সন্ধ্যার ভাঙনে পাল্টে যাচ্ছে স্বরূপকাঠির মানচিত্র

সৈয়দ মাহফুজ রহমান, পিরোজপুর প্রতিবেদক
 | প্রকাশিত : ২৫ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:০৮

সন্ধ্যা নদীর অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হচ্ছে পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার বসতঘর, বাগান-বাড়ি, ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ জনপদ। পাল্টে যাচ্ছে কৌরিখাড়া ও গনমান গ্রাম তথা উপজেলাটির মানচিত্র।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে শান্তিহার কুনিয়ারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এরই মধ্যে বিদ্যালয়টির ৬২ শতাংশ জমির ৫৬ শতাংশই নদীতে বিলীন। বিদ্যালয় ভবনটি ভাঙন কবলিত নদীর পাড় থেকে মাত্র ১০ থেকে ১৫ ফুট দূরত্বে রয়েছে।

গত কয়েকদিন ধরে বিদ্যালয়টি সংলগ্ন নদীর পাড়ে বড় ধরনের ফাটল দেখা দেওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকার লোকজনের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যেকোনো সময় বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবনটি নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় আছেন তারা। নদীভাঙনের তীব্রতা দেখে পরিবারের সঙ্গে বিদ্যালয় ছেড়ে চলে গেছে অনেক শিক্ষার্থী। ফলে কমতে কমতে বর্তমানে ২৪ জন শিক্ষার্থী থাকলেও নিয়মিত উপস্থিত হচ্ছে ১৩ থেকে ১৫ জন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুম জানান, নদীভাঙনের কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের বেশিরভাগ অন্যত্র চলে গেছেন। সে কারণে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম।

স্থানীয় লোকজন জানান, আশির দশক থেকে শুরু হয়ে এ নদী ভাঙন এখনো অব্যাহত রয়েছে। এতে উপজেলার গনমান, ছারছীনা, দক্ষিণ কৌরিখাড়া, উত্তর কৌরিখাড়া, শান্তিহার, কুনিয়ারী, ব্যাসকাঠি, জলাবাড়ী, পূর্ব সোহাগদল সেহাংগল এলাকার কয়েক হাজার একর ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ জনপদের অনেক বসতভিটা সন্ধ্যার গর্ভে হারিয়ে গেছে।

তারা জানান, কয়েক বছর আগে দক্ষিণ ও উত্তর কৌরিখাড়া গ্রামের ভাঙন রোধকল্পে ব্লক ও বালু ভর্তি জিওটেক্স ব্যাগ ফেলা হয়। ফলে ওই এলাকায় ভাঙন থামলেও সন্ধ্যা নদীর দক্ষিণ দিকে ভাঙনের তীব্রতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

গত দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে দক্ষিণ কৌরিখাড়া ও গনমান গ্রামের অন্তত ৪০টি বসতভিটা, কৌরিখাড়া লঞ্চঘাট এলাকার ১০টি দোকানসহ প্রায় ৫০ একর বাগানবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন হুমকির মুখে রয়েছে কৌরিখাড়া বিসিক শিল্পনগরী, ইন্দুরহাট মিয়ারহাট বন্দর, কৌরিখাড়া ডাকঘরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। স্বরূপকাঠি-পিরোজপুর সড়কের কামারকাঠিতে চরম ঝুঁকিতে চলছে যানবাহন।

নদীভাঙনে বার বার স্থান পরিবর্তন করে সর্বস্বান্ত হয়েছেন অনেকে। ভিটেমাটি হারিয়ে অনেক পরিবার রাস্তার ওপরে, কেউবা অন্যের বাগানে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আর নতুন করে দফায় দফায় ভাঙনে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন দক্ষিণ কৌরিখাড়া ও গনমান গ্রামের সন্ধ্যাপাড়ের মানুষ।

গনমান গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, ‘নদী ভাঙনে বসতঘর স্থানান্তর করেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। জায়গা-জমি না থাকায় শেষ আশ্রয়স্থল বসতভিটায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছি। গ্রাম দুটির দুই-তৃতীয়াংশ সন্ধ্যার গহ্বরে হারিয়ে গেছে। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে স্বরূপকাঠির মানচিত্র থেকে অচিরেই হারিয়ে যাবে গ্রামগুলো।’

পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইদ আহম্মদ জানান, স্বরূপকাঠিতে সন্ধ্যা নদীর ভাঙনরোধে ৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।

গত ১৯ এপ্রিল পিরোজপুরের স্বরূপকাঠির সন্ধ্যা নদীর ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এবংপানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক। এ সময় পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নদীভাঙন কবলিত এলাকার গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/২৪এপ্রিল/প্রতিবেদক/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :