পরীক্ষা হলে চুল কেটে নেয়ায় ছাত্রের আত্মহত্যার চেষ্টা

প্রকাশ | ২৫ এপ্রিল ২০১৯, ২০:৫৯

নরসিংদী প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

নরসিংদীর বেলাবতে পরীক্ষার হলে শিক্ষক প্রকাশ্যে মাথার চুল কেটে নেয়ায় অপমানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বিজয় মিয়া নামে দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। তাকে বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

বুধবার বেলাব উপজেলার আমলাব ইউনিয়নের লাখপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে চুল কাটার ঘটনা ঘটে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন কাজল চুল কেটে দেন বলে জানা গেছে।

শিক্ষার্থী বিজয় মিয়া উপজেলার আমলাব ইউনিয়নের পাহাড় উজিলাব এলাকার আবু তাহেরের ছেলে।

শিক্ষার্থী ও অপদস্থ হওয়া শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যরা জানান, বুধবার সকালে শিক্ষার্থী বিজয় দশম শ্রেণির প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণ পরই পরিদর্শনে এসে কক্ষে প্রবেশ করেন প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন কাজল। ওই সময় তিনি শিক্ষার্থী বিজয়ের চুল কাটার ধরণ পছন্দ না হওয়ায় অফিস থেকে কাঁচি এনে সকল শিক্ষার্থীর সামনে তা এলোপাতাড়িভাবে কেটে দেন। আকস্মিক প্রধান শিক্ষকের এরকম কাজে হতভম্ব হয়ে পড়েন উপস্থিত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।

পরে পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফিরে শিক্ষার্থী বিজয় লজ্জায় ও অপমানে অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। সন্ধ্যা পর্যন্ত বিজয়ের জ্ঞান না ফেরায় পরিবারের লোকজন তাঁকে বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এ সময় চিকিৎসকরা তার চেতনানাশক ওষুধ খাওয়ার আলামত পান।

বেলাব স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মো. শ্যামল মিয়া বলেন, অতিরিক্ত ওষুধ গ্রহণের কারণেই শিক্ষার্থী বিজয় জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

বিজয়ের পিতা আবু তাহের বলেন, ‘আমার ছেলে দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে এ স্কুলে লেখাপড়া করে। তার রোল নাম্বার ৫। কোনদিন তার বিরুদ্ধে কোনো খারাপ কাজের অভিযোগ পাইনি। আমার ছেলের চুল প্রধান শিক্ষকের পছন্দ না হলে তিনি তাকে আলাদাভাবে বলতে পারতেন। এমনকি আমাদেরকে অফিসে ডেকে বলতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে ছাত্রছাত্রীদের সামনে বিজয়ের মাথার চুল কেটে দেন। এতে সে লজ্জা ও অপমানে কিছু একটা খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।’

এ ঘটনায় বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফখরুদ্দীন ভূঁইয়া সাহেব আমাদের থানায় ডেকে নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে আপোস করিয়ে দেন।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন কাজল একজন বদমেজাজি। তিনি নিজেই মাথার চুল কান পর্যন্ত রাখেন। ওই শিক্ষার্থী কী দোষ করল?

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন কাজলকে বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ে না পেয়ে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। এ নিয়ে অন্যান্য শিক্ষকরাও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।


এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহিদুল হক বলেন, ঘটনাটি সত্য। প্রকাশ্যে সকল শিক্ষার্থীর সামনে চুল কেটে নেওয়া রীতিমত নির্যাতন। একজন প্রধান শিক্ষক হিসেবে তিনি তা করতে পারেন না। এ ব্যাপারে কেউ আমাদের কাছে কোন অভিযোগ দেয়নি। তবে শুনেছি ওসি সাহেব প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের লোকজনকে আপস করিয়ে দিয়েছেন। এ ধরনের ঘটনা মীমাংসা হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানার ওসির সমন্বয়ে।
 
এ ব্যাপারে ওসি মো. ফখরুদ্দীন ভূঁইয়া ভাষ্য, এটাকে আসলে আপোষ বলা যাবে না। তিনি বলেন, ঘটনাটি শুনে আমি ওই শিক্ষার্থীর বাবা মা ও ওই প্রধান শিক্ষককে ডেকে পাঠিয়েছিলাম। কারণ প্রধান শিক্ষক যা করেছে তা অন্যায়। কিন্তু ওই শিক্ষার্থীর বাবা মা কোনো অভিযোগ দিতে চাননি। তাই আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। ঘটনার পর মনে হয় ওই শিক্ষকই অভিভাবকদের সঙ্গে সমঝোতা করেছেন।

ঢাকাটাইমস/২৫এপ্রিল/ইএস