নুসরাত হত্যায় আ.লীগ নেতা রুহুল আমিন রিমান্ডে

প্রকাশ | ২০ এপ্রিল ২০১৯, ২১:১৫ | আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৯, ২১:২৮

ফেনী প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার মামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।

শনিবার সন্ধ্যায় ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শরাফ উদ্দিন আহমেদ এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই পরিদর্শক মোহাম্মদ শাহ আলম জানান, শনিবার বিকালে রুহুল আমিনকে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শরাফ উদ্দিন আহমেদের আদালতে হাজির করে নুসরাত হত্যার ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়। আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

রুহুলকে শুক্রবার বিকালে নিজ বাড়ি থেকে আটক করে পিবিআই। পরে তাকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

রুহুল আমিনের সম্পৃক্ততা যেভাবে

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই মামলার অন্যতম দুই আসামি মাদ্রাসা শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি শাহাদাত হোসেন শামীম ও নুর উদ্দিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এতে রুহুল আমিনের নাম উঠে আসে। শামীম জবানবন্দিতে জানান, নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়ার পর দৌড়ে নিচে নেমে রুহুল আমিনকে ফোনে আগুন দেওয়ার বিষয়টি জানান তিনি। তখন রুহুল আমিন তাকে বলেন, ‘আমি জানি। তোমরা চলে যাও।’

এদিকে ২৭ মার্চ মাদ্রাসার অধ্যক্ষের কার্যালয়ে যৌন হয়রানির পর ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে রুহুল আমিন তৎপর ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি এ সম্পর্কে থানায় মামলা কিংবা কাউকে না জানাতে নুসরাতের পরিবারকে চাপ দেন। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মামলা দেয়ায় এবং অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা গ্রেপ্তার হওয়ায় রাফির পরিবারের ওপর নাখোশ হন রুহুল আমিন। ৬ এপ্রিল নুসরাতের মৃত্যুর পরও ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে রুহুল আমিন ও ওসি মোয়াজ্জেম নানা কূটকৌশল করেন বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে।

৮ এপ্রিল ওসি মোয়াজ্জেমকে প্রত্যাহার করে মামলাটি পিবিআইতে হস্তান্তর করার পর বেকায়দায় পড়ে যান রুহুল আমিন। একেএকে এজাহারভুক্ত আট আসামিসহ ঘটনায় অভিযুক্ত আরও সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গত কয়েক দিন ধরেই রুহুল আমিনের গ্রেপ্তারের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভাতে বিতর্কিত এ নেতা অংশ না নেয়ায় তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠে। গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরধারিতে ছিলেন।

নুসরাত সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন। ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে নুসরাতের মা বাদী হয়ে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেয়া হচ্ছিল।

গত ৬ এপ্রিল সকালে আলিম আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান নুসরাত। এসময় কৌশলে তাকে ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সেখানে তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল রাতে নুসরাত মারা যান। ঘটনাটি দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে।

(ঢাকাটাইমস/২০এপ্রিল/জেবি)