ঠানে অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

আবু হাসান শাহীন স্মৃতি শিশুসাহিত্য পুরস্কার-২০১৯ এর আহ্বায়ক মঈন মুরসালিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সপ্তডিঙ্গার সত্ত্বাধিকারী শিশুসাহিত্যিক নাফে নজরুল।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে এ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে কেক কেটে শিশুসাহিত্যিক সুজন বড়ুয়ার জন্মদিনও পালিত হয়।

(ঢাকাটাইমস/১৮এপ্রিল/এআর)