বছরে ৩৩২ কোটি টাকা ফুটানোর খরচ

শতভাগ বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নিন

প্রকাশ | ১৯ এপ্রিল ২০১৯, ১৬:০৫

আরিফুর রহমান

ঢাকা ওয়াসার ৯১ শতাংশ গ্রাহক পানি ফুটিয়ে পান করেন। তাতে  বছরে বাসাবাড়িতে ৩৬ কোটি ৫৭ লাখ ৩৭ হাজার ঘনমিটার গ্যাস পুড়ছে। গ্যাসের বর্তমান দর অনুযায়ী জ্বালানি বাবদ ব্যয় হচ্ছে বছরে ৩৩২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

রাজধানীর নাগরিকদের পানি সরবরাহের সরকারি প্রতিষ্ঠানটির সেবা নিয়ে দুর্নীতিবিরোধী বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ওয়াসার ১০টি জোনের ২ হাজার ৭৬৮ জন ওয়াসার সংযোগ গ্রহণকারী থেকে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।

প্রতিবেদনে চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকৃতির গ্রাহকদের পানি পাওয়ার হার, বস্তি এলাকার পানিবঞ্চনা, ওয়াসার সেবার মান ইত্যাদি নিয়েও পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়।
এসব বিষয়ে পত্রিকার প্রতিবেদনে বিস্তারিত এসেছে। আমরা এখানে সেসব বিষয়ে আলোকপাত করছি না। শুধু একটি দিকে বিশেষ নজর চাই আমরা।

এশিয়ার কোনো দেশে পানি ফুটিয়ে পান করা হয় না। এমন একটি তথ্য উঠে এসেছে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানের ভাষ্যে। আমরা কেন তা পারছি না। এ বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা দরকার।

আমাদের রাজধানী শহরে প্রায় সবাইকে পানি ফুটিয়ে পান করতে হয়। নাগরিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন সরকারি সংস্থাও প্রতিনিয়ত সচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জনগণকে উৎসাহিত করে পানি ফুটিয়ে পান করার জন্য। এটি অবশ্যই ইতিবাচক একটা দিক। এর মধ্য দিয়ে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগবালাই থেকে আমরা মুক্ত থাকছি।

কিন্তু ক্রমশ কমে আসা গ্যাসের ওপর যে এর একটা চাপ পড়ছে সেটি আমাদের বোধে হয়তো আসেনি। টিআইবি এক বছরের যে হিসাব দিয়েছে, তাতে বিগত সময়ে আমরা কত হাজার হাজার কোটি টাকার গ্যাস অপচয় করেছি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।  যদি পানি না ফুটিয়ে পান করতে পারতাম তা হলে গ্যাসের মজুদ আরও কিছু বেশি থাকত নিঃসন্দেহে।

আমরা হাজার কোটি টাকা খরচ করে পানি শোধনাগার করছি, বিশুদ্ধ পানি উৎপাদনে আছে বড় অঙ্কের খরচ। এরপর যদি পানি ফুটিয়ে পান করতে হয়, তাহলে সামগ্রিকভাবে এক ইউনিট পানির খরচ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়?

বেশ কিছুদিন আগে ওয়াসার নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন কর্তা বলেছিলেন ওয়াসার পানি যেভাবে পরিশোধন করা হয়, তাতে পানি না ফুটিয়েও পান করা যাবে।
প্রকৃতপক্ষে সেটিই হওয়া উচিত। কিন্তু আমরা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। বরং পানির বিলের সঙ্গে যোগ হচ্ছে গ্যাসের খরচ।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী সব সময় আমাদের সাশ্রয়ী হতে তাগিদ দিচ্ছেন। তিনি প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন দেশের মানুষকে মানসম্মত জীবন উপহার দিতে। তার নেতৃত্বে দেশ নানা ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক, সামাজিক নানা সূচকে অগ্রগতি ঘটছে বাংলাদেশের। ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পানির সরবরাহও বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে- এ কথা অনস্বীকার্য। কিন্তু শতভাগ বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা এখনো অপূরিত রয়েছে।

এর একটা প্রধান কারণ সরবরাহ লাইনের দুর্বলতা। বিশেষ করে কোথাও বহুদিনের পুরনো লাইন, কোথাও লাইন লিকেজ হয়ে বাইরের নোংরা পানির প্রবেশ, কোথাও অবৈধ লাইন সংযোগ- এমন নানা কারণে পানি দূষিত হচ্ছে। আমরা মনে করি এসব বিষয়ে ওয়াসার নতুন উদ্যোগ নেওয়া দরকার। সরবরাহ লাইনে আরও যদি কোনো সমস্যা থাকে তা খুঁজে বের করে ব্যবসস্থা নিতে হবে।

পানি উৎপাদন ও সরবরাহে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। অনেক উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছে। কিন্তু সরবরাহ ব্যবস্থাপনার অবহেলা কিংবা অদক্ষতার কারণে নাগরিকরা তার সুফল থেকে বঞ্চিত হবে কেন?