পরকীয়ার বলি রিয়াজ
প্রকাশ | ২১ এপ্রিল ২০১৯, ২১:০২ | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৯, ২১:০৯
সম্পত্তির লোভ ও সার্বিকভাবে সুখে থাকার আশায় স্ত্রী আমিনা আক্তার লিজার পরিকল্পনায় গলাকেটে হত্যা করা হয়েছে বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের বুখাইনগর এলাকার বাসিন্দা ও দলিল লেখক রেজাউল করিম রিয়াজকে।
রবিবার দুপুরে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) শাখার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানিয়েছেন উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁঞা।
তিনি জানান, এরই মধ্যে স্বামীকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন স্ত্রী আমিনা আক্তার লিজা। আর ঘটনার পর সার্বিক দিক পর্যবেক্ষণ ও স্ত্রীর দায় স্বীকারের মধ্যদিয়ে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, দলিল লেখক রেজাউল করিম রিয়াজকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। যেখানে রিয়াজের স্ত্রী লিজা ছাড়াও আরো দুজন জড়িত রয়েছে। যার মধ্যে একজন মাসুম ও অন্যজনের নাম হাইল্যা বলে শোনা যাচ্ছে। মাসুম নিহত রেজাউল করিম রিয়াজের সহকারী ও আমিনা আক্তার লিজার পরকীয়া প্রেমিক।
তিনি জানান, ঘটনার পর নানান দিক বিবেচনা করে লিজা ও নিহতের ভাইকে আমরা হেফাজতে নেই। পরে লিজার দেয়া তথ্যে নিহতের ভাইকে ছেড়ে দেয়া হয়।
অপরদিক হত্যার ঘটনায় জড়িত মাসুমসহ অপর দুজনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
উপ-পুলিশ কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁঞা ঘটনার বিবরণে জানান, বন্দর থানার চরকাউয়া এলাকার দেলোয়ার খানের মেয়ে আমিনা আক্তার লিজার সাথে চরমোনাই ইউনিয়নের রাজধর গ্রামের ছত্তার হাওলাদারের ছেলে রেজাউল করিমের চার বছর আগে বিয়ে হয়। যদিও এর আগে লিজার আরো দুটি বিয়ে এবং নিহত রিয়াজের একটি বিয়ে হয়েছিল। তারা আগের বিয়ে বিচ্ছেদের পরই চার বছর আগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
লিজার বরাত দিয়ে উপ-পুলিশ কমিশনার জানান, যেহেতু রেজাউলের আগে ১০ বছরের সাংসারিক জীবনে কোন সন্তান হয়নি এবং লিজার সংসারেও কোন সন্তান ছিল না, তাই এ নিয়ে পারিবারিক কলহ ছিল। এছাড়া পলাশপুরে থাকা ১৬.৫০ শতাংশ জমি লিজা তার নিজের নামে করে দিতে বললেও তাতে রাজি ছিল না স্বামী রেজাউল।
এদিকে ঘটনাচক্রে রিয়াজের সহকারী পলাতক অপর আসামি মাসুমের সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে লিজা। মাসুম আশ্বস্ত করে যে, সে রেজাউলের থেকে লিজাকে বেশি সুখে শান্তিতে রাখবে। তাই লিজা সবদিক থেকে সুখে থাকার আশায় নতুন প্রেমিককে পাওয়া এবং পলাশপুরের জমি আত্মসাৎ করার আশায় স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী লিজা পরকীয়া প্রেমিক মাসুমের সহায়তায় দুধের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে রেজাউলকে খাইয়ে দেয় এবং ঘটনার দিন রাতে আগে থেকেই ঘরের ভেতরের মাচায় পরকীয়া প্রেমিক ও তার সহযোগীকে লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করে লিজা।
এরপর লিজার স্বামী ঘুমিয়ে পড়লে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) ভোরে তারা তিনজনে মিলে রেজাউলকে খুড় ও দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার জন্য ঘরের ভেতরে খাটের নিচে একটি সিঁধ কাটে। পরে পরকীয়া প্রেমিক ও তার সহযোগী ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে লিজা তার পোশাক পাল্টে ফেলে এবং ঘরের বাইরে এসে চিৎকার শুরু করে।
তিনি জানান, এর ধারাবাহিকতায় ৯৯৯ ফোন করে বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করা হয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে কাটা সিঁধ থেকে পুলিশের সন্দেহ হয়, কারণ তা দিয়ে কেউ প্রবেশ করার কোন আলামত ছিল না। আর ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোর বিষয়টিও সামনে আসলে রিয়াজ আর তার স্ত্রী ছাড়া ওই ঘরে কেউ না থাকায় লিজাকে আটক করা হয়। লিজাকে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামত উদ্ধারের মধ্যদিয়ে ঘটনার মূল রহস্য খুব অল্প সময়ে উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে বলে জানান পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁঞা।
তিনি জানান, এ ঘটনায় নিহতের ভাই মনিরুল ইসলাম রিপন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছেন।
(ঢাকাটাইমস/২১এপ্রিল/এলএ)