হাওরের কৃষিই এখন কৃষকের অস্বস্তি

সুনামগঞ্জ প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:২৩ | প্রকাশিত : ২৭ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:১০

প্রকৃতিগত কারণেই শুধুমাত্র বোরো ফসলের চাষাবাদ হওয়া হাওরাঞ্চলে এখন চলছে ধান কাটার উৎসব। কিন্তু খরায় এ বছর ধান খুব কম হওয়ায় দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়ছে না চাষিদের।

সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলায় বোরো ফসল উৎপাদনে কৃষকের ভাগ্যের চাকা আর সচল হচ্ছে না। বৈরী আবহাওয়ায় গত ৫/৬ বছরে এ ধান চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। এর মধ্যে একবার অকাল বন্যায় হাওর তলিয়েও সর্বশান্ত হয়েছেন তারা। ফলে কোনোভাবে দাঁড়াতেই পারছেন না চাষিরা।

তারপরও অধিকাংশ কৃষক কৃষিতে ভাগ্যের পরিবর্তন করতে এ চাষে লেগে আছেন। কিন্তু প্রতি বছর আশানুরূপ ফলন না পেয়ে লোকসানের শিকার হয়ে ঋণের জালে বেশি জড়িয়ে যাচ্ছেন। সে ঋণ পরিশোধ করতে অনেকে হিমশিম খাচ্ছেন। আবার অনেকে বংশ পরম্পরায় ধরে চলে আসা পৈত্রিক এ পেশা বদলে অন্য কোনো পেশায় চলে যাচ্ছেন। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে কাজের আশায় তারা চলে গেছেন রাজধানীসহ বিভিন্ন বড় শহরে।

সরেজমিনে গেলে শনির হাওরপাড়ের উজান তাহিরপুর গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম ও সজল বলেন, ‘খরায় এ বছর জমিতে ধান খুব কম হয়েছে। ধান কাটার ইচ্ছে ছিল না, কিন্তু গো-খাদ্যের জন্য লোকসান দিয়েও কাটতে হচ্ছে। বছরে বছরে কৃষিতে লোকসান দিতে দিতে এখন আর ঋণের বোঝা শেষ করতে পারছি না। তবুও বছরে বছরে বোরো ধান চাষাবাদ করি লাভের আশায়।’

বছরের পর বছর ধরে এভাবে স্বপ্নের বোরো ধানই কৃষকের মেরুদণ্ড ভেঙে দিচ্ছে। দিন দিন এ পেশা তাই বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও দাবি তাদের।

কৃষকরা জানান, ২০১৫ সালের জলাবদ্ধতায় হাওরগুলোতে বোরো ধান চাষাবাদ করতে পারেননি অনেকে। সেবার বৈশাখ মাসের অতিবৃষ্টিতে ধান শুকাতেও হিমশিম খেতে হয়েছে। শুকাতে না পারায় ধানে চারা গজিয়েছে।

২০১৬ সালের শিলাবৃষ্টিতেও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। হাওরের বাঁধ ভেঙে পানিতে ফসল তলিয়ে গেলে অনেক কৃষক ধানও কাটতে পারেননি।

২০১৭ সালের আগাম বন্যায় জেলার সবগুলো হাওরের বোরো ফসল তলিয়ে গেলে কৃষক কোনো ধানই ঘরে তুলতে পারেননি চাষিরা। সেবার দক্ষিণ শ্রীপুর, উত্তর শ্রীপুর ও তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে থেকে হাজারো মানুষ কাজের সন্ধানে চলে গেছেন বড় বড় শহরে।

গত বছর বোরো ধানের ব্লাস্ট রোগ ছড়িয়ে পড়ে হাওর থেকে হাওরে। এতে অধিকাংশ ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কাটতে পারেননি কৃষকরা। যারা সামান্য ধান কাটিয়েছেন, বাজারে মণপ্রতি ৬৫০ টাকা বিক্রি করায় তাদেরও লোকসান দিতে হয়েছে।

চলতি বছর দীর্ঘ খরা, শিলাবৃষ্টি ও ইঁদুরে কাটায় প্রচুর চিটা হওয়ায় এক কেয়ার (৩০ শতাংশ) জমিতে কৃষক ধান পাচ্ছেন মাত্র ৪-৫ মণ।

চাষিরা জানান, এর ওপরে এবার শ্রমিকরা ভাগে (ভাগালোতে) ধান না কাটায় নগদ টাকা দিয়ে নিয়োগ করতে হচ্ছে। ফলে প্রতি কেয়ার ধান কাটাতে শ্রমিকদের দিতে হচ্ছে দুই হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা। এ টাকা যোগানে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মণপ্রতি ৪০০ টাকায় শুকনো ধান দেওয়ার শর্তে ঋণ নিতে হচ্ছে তাদের।

তারা জানান, বছরের পর বছর ধরে এ অবস্থার মধ্যে বোরো ধান উৎপাদনে ব্যয় মিটাতে পারছেন না, আবার উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যম‚ল্যও পাচ্ছেন না। ফলে আরো বেশি করে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ে কৃষিতেই দিন দিন অনীহা চলে আসছে।

শনির হাওরপারে ধান কাটা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত কৃষক মোশারফ মিয়া জানান, তিনি চার কেদার জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন। তা থেকে যে ধান পাবেন, তা দিয়ে কোনোমতে শ্রমিকদের কাটার মজুরি পোষাতে পারবেন। তাই তিনি একটু কষ্ট হলেও নিজের জমির ধান কাটিয়েছেন।

নুর ঈমান মিয়া জানান, কষ্ট করে জমি রোপণ করেছেন, সামান্য হলেও ধান হয়েছে। কিন্তু চোখের সামনে পাকা সেই ধান নষ্ট হবে, তা তিনি মানতে পারছেন না। তাই লোকসান দিয়েও রোপণকৃত ধান কাটছেন তিনি।

তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস ছালাম বলেন, বৈরী আবহাওয়ায় হাওরপারের কৃষকরা আশানুরূপ ফলন পাচ্ছেন না। তারপরও চলতি বছর উপজেলার ২৫টি ছোট-বড় হাওরে ১৮ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৭এপ্রিল/প্রতিবেদক/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :