ট্র্যাজেডির ৬ বছর: ছবি নিয়ে রানা প্লাজার সামনে স্বজনরা
প্রকাশ | ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ১০:১২ | আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ১০:১৯
দেশের ইতিহাসে ভয়াবহতম এক ঘটনার নাম সাভারের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি। ২০১৩ সালের এই দিনে সাভারে নয় তলা রানা প্লাজা ভবন ধসে নিহত হন সহস্রাধিক শ্রমিক। আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন হাজারো মানুষ।
ভবন ধসের দুই বছর পার হলেও এখনো কান্না থামেনি স্বজন হারানো পরিবারগুলোর। তাই প্রতিবছরের এই দিনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা ভবনটির সামনে এসে এখনো খুঁজে ফেরেন নিখোঁজ হওয়া আপনজনদের।
ভবন ধসের দিনটি আসলেই বিধ্বস্ত রানা প্লাজার সামনে জড়ো হয় প্রিয়জনের শোকে কাতর অনেকেই। অপলক নয়নে কেউবা বাতাসে খুঁজে ফেরে তার নিখোঁজ স্বজনের অস্তিত্ব। এদের মধ্যে কেউ ধ্বংসস্তুপের স্থানটিতে এসে ঠাঁই দাঁড়িয়ে হাতড়ে বেড়ান কাছের মানুষটির স্মৃতি। সবাই ভুলে গেলেও পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়া আপনজনের স্মৃতি তাদের তাড়া করছে প্রতিনিয়ত।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে রিনা আক্তার নামে এক নারী শ্রমিক ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারান। ভবনটির ষষ্ঠ তলার ইথার টেক্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র অপারেটরের কাজ করতেন রিনা। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে তাকে চলে যেতে হয়েছে পৃথিবী ছেড়ে।
পরিবারের উপার্জনক্ষম বড় মেয়ের এমন মৃত্যু এখতো তাড়িয়ে বেড়ায় তার মা বাসনা বেগমকে। আর তাই মেয়েকে স্মরণ করতে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে আসেন তিনি। রানা প্লাজার সামনে দাঁড়িয়ে মধ্যবয়সী নারী বাসনা বেগম বলেন, প্রতি বছর এই দিনটিতে সন্তানের কথা মনে করে এখানে আসি। পরিবারের অন্য সবাই ঘটনার ছয় বছরে অনেকটা স্বাভাবিক হলেও তিনি হতে পারেননি। মেয়ে হারানোর কষ্ট আজও তাকে কুড়েকুড়ে খাচ্ছে।
বাসনা বেগম বলেন, গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া থানাধীন পাটগাতি গ্রাম থেকে কাজের জন্য সপরিবারে সাভারে এসেছিলেন অনেক আগেই। এসে বড় মেয়ে রিনা ও ছোট মেয়ে রূপাকে রানা প্লাজায় কাজে দিয়েছিলেন। বাকি দুই ছোট ছেলে ও স্বামী ইউনুস আলীকে নিয়ে ভালোই দিন কেটে যাচ্ছিলো তাদের। কিন্তু হঠাৎ তার পরিবারে নেমে আসে কালো আঁধার। রানা প্লাজা ধসে প্রাণ হারায় তার বড় মেয়ে রিনা। সেদিন শরীর খারাপ থাকায় কাজে যায়নি ছোট মেয়েটি। তাই প্রাণে বেঁচেছে সে। ঘটনার একদিন পর সাভার অধরচন্দ্র স্কুলের মাঠ থেকে মেয়ের লাশ নিয়ে দাফন করা হয়। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সাহায্যও পেয়েছেন। কিন্তু এত দিনেও ভুলতে পারেননি মেয়ের কথা। তাই শুধু এই দিনে নয় সময় পেলেই এখানে আসেন তিনি।
নিখোঁজ সন্তানের আজও কোন খোঁজ পাননি নূরনাহার খাতুন নামে এক সন্তানহারা মা। পাবনা জেলার আতাইকুলা থানাধীন শর গ্রামের মেয়ে ফারজানা। সেও কাজ করত রানা প্লাজায়। ধসে পড়া রানা প্লাজার ভবনের নিচে চাপা পড়ে নিখোঁজ হয়েছে সে।
নিখোঁজ মেয়ের ছবি হাতে নূর নাহার বলেন, তার কষ্ট সবচাইতে বেশি। তিনি তার মেয়ের লাশটাও পাননি। মেয়েকে এক পলক দেখার সৌভাগ্য হয়নি তার। এতবড় হতভাগা মা তিনি। আজও তার মেয়ের সন্ধান কেউ দিতে পারেনি তাকে। ক্ষতিপূরণের টাকা পেলেও সন্তান হারানোর শোক তাকে প্রতিনিয়ত দিয়ে যাচ্ছে অমানুষিক যন্ত্রণা। তাইতো প্রতি বছর এই দিনটিতে মেয়ের ছবি হাতে দাঁড়িয়ে থাকেন এখানে। যদি কেউ এসে বলে যে- তার মেয়ের সন্ধান পাওয়া গেছে।
শিউলির মা আনোয়ারা বেগম জানান, সেদিন ভবনের নিচে চাপা পড়ে তার মেয়ে অকাল মৃত্যুবরণ করেছে। ঘটনার ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও মেয়ের লাশটি খুঁজে পাননি তারা। তাই প্রতি বছর এই দিনটিতে মেয়ের লাশের সন্ধানে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, শিউলি মারা যাওয়ার সময় ৭ বছর বয়সী কন্যা শিমু ও পাঁচ বছরের ছেলে শিমুলকে রেখে গেছে। শিশু দুটি জানেনা তার মা কোথায়? মাঝে মধ্যেই মায়ের কথা মনে করে কান্নাকাটি করে বাচ্চাগুলো। কোনো কিছুতেই তখন তাদের মানানো যায় না। অনেক কষ্টে এতদিন ধরে অবুঝ এই বাচ্চাদের বড় করে তুলেছেন তিনি। কিন্তু তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না।
ঢাকাটাইমস/২৪এপ্রিল/আইআই/এমআর