চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর প্রস্তাব সংসদে নাকচ

প্রকাশ | ২৫ এপ্রিল ২০১৯, ২১:০০ | আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৯, ২১:৩০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর প্রস্তাব সংসদে উঠলেও তা নাকচ হয়ে গেছে। বর্তমান বয়সসীমা ৩০ বছরকেই সরকার যৌক্তিক মনে করছে।

বৃহস্পতিবার রাতে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন উত্থাপিত প্রস্তাব নাকচ করে বক্তব্য দেন। পরে পরে সদস্যদের কণ্ঠভোটে প্রস্তাবটি নাকচ হয়ে যায়।

এর আগে সংসদের বেসরকারি দিবসে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বগুড়া-৭ থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সাংসদ রেজাউল করিম বাবলু প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। ‘সরকারি চাকরিতে ঢোকার বয়সসীমা ‘৩৫ বছরে উন্নীত করা হোক’ লিখে প্রস্তাবটি আনেন তিনি।

তবে নানা যুক্তি দেখিয়ে ওই প্রস্তাবে রাজি নন বলে জানান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ ও অবসরের যে বয়সসীমা, সবদিক বিবেচনায় সেটাকে সরকার যৌক্তিক বলে মনে করছে। স্বাধীনতার পর প্রেক্ষাপট বিবেচনায় চাকরিতে প্রবেশে বয়সসীমা ২৫ থেকে ২৭ ও পরবর্তী সময়ে ৩০ করা হয়। এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশনজট নেই। ২৩ বছর বয়সে শিক্ষার্থীরা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পাচ্ছেন। ছয়-সাত বছর চাকরির প্রস্তুতির জন্য সময় পাচ্ছেন। তা ছাড়া চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করা হলে পেনশন সংক্রান্ত জটিলতা তৈরি হবে।’

এসব বিবেচনায় নিয়ে প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম বাবলুকে প্রস্তাবটি প্রত্যাহারের দাবি জানান। তবে সাংসদ বাবুল সেটি প্রত্যাহারে রাজি না হলে কণ্ঠভোটের আয়োজন করা হয়। কণ্ঠভোটে প্রস্তাবটির বিপক্ষে ভোট দেন সংসদ সদস্যরা।

এর আগে সাংসদ বাবলু চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘বিশ্বের ১৯২টি দেশের মধ্যে ১৫৫টি দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৫৫ বছর কোথাও কোথাও ৫৯ বছর পর্যন্ত। দেশে এখন শিক্ষিত বেকার ২৮ লাখের বেশি। শিক্ষিত বেকার পরিবারের জন্য বোঝা। শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের জন্য আন্দোলন করেছিল। তাদের সে সময় রাজাকার, শিবির, জঙ্গি বানানোর চেষ্টা হয়েছিল। এখন চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর জন্য আন্দোলন করছে। চাকরি না পেয়ে অনেক যুবক মাদক, ছিনতাই ও অন্যান্য সামাজিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করা উচিত হবে।’

গত জুনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২৯তম সভায় সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার সুপারিশ করা হয়। ওই সময় কমিটির ২১তম সভায় ৩২ বছর করার সুপারিশ করা হয়েছিল।

চাকরিপ্রার্থীদের বক্তব্য, বাংলাদেশে কোনোভাবেই ২২ বছরের আগে শিক্ষাজীবন শেষ হয় না। অথচ দেশে সরকারি চাকরিগুলোয় আবেদনের সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর। হিসাব অনুযায়ী, মাত্র পাঁচ বছরে শিক্ষাজীবন শুরু হলেও শুধু মাধ্যমিক পড়তেই জীবনের ১৫ বছর চলে যায়। আর উচ্চমাধ্যমিক (১৭ বছর), স্নাতক (২১ বছর) ও স্নাতকোত্তর পড়তে লাগে ২২ বছর। সেক্ষেত্রে নন-পিএসসি চাকরি ক্ষেত্রে আবেদন শুরুর বয়স ১৮ বছর রাখার আইনটি একেবারেই অকার্যকর। আবার বর্তমানে ক্যাডারের ক্ষেত্রে ২১ বছর বয়সে আবেদনের আইনটিও গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে বলে তাদের দাবি।

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে বিভিন্ন সময় রাজপথে আন্দোলনও হয়েছে। সরকারি ও বিরোধী দলের নেতারাও বিভিন্ন সময় চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন।

(ঢাকাটাইমস/২৫এপ্রিল/জেবি)