ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর উক্তিটি সর্বক্ষেত্রেই প্রযোজ্য

দুর্লভ বিশ্বাস
 | প্রকাশিত : ১৯ এপ্রিল ২০১৯, ১৭:৫৪

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং গত ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের দিনে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ অডিটোরিয়ামে তাকে দেয়া এক সংবর্ধনা সভায় বলেছেন, ‘ভালো ডাক্তার হওয়ার আগে ভালো মানুষ হতে হবে।’ তিনি অতীব সত্য কথা বলেছেন। তার এই উক্তিটি শুধু চিকিৎসক নয় সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং ওই মেডিকেল কলেজের ছাত্র হিসেবে ইন্টার্নসহ দীর্ঘ আট বছর লেখাপড়া করেছেন। এছাড়া প্রায় চার বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্জারি বিভাগেও লেখাপড়া করেছেন। সে হিসেবে প্রায় ১২ বছরের শিক্ষাজীবনে চিকিৎসকদের অতি কাছ থেকে দেখা বা জানাশোনার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। সেখানে হয়তো চিকিৎসকদের মৌলিক যে মানবিক গুণাবলী থাকা আবশ্যক তার ঘাটতি নজরে পড়েছিল লোটে শেরিংয়ের। সেজন্যই হয়তো ময়মসিংহ মেডিকেল কলেজের সংবর্ধনায় ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ওই উক্তির মাধ্যমে তা জানিয়ে দিলেন আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় চিকিৎসকদের। সব চিকিৎসকের বেলায় না হলেও কোনো কোনো চিকিৎসকের মধ্যে যে মানবিক গুণাবলীর ঘাটতি রয়েছে তা তো আমাদের সবারই জানা। ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর এই উক্তিটি কি শুধু চিকিৎসক সমাজের জন্যই প্রযোজ্য’ না কি তা সর্বক্ষেত্রেই প্রযোজ্য?

প্রথমেই ধরা যাক, আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক সমাজের কথা। একদা এই শিক্ষক সমাজ ছিল সবারই শ্রদ্ধার পাত্র। এখন যে নেই তা বলবো না। তবে প্রাইমারি থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত এ পেশার সাথে জড়িত কেউ কেউ, যেকোনো উপায়ে টাকা কামানোর পেছনে ধাবিত হচ্ছেন তা সবারই জানা। ফলে এ সমাজের প্রতি একদা যে শ্রদ্ধা ছিল, সেই অগাধ শ্রদ্ধায় কিছুটা হলেও চির ধরছে। তাছাড়া অতি সম্প্রতি ফেনীর সোনাগাজীর নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার নির্দেশদাতা ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কুলাঙ্গার সিরাজ-উদ-দৌলা ছাড়াও যৌন নিপীড়নকারী হিসেবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের নাম পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হয়ে থাকে। কোনো কোনো সময় সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নামও এসে থাকে - যা অত্যন্ত পীড়াদায়ক। কাজেই যত ক্ষুদ্রই হোক শিক্ষক সমাজের একটি অংশেরও মানবিক গুণাবলীর ঘাটতি দেখা দেয়ায় শ্রদ্ধেয় শিক্ষক সমাজের ক্ষেত্রেও ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর ওই উক্তিটি কি প্রযোজ্য নয়?

আমাদের দেশের সরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে তো ‘আমলাতন্ত্রের মারপ্যাচে’ বা ‘লাল ফিতার দৌরাত্ম’ এ ধরনের লেখালেখি খবরের কাগজে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আসছি। সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর না হলেও এদের অনেকেরই মৌল মানবিক গুণাবলীতে ক্ষত থাকায় শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক ভাইয়েরা এ ধরনের শিরোনাম দিয়ে দেশবাসীর অর্থে যাদের বেতন-ভাতা এবং গাড়ির তেল পর্যন্ত হয়ে থাকে তাদের নিয়ে লিখে থাকেন। তাই লোটে শেরিংয়ের উক্তিটি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য নয় কি?

বর্তমানে আমাদের দেশে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। অনেকে বলে থাকেন গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে দেশে বিপ্লব ঘটেছে। পাশাপাশি হলুদ সাংবাদিকতা এবং অপসাংবাদিকতা শব্দ দুটিও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অথচ এ পেশায় আমাদের দেশে যারা স্মরণীয় বরণীয় তাদের সময়ে হাল আমলের প্রচলিত এই শব্দ দুটি শোনা যেত না। জাতির বিবেক হিসেবে যারা খ্যাত সেই সাংবাদিক ভাইদের ক্ষেত্রে লোটে শেরিংয়ের উক্তিটি প্রযোজ্য বলে যদি কেউ দাবি করেন তাহলে তাকে কি দোষ দেয়া যাবে?

ব্যক্তিগত লোভ লালসার ঊর্ধ্বে থেকে দেশের জনগণের জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দেয়ার নামই সোজা-সাফটা ভাষায় রাজনীতি। জনগণের জন্য যারা তা করতে পেরেছেন রাজনৈতিক অঙ্গনে তারাই প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে আছেন। যেমন আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেজন্যই ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর ওই উক্তিটি রাজনীতির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য কেউ দাবি করলে তাকে কি দোষ দেয়া যাবে?

লেখক: সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধা

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :