সংসারের জোয়াল ছোট্ট কাঁধে

প্রকাশ | ২৩ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:১১

রাজিবুল হক সুমন, মেহেরপুর, ঢাকা টাইমস

আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও প্রশাসনিক নজরদারি না থাকায় মেহেরপুরে বাড়ছে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা। পরিবারে সচ্ছলতা ফেরাতে অল্প বয়সে কাজ করতে হচ্ছে এই শিশুদের। তাদের হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। বিনিময়ে পাওয়া অল্প কিছু টাকা দিয়ে চলে তাদের সংসার।

শিশুশ্রম নিষিদ্ধ জানলেও কম টাকায় শ্রমিক পাওয়ায় ব্যবসায়ীরাও কাজ করাচ্ছেন তাদের দিয়ে। জেলায় শ্রম অধিদপ্তরের কার্যালয় না থাকায় শিশুশ্রমিকের পরিসংখ্যানের তথ্য পাওয়া যায় না। তবে এটি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

আইন অনুসারে ১৬ বছরের নিচে কোনো শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে পারবে না। অথচ মেহেরপুরের অধিকাংশ শিশুশ্রমিকের বয়স ৯ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। এসব শিশুর অধিকাংশই তৃতীয় কিংবা চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। এরপর পরিবারের সংকটে স্কুল ছেড়ে ওয়েলডিং কারখানা, মুদি দোকান, গ্যারেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িয়ে পড়েছে।

বামন্দী বাজারের কবীর সাইকেল স্টোরে কাজ করছে ৯ বছরের রাহুল। সে বলে, ‘নানার বাড়িতে আমি আর মা থাকি। আগে স্কুলে যেতাম, এখন আর যাই না। মা আরা নানা সঙ্গে করে নিয়ে এসে এখানে কাজে লাগিয়েছেন। মাস শেষে যা পাই, তা মায়ের হাতে দিয়ে দেই। এখানে কাজ শিখে নিজে দোকান দিয়ে ব্যবসা করবো।`

পড়াশোনা করতে ভালো লাগে না বলে ওয়েলডিং কারখানায় কাজ করছে ১০ বছরে কিরণ। তার ভাষ্য, ‘আগে বাবা কাজ করতেন। কিন্তু কোমরের হাড় ভেঙে যাওয়ায় এখন কোনো কাজ করতে পারেন না। এখন আমিই কাজ করি। এখান থেকে যে বেতন পাই, তা দিয়ে সংসার চলে।’

শিশুশ্রমিক দিয়ে কাজ করানো কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘শিশুশ্রম নিষিদ্ধ, তা আমরা জানি। অনেকেই স্কুলে যায় না, তাদের বাবা-মা গরিব বলে এখানে কাজে দিয়েছেন। আমরা জোর করে কাউকে অল্প বয়সে কাজে নেই না। বরং শিশুদের অভিভাবকরা আমাদের কাছে রেখে যান।’

মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক মো. আতাউল গণি বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কাজে শিশুদের নিয়োগ করা যাবে না। এটি দণ্ডনীয় অপরাধ। আইন সংশোধন করে এটি আমাদের দেশে করা হয়েছে। জেলায় সরকারি আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে শিশুশ্রম যদি থেকে থাকে, আমরা সরকারি ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির মাধ্যমে উদ্যোগ নিয়ে সমূলে উৎপাটন করবো এবং শিশুশ্রমমুক্ত মেহেরপুর গড়বো।’

(ঢাকাটাইমস/২৩এপ্রিল/প্রতিবেদক/এআর)