আজও শুকায়নি আশুলিয়ার ব্যাংক ডাকাতির ক্ষত

প্রকাশ | ২১ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:০৯ | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:১৩

ইমতিয়াজ উল ইসলাম, সাভার

সাভারের আশুলিয়ার কাঠগড়া বাজারে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনার চার বছর পূর্তি হচ্ছে আজ। ২০১৫ সালের ২১ এপ্রিল দুপুর আড়াইটার দিকে ব্যাংকের ভেতর অস্ত্রের মুখে ডাকাতরা জিম্মি করে রাখে ব্যাংক ম্যানেজার, স্টাফ ও গ্রাহকদের। এ সময় সবাই প্রতিহতের চেষ্টা করলে ডাকাতরা আটজনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। পরে পালাতে গিয়ে গণপিটুনিতে মারা যায় অজ্ঞাত পরিচয় এক ডাকাত।

এ হত্যার দায়ে ২০১৬ সালে আদালত ১১ আসামির মধ্যে ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড, একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, দুজনের তিন বছর করে কারাদণ্ড ও জরিমানা এবং বাকি দুজনকে খালাস দিয়েছে।

এ ঘটনায় সেদিন নিহত হন ব্যাংকের ম্যানেজার মো. ওয়ালিউল্লাহ, নিরাপত্তাকর্মী বদরুল আলম, ব্যাংকের গ্রাহক ক্রোকারিজ দোকানদার মনিরুজ্জামান, ঝালমুড়ি বিক্রেতা নূরুজ্জামান, টেক্সটাইল ব্যবসায়ী জমিরউদ্দিন, চালের দোকানদার নূর মোহাম্মদ ও আইয়ুব আলী ও অজ্ঞাত পরিচয় এক ডাকাত।  

এঘটনার চার বছর হতে চললেও ডাকাতদের হত্যাযজ্ঞ আজও ভুলতে পারেননি নিহতের স্বজন, আহত ব্যক্তি ও এলাকাবাসী। যদিও এখন ঘটনাস্থল দেখে বোঝার উপায় নেই যে সেদিন কী ভয়াবহ তাণ্ডবটাই না এখানে চালিয়েছিল ডাকাতরা। তারপরও নিজেদের কর্মব্যস্ত জীবনে মাঝে মধ্যেই ব্যাংক ডাকাতির কথা মনে হলে আঁৎকে উঠেন তারা।

ব্যাংকের নিচে সেদিন অস্ত্রধারী ডাকাতদের প্রতিহত করতে গিয়ে ছুরিকাঘাতে মারাত্মক জখম হয়েছিলেন বৃদ্ধ নুরুল ইসলাম। এখন তিনি যে জায়গায় ঝালমুড়ি বিক্রি করছেন ডাকাতরা সেখানেই আরেক ঝালমুড়ি বিক্রেতা নূরুজ্জামানকে হত্যা করেছিল। ভয়াবহ সেই দিনের কথা জানতে চাইলে বৃদ্ধ নুরুল অনেকক্ষণ নির্বাক থেকে উত্তর দেন। বলেন, ব্যাংক ডাকাতির দিন দুপুর বেলা তিনিও মসজিদের মাইকিং শুনে ছুটে এসেছিলেন। খালি হাতে প্রতিরোধ গড়তে দাঁড়িয়েছিলেন ডাকাতদের সামনে। এসময় এক ডাকাত তার তলপেটে দুইবার ছুরি ঢুকিয়ে দেয়। তারপরও ধরতে গেলে তার হাতে জখম করে পালিয়ে যায় ওই ডাকাত। এরপর জ্ঞান ফিরলে হাসপাতালের বিছানায় নিজেকে খুঁজে পান তিনি।

নুরুল আরও বলেন, সেদিনের কথা মনে হলে আজও আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন তিনি। ডাকাতরা যেভাবে সেদিন তাণ্ডব চালিয়েছে তা ভোলার নয়। যাকেই সামনে পেয়েছে তাকে কুপিয়েছে ও গুলি করেছে। আর ডাকাতদের ছোড়া অনবরত গুলি, শক্তিশালী গ্রেনেড ও বোমার বিস্ফোরণে পুরো এলাকা যেন হয়ে উঠেছিল যুদ্ধক্ষেত্র।

ওই দিনের ঘটনায় নিহত অবসরে থাকা বিডিআর সদস্য আইয়ুব আলীর ছেলে শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম শুভ বলেন, ঘটনার দিন তিনি সাভারে কলেজে গিয়েছিলেন। দুপুরে ব্যাংকে ডাকাতদের হানায় তারা বাবা গুরুতর আহত হয়েছেন শুনে ছুটে আসেন। কিন্তু ততক্ষণে তার বাবা আর পৃথিবীতে বেঁচে ছিলেন না। ডাকাতরা নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল তার মাথার ওপর একমাত্র ছায়া বাবাকে। আজও তিনি এই মৃত্যুকে মেনে নিতে পারেননি।

ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হোটেল ব্যবসায়ী সামিউল জানান, ওই দিনের ঘটনায় মনে হলে এখনো গা শিউরে ওঠে। এঘটনার পর অনেকদিন দিনের বেলাতেও এই এলাকা দিয়ে মানুষ চলাচল করতে গিয়ে ভয় পেত। তবে এখন সবকিছু স্বাভাবিক হলেও তারা যারা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তাদের মনে সব সময় কেন জানি একটা আতঙ্ক বিরাজ করে।

ব্যাংক ম্যানেজার ওয়ালিউল্লাহ নিহতের পর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন ফিরোজ আহমেদ। এরপর দীর্ঘ দিন ব্যাংক পরিচালনা করেন তিনি। এসময় ব্যাংকের নিরাপত্তার জন্য একজনের জায়গায় অতিরিক্ত আরও একজন গানম্যান রাখা হয়। এখন স্বাভাবিকভাবেই তাদের ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলে জানান সদ্য ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পাওয়া বিমুল কুমারা সাহা। তবে প্রতি বছর নিহতদের স্মরণে ব্যাংক কতৃপক্ষ ভুক্তভোগীদের স্বজন ও এলাকাবাসীদের অংশগ্রহণে দোয়ার আয়োজন করে থাকেন।

(ঢাকাটাইমস/২১এপ্রিল/জেবি)