সন্ত্রাসী হামলায় রক্তাক্ত কলম্বো

উগ্রবাদ ঠেকাতে বিশ্বনেতাদের সম্মিলিত উদ্যোগ চাই

প্রকাশ | ২২ এপ্রিল ২০১৯, ২১:৪৮

আরিফুর রহমান

রবিবার ইস্টার সানডেতে সন্ত্রাসী হামলায় রক্তাক্ত হয়েছে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ শ্রীলঙ্কা। দেশটিতে এখন চলছে শোকের মাতম। তিনটি গির্জা, চারটি পাঁচ-তারকা হোটেল ও একটি বাড়িতে সিরিজ বোমা হামলায় মৃতের সংখ্যা সোমবার পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০০। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আহতের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক।

দ্বীপরাষ্ট্রটিতে খ্রিষ্টানদের অন্যতম প্রধান উৎসবে যখন গির্জায় প্রার্থনা চলছিল, আনন্দময় পরিবেশ বিরাজ করছিল হোটেল-রেস্তোরাঁয়, তখন হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। সেখানকার পুলিশ বলছে এর সব কটি আত্মঘাতী হামলা।

এসব ঘটনায় বিশ্ববাসীর পাশাপাশি আমরাও শোকাহত, বিক্ষুব্ধ। আমাদের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এবং বিশ্বনেতারা শোক ও নিন্দা জানিয়েছেন।

শ্রীলঙ্কার খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রধান পুরোহিত যেকোনো ধরনের প্রতিশোধ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন। শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী সবাইকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা কেউই নির্র্বিচারে কারও ওপর দায় চাপিয়ে দেননি। এর মধ্য দিয়ে আরও কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা হয়তো। ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। এ জন্য আমরা তাদের প্রতি ধন্যবাদ জানাই।

এখনো কোনো গোষ্ঠী বা সংগঠন কলম্বো হামলার দায় স্বীকার করেনি। কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি৷ তবে হামলাগুলোর লক্ষ্য ধর্মীয় উপাসনালয় ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র বলে উল্লেখ করেছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো।

কেউ দায় স্বীকার না করলেও হামলার ধরন ও ব্যাপকতা থেকে এটা বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, যারাই এর সঙ্গে জড়িত থাকুক তারা অত্যন্ত সংঘবদ্ধ। তাদের কাছে কোনো ধর্ম বা জাতির মানুষ নিরাপদ নয়।

আমরা স্মরণ করতে পারি মাত্র এক মাসের কিছু বেশি সময় আগের রক্তাক্ত ক্রাইস্টচার্চের কথা। গত ১৫ মার্চ  নিউজিল্যান্ডের এই রাজধানী শহরের দুটি মসজিদে ঢুকে নির্বিচার গুলি চালিয়ে অর্ধশত মসুল্লিকে হত্যা করে এক উগ্রবাদী। এর আগেও ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে উগ্রবাদী হামলায় নানা জাতি-ধর্মের মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।

আমরা মনে করি, এই নরহত্যাকারী গোষ্ঠীকে অতি দ্রুত চিহ্নিত করতে হবে, তা না হলে বিশ্বের কোথাও কেউ নিরাপদ থাকবে না। কেননা সন্ত্রাসীদের কোনো দেশ-জাতি নেই। সে মুসলিম কিংবা হিন্দু-বৌদ্ধা বা খ্রিষ্টান হতে পারে। রক্তের নেশা পেয়ে বসলে তারা যে কারও ওপর হামলা করবে।

এটি বলার অপেক্ষা রাখে না, কোনো একটি দেশ কিংবা সরকারের পক্ষে এই উগ্র গোষ্ঠীকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না। বিশ্বনেতাদের সম্মিলিত ও সদিচ্ছাজাত উদ্যোগ  এদের মূলোৎপাটনে সক্ষম হতে পারে। আমরা আশা করি, আর অপেক্ষা না করে বিশ্বনেতারা এই ইস্যুতে একত্রে বসে সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর উপায় খুঁজে বের করবেন।

আমরা কোথাও আর কারও রক্ত দেখতে চাই না। আর কোনো প্রাণহানির ব্যথায় গুমরে কাঁদতে চাই না। আশা করি বিশ্বশান্তি নিশ্চিত ও  যেকোনো ধরনের সন্ত্রাস বন্ধ করতে উদ্যোগী হবেন বিশ্বনেতারা।

কলম্বো হামলায় নিহতদের স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানাই আমরা। আল্লাহ তাদের শোক বইবার শক্তি দিন।