স্বপ্ন ভেঙে গেল চা বিক্রেতা শিক্ষার্থী সাত্তারের

প্রকাশ | ২৬ এপ্রিল ২০১৯, ২০:১১

নাটোর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

টাকার জন্য কলেজ থেকে পরীক্ষার প্রবেশপত্র না দেয়ায় ডিগ্রি (পাস) বুধবারের অনুষ্ঠিত ভূগোল পরীক্ষা দিতে পারেননি হতদরিদ্র পরিবারের চা বিক্রেতা এক শিক্ষার্থী। ঘটনাটি ঘটেছে নাটোরের সিংড়া উপজেলার বিল হালতি ত্রিমোহনী ডিগ্রি কলেজের ১ম বর্ষ (পাস) পরীক্ষার্থী আব্দুস সাত্তারের সঙ্গে।

এদিকে এই ঘটনায় জড়িত শিক্ষকের বিচার দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ওই কলেজের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে কলেজের চলমান এইচএসসির বার্ষিক পরীক্ষা বয়কট করে আন্দোলন করেন প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। পরে সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতোর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

ইউএনও’র হস্তক্ষেপে শিক্ষার্থী আব্দুস সাত্তার ২য় দিনের রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারলেও তার শিক্ষাজীবন থেকে একটি বছর পিছিয়ে যাওয়ায় তার লেখাপড়ার স্বপ্ন ভেঙে পড়েছে।

কলেজ ও শিক্ষার্থী সূত্রে জানা গেছে, সিংড়া উপজেলার বিল হালতি ত্রিমোহী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুস সাত্তার চা বিক্রি করে তার ডিগ্রি ১ম বর্ষের ফরম ফিলাপের জন্য এক হাজার ৮শ টাকা জমা দেয়। পরে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য কলেজে প্রবেশপত্র নিতে গেলে ওই কলেজের শিক্ষক মঞ্জুরুল আলম বকেয়া আরো এক হাজার ৫শ টাকা দাবি করে। বুধবার সকালে ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থী আব্দুস সাত্তার যথারীতি তার পরীক্ষার প্রবেশপত্রের জন্য কলেজের বিভিন্ন শিক্ষকের কাছে অনুরোধ ও ধরণা দিতে থাকে। পরে কলেজ থেকে জানিয়ে দেয়া হয় কলেজের উপাধ্যক্ষ গোলাম সারোয়ারের নির্দেশ টাকা ছাড়া কোন এডমিট কার্ড দেয়া যাবে না।

ডিগ্রি পরীক্ষার্থী আব্দুস সাত্তার বলেন,  ‘প্রায় পাঁচ মাস আগে তার মা মারা গেছে। তারপর থেকেই স্থানীয় সজলের দোকানে চা বিক্রি করে নিজের ও ছোট বোনের লেখাপড়ার খরচ যোগান এবং সংসার চালাই। আর অনেক কষ্ট করে চা বিক্রির টাকা যোগাড় করে ফরম ফিলাপের এক হাজার ৮শ টাকা জমা দিয়েছি। কিন্তু বাকি সামান্য টাকার জন্য আমাকে এডমিটকার্ড দেয়া হয়নি। এডমিটকার্ডের জন্য শিক্ষকদের অনেক অনুরোধও করেছি এবং বাকি টাকা চা বিক্রি করে দিতেও চেয়েছি। কিন্তু শিক্ষকদের একই কথা টাকা ছাড়া এডমিট দিতে পারব না। এখন আমার কষ্টের জীবন থেকে একটি বছর হারিয়ে গেল।’

ওই কলেজের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, ‘একটি গরিব পরিবারের ছেলে অনেক কষ্ট করে তার সংসার এবং লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সামান্য কিছু টাকার জন্য আর কিছু শিক্ষকদের দাম্ভিকতায় আজ শিক্ষার্থী আব্দুস সাত্তারের জীবন থেকে একটি বছর হারিয়ে গেল। এর সাথে জড়িত শিক্ষকদের উপযুক্ত বিচার চাই।

অভিযুক্ত শিক্ষক মঞ্জুরুল আলম বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা কমিটির সদস্যরা কলেজের উপাধ্যাক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গোলাম সারোয়ার স্যারের নির্দেশ পালন করেছি। আর ওই শিক্ষার্থীর অবস্থা সম্পর্কে আমার জানা ছিল না।’

কলেজের উপাধ্যাক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গোলাম সারোয়ার নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থী কলেজে অনিয়মিত ছিল।’

এবিষয়ে সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, ‘ঘটনা জানার পর ওই শিক্ষার্থীর পরবর্তী পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। আর এবিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার সাজ্জাদ হোসেনকে আহবায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।’

(ঢাকাটাইমস/২৬এপ্রিল/এলএ)