বিনিয়োগকারীদের নির্ভয় দিতে হবে ডিএসইকে: লালী

প্রকাশ | ২১ এপ্রিল ২০১৯, ১৬:০২

রহমান আজিজ

একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর পুঁজিবাজারে উল্লম্ফনে দীর্ঘ প্রায় এক দশকের মন্দাভাব থেকে বেরিয়ে আসার আশাবাদ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এরপরই বড় ধরনের দর সংশোধন। তবে সম্প্রতি এই সংশোধন শেষে আবার সূচক ও লেনদেন বাড়ার ইঙ্গিত মিলছে। এই সংশোধনের মধ্যে পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল করতে সরকারের নানা উদ্যোগের কথা সামনে এসেছে। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা আইএমএফও সরকারকে এ বিষয়ে তাগাদা দিয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামালও আশ্বাস দিয়েছেন। এই অবস্থায় সার্বিক দিক নিয়ে এই সময়-এর মুখোমুখি হয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্রোকারেজ মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রথম নির্বাচিত সভাপতি এবং রশিদ ইনভেস্টমেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেডের এমডি ও ডিএসইর সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন রহমান আজিজ

সাম্প্রতিক দরপতনের কারণ নিয়ে তো অনেক কথা হচ্ছে, কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ তো শনাক্ত করা যাচ্ছে না

দরপতনের একটি কারণ হলো বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাব। নানা কারণে এটা হয়েছে।

২০১৯ সালকে বেশ সম্ভাবনাময় বলা হচ্ছিল দেশি-বিদেশি বিশ্লেষকদের পক্ষ থেকে হঠাৎ কী হলো?

বাজারে কিছু প্যানিক সৃষ্টি হয়েছে। এর একটি হলো টিআইএন নিয়ে, আরেকটি হলো ডিএসইর কর্তাব্যক্তিদের কারণে। বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে এটা ডিএসইর কর্তাব্যক্তিদের কাজ।

এই আস্থা কে ফেরাবে?

আস্থা ফেরাতে ডিএসইকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিনিয়োগকারীদের বুঝাতে হবে। তাদের কাছে ডিএসইর কর্তাব্যক্তিদের পৌঁছাতে হবে। তাদেরকে সঠিক বিনিয়োগের পরামর্শ দিতে হবে।

ডিএসই যদি বিনিয়োগকারীদের বোঝাতে সক্ষম হয় যে, বাজার এখন ঠিক আছে, আপনারা এখন নির্ভয়ে বিনিয়োগ করতে পারেন। তবেই আস্থা ফিরতে পারে বিনিয়োগকারীদের। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীদের নির্ভয় দিতে হবে ডিএসইকে। আর কর্তাব্যক্তিদের ভেবেচিন্তে বক্তব্য দিতে হবে। বাজারকে ক্ষতি করে এমন বক্তব্য দেওয়া যাবে না। প্রথমে দেখতে হবে যে বক্তব্য দেওয়া হবে এটার কোনো গবেষণা আছে কি না।

সেই সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়কে একসঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। বাজারে প্রভাব পড়তে পারে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।

প্লেসমেন্ট শেয়ার নিয়ে কথা হচ্ছে অনেক বলা হচ্ছে বাজার থেকে টাকা বের হয়ে যাওয়া এর একটা কারণ এটা কতটা যুক্তিযুক্ত?

এটা অবান্তর। প্রথমত, প্লেসমেন্ট যারা নেয় সেটি ইউনিটভিত্তিক এবং দ্বিতীয়ত হাই-নেটওয়ার্ক ইনভেস্টর। এক্ষেত্রে বিনিয়োগের টাকা দুই বছর আগে নেওয়া হয়। এরপর প্রসপেক্টাসটি এক বছর পর্যন্ত লগিং থাকে। এখানে যে সব বিনিয়োগকারী ইনভেস্ট নেয় বাজারে সেটা চলে যায় এমন বক্তব্য সত্য নয়। তারা অতি মুনাফা করে। কোনো ইনভেস্টর হোল্ডারের পক্ষে এক বছর ধরে রাখা সম্ভব হয় না।

প্লেসমেন্টের বিষয়টি কীভাবে হয়?

যখন কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করা হয়, তখন এ কোম্পানি কেউ চেনে না। এমতাবস্থায় সে কোম্পানিকে তাদের বন্ধু বা পরিবারের কাছে কিছু শেয়ার বিক্রি করে। এরপর এ টাকা পাওয়ার পর তারা তাদের কার্যক্রম জোরদার করে। এখানে প্লেসমেন্ট ব্রিজের ন্যায় কাজ করে।

বাজারে তারল্য সংকটের কথা বলা হচ্ছে ক্ষেত্রে ব্যাংকের এক্সপোজারের হিসাব নিয়ে অনেক দিন ধরে কথাবার্তা হচ্ছে আপনারা চান ক্রয়মূল্যে হিসাব করতে কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার দর অথবা ক্রয়মূল্যের মধ্যে যেটা বেশি সেটা হিসাব করে ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড কী?

পুঁজিবাজারে এক্সপোজার বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে এগিয়ে আসতে হবে। এর জন্য একটি গাইডলাইন থাকতে হবে।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে প্রতিটি দেশে গাইডলাইন আছে। কিন্তু আমাদের দেশে নেই। আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ধারেকাছেও নেই। সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ইচ্ছা থাকতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে এ বিষয়টি দেখতে হবে।

বেশ কিছু কোম্পানির দাম ইস্যু মূল্যের নিচে এর পেছনে কারণ কী?

ইস্যু মূল্যের নিচে এর প্রথম কারণ মার্কেট যেহেতু কমতির দিকে, তাছাড়া সব শেয়ারের দাম কমছে। মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দাম ফেসভেল্যুর নিচে। আরেকটি কারণ হলো- মার্কেটে ভালো কোম্পানির সংখ্যা কম। দুর্বল কোম্পানির সংখ্যা অনেক বেশি।

যেসব কোম্পানির দর ইস্যু মূল্যের নিচে, সেগুলোর পরিচালকদের বাই ব্যাক আইনের আওতায় আনার দাবি উঠেছে...

বাই ব্যাক আইনটা ভালো। এটি কার্যকর করতে হলে প্রথমে কোম্পানি আইনের পরিবর্তন আনতে হবে। ১৯৫৮ সালে একবার কোম্পানি আইন পরিবর্তন করা হয়। ২০০৫-০৬ তে একবার পরিবর্তন করা হয়। সেখানে এ আইনের কথা উল্লেখ নেই। এই আইনটি যুক্ত করতে হলে কোম্পানি আইন পরিবর্তন করতে হবে।

মিউচ্যুয়াল ফান্ড এক হতাশার নাম ফান্ড রি-ইনভেস্টমেন্ট ইউনিট দিলে বিনিয়োগকারীর ক্ষতি বলা হচ্ছে অথচ এক সময় এদের চাপেই কেবল নগদের বদলে ইউনিট দেওয়ার সুযোগ  হয়েছিল এখন এই সিদ্ধান্ত কি আবার পুনর্বিবেচনা করা উচিত?

ফান্ড রি-ইনভেস্টমেন্ট ইউনিট দেওয়ার সুযোগ ঠিক হবে না। এর কারণ হলোÑ মিউচ্যুয়াল ফান্ড কোনো শেয়ার নয়। এটা একটা ইউনিট। যার কোনো কোম্পানি বা বোর্ড অব ডাইরেক্টর থাকে না। এ ক্ষেত্রে মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বোনাস দেখার বিষয়ে পৃথিবীতে কোনো নজির নেই।

তাই বলে টাকা ইপিএসের ফান্ডের দর টাকার মধ্যে থাকাটা কি যৌক্তিক?

মিউচ্যুয়াল ফান্ডের থামরুল হলো- যে এনএভি (ন্যাট এসেট ভ্যালু) যা হয় তার ১০ শতাংশ যোগ-বিয়োগ করে তার দাম থাকা উচিত। এটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।

১৩টি কোম্পানি নিয়ে খুব আলোচনা হচ্ছে তাদের পারফরম্যান্স যাচাই হচ্ছে কিন্তু দীর্ঘ সময় দিলেও কোনো সিদ্ধান্ত হচ্ছে না এটা তো ক্ষতিকর

হ্যাঁ, ১৩টি কোম্পানির পারফরম্যান্স ভালো না। এজন্য এদেরকে জেড ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে। লাভ দেয় না বলেই এই অবস্থা। এটি কেনার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

ইদানীং কিছু ফেসবুক গ্রুপ তৈরি হয়েছে যেগুলোতে নানা কোম্পানির শেয়ার কিনতে লোভ দেখানো হয় এটা একটা বড় সমস্যা তৈরি করেছে

এগুলোতে কান না দেওয়া ভালো। কারণ তারা যদি আসলেই ভালো বুঝতো, তা হলে অল্প টাকার বিনিময়ে পরামর্শ দিত না। নিজেরাই টাকা জোগাড় করে বিপুল আয় করতো। 

(ঢাকাটাইমস/২১এপ্রিল/জেবি)