পুঁজিবাজার

সব পক্ষের ইতিবাচক ভূমিকা দরকার

প্রকাশ | ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ১৮:১৮

অনলাইন ডেস্ক

নির্বাচনের পর দেশের পুঁজিবাজার মন্দাভাব থেকে বেরিয়ে আসার আশাবাদ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেই আশাবাদ বেশি দিন টেকেনি। ইতিমধ্যে বড় ধরনের দর সংশোধন হয়েছে। এখনো পতনের ধারায় রয়েছে। মঙ্গলবার বড় দরপতন ঘটেছে দুই বাজারেই।

পুঁজিবাজারে ওঠানামা থাকবে- এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এর মধ্যেই সচেতন বিনিয়োগকারীরা সঠিক সময়ে শেয়ার কেনাবেচার কাজটি করে নেন। সরকার ও শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট অনেকে বলছেন দেশের বাজার বর্তমানে স্বাভাবিক আছে। বাজার আরও শক্তিশালী করতে নানাভাবে কাজ করছে সরকার। বিশেষ করে বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থার জায়গাটি মেরামতের বিষয়টি।  

আমরা মনে করি, বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাবের পাশাপাশি কিছু মানুষের বাজার কারসাজি, প্লেসমেন্টসহ নানাভাবে বাজারের টাকা বাইরে চলে যাওয়া, গুজব ও প্যানিক সৃষ্টি, নানাজনের নানা বক্তব্যে বাজার প্রভাবিত হয়। এসব ক্ষেত্রেও সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

আমরা অনেক দিন ধরে দেখে আসছি, বাজারে বিশেষ করে কতিপয় ব্যক্তি ও কোম্পানির কারসাজি শেয়ারবাজারকে বারবার অস্থিতিশীল করছে। আর তাতে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু কোনো প্রতিকার নেই। রাঘববোয়ালরা বহাল তবিয়তে আছেন। নানা কায়দায় নানা নামে কারসাজির আশ্রয় নিয়ে বারবার বাজার থেকে টাকা লুটপাট করে নিচ্ছে তারা।

মোটা দাগে আমরা ১৯৯৬ ও ২০১০ সালকে শেয়ারবাজার ধসের স্মারক হিসেবে ধরে নিই। কিন্তু প্রায় প্রতিবছরই যে এক-দুবার করে বাজারে ‘খেলা’ হয়, আর তাতে নতুন করে বহু বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়ে ঘরে ফেরে, তার হিসাব রাখি না।

বাজারে এই নিয়ম হয়ে যাওয়া উল্লম্ফন আর পতনকে সূচকের নিয়ন্ত্রিত ওঠা-নামা বলছেন অনেকে। এটি কারসাজিরই আরেক সংস্করণ। ধারাবাহিকভাবে নজরে রাখলে মনে হবে কেউ একজন আড়ালে বসে সময়ে সময়ে সূচক নিয়ন্ত্রণের কাজটি করছেন। সর্বশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর পুঁজিবাজারে উল্লম্ফন ঘটে। কয়েক দিনের মধ্যে সূচক বাড়ে প্রায় ৭০০ পয়েন্ট। এরপর পতনের ধারা চলছেই। যেখান থেকে উঠেছিল, তার নিচে নেমেছে ইতিমধ্যে। বাজারের এই রহস্যজনক আচরণের কারণও খুঁজে বের করা দরকার।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল মনে করেন শেয়ারবাজারে সূচকের হঠাৎ উত্থান-পতনের পেছনে কেউ কেউ জড়িত রয়েছেন। যারা এসব ঘটনার পেছনে জড়িত তাদের খুঁজে বের করার কাজ চলছে। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, বর্তমানে বাজার স্বাভাবিক আছে। এর সমর্থনে তিনি জাপান ও ভারতের পুঁজিবাজারের উদাহরণ টেনেছেন।

ডিএসইর ব্রোকারেজ মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রথম নির্বাচিত সভাপতি এবং রশিদ ইনভেস্টমেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেডের এমডি আহমেদ রশিদ লালীও মনে করেন দেশের পুঁজিবাজার এখন ঠিক পথে আছে। তবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে হবে।
এই কাজটি কে করবে? লালীর মতে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এগিয়ে আসতে পারে। আবার স্টক এক্সচেঞ্জ ও বড় বিনিয়োগকারীরা মনে করেন সরকারকে এ ব্যাপারে ভ’মিকা পালন করতে হবে। আর বাজারে দরপতনে বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা বাজার নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন প্রায়ই।

এই তিন পক্ষ তো আছেই, আসলে পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার জন্য আরও অনেকের ভ’মিকা দরকার। বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউস, রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবি এমনকি সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও রয়েছেন এতে।

অর্থমন্ত্রীর একটি কথা আমরা প্রণিধানযোগ্য বলে মনে করি। জাপান, ভারতের মতো বাজারের স্থিতিশীলতার বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সেখানকার বিনিয়োগকারীরা বুঝেশুনে মার্কেটে আসে। কিন্তু আমাদের এখানে যারা আসেন তারা বেশির ভাগই বুঝেশুনে আসেন না। বুঝে-শুনে এলে আমাদের এত শক্তিশালী কমিশনের প্রয়োজন হতো না।’ বিনিয়োগকারীদের এই সচেতন করে তোলার কাজটি নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান ও স্টক এক্সচেঞ্জকে করতে হবে।

দেশের পুঁজিবাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, অনেক কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দাম অভিহিত মূল্যের (ফেস ভ্যালু) নিচে অবস্থান করছে। ইপিএস ও পিই ভালো। আপাতদৃষ্টে এটি বাজারে বিনিয়োগের সুযোগ বলেই মনে হয়। কিন্তু দেশের পুঁজিবাজারকে এই ব্যাকরণ মেনে চলতে দেখা যায় খুব কমই। বহু মন্দ কোম্পানির শেয়ারের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। এটাও প্রকৃত বিনিয়োগকারীদের আস্থার জায়গা নষ্ট করে। এ থেকে পুঁজিবাজারকে বের করে আনতে হবে।  

কোনো দেশের বিনিয়োগ পরিবেশের সুস্থতার এক বড় স্মারক পুঁজিবাজার। শিল্প-কারখানার পুঁজি আহরণের এই ক্ষেত্রকে স্বচ্ছ ও বিনিয়োগকারীবান্ধব করে তুলতে সব পক্ষকে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে। তাহলে পুঁজিবাজার তার আস্থা আবার ফিরে পাবে বলে আমরা মনে করি।