কাপ্তাই হ্রদে ডুবোচর

লঞ্চ বন্ধে দুর্ভোগে মানুষ, কমেছে বিদ্যুৎ উৎপাদনও

হিমেল চাকমা, রাঙামাটি থেকে
 | প্রকাশিত : ২৭ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:১৮

কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে অসংখ্য চর জেগে ওঠায় রাঙামাটি জেলার ছয় উপজেলার সঙ্গে লঞ্চ চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। ছোট বোটগুলোও আটকে যাচ্ছে চরে। দুর্ভোগে পড়েছেন জেলা-উপজেলায় যাতায়াতকারী লাখো মানুষ। দ্রব্যমূল্য বাড়ছে উপজেলাগুলোতে। হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় কমে গেছে কাপ্তাই জল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনও।

রাঙামাটি লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, এক সপ্তাহ ধরে লঞ্চ চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত বোটে মালামাল পরিবহন করা হচ্ছে। এসব বোটও চরে আটকে যাচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতি অতীতে হয়নি।

সরেজমিনে বরকল, লংগদু, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, বাঘাইছড়ি, নানিয়াচর উপজেলার নৌ-চলাচল রুটে গিয়ে দেখা যায়, চড়ে আটকা পড়ছে যাত্রী ও মালবাহী বোটগুলো।

বোটচালক আমির হোসেন বলেন, এ ধরনের অবস্থা আগে দেখা যায়নি। মনে হচ্ছে, পুরো হ্রদের তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পর পর বোটগুলোও আটকে যাচ্ছে। লঞ্চ তো পানিতে নামানোই যাচ্ছে না।

তিনি মনে করেন, বিগত বছরগুলোতে পাহাড়ধসের কারণে এ অবস্থা হয়েছে। চেঙী, কাচালং, কর্নফুলী, রেইংখং এ নদীগুলো চিহ্নিত করে খনন করা না হলে আগামীতে শুধু বর্ষা মৌসুম ছাড়া নৌ চলাচলও করতে পারবে না।

বোটচালক বিনিময় চাকমা বলেন, এ বছর খুব খারাপ অবস্থা। অসংখ্য ডুবোচর হ্রদে, কোথাও গভীরতা নেই আর। মৌসুমী ফল বাজারে আনা যাচ্ছে না। মালামাল আনা-নেওয়ায় কষ্ট হচ্ছে।

ভারত সীমান্তবর্তী বরকল উপজেলার ছোট হরিণা বাজারের ব্যবসায়ী আবুল মালেক বলেন, মালামাল আনতে শুধু পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিপরীতে বাড়তি দামও নিতে হচ্ছে। যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। কৃষকরা তাদের মালামালের দাম পাচ্ছেন না। খুব খারাপ অবস্থা। খালগুলো খনন খুব জরুরি হয়ে পড়েছে।

হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় কমেছে কাপ্তাই জল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনও। জল বিদ্যুৎকেন্দ্রে অফিসের তথ্যমতে, কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে তিনটিতেই বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে মাত্র ৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। অথচ, ভরা মৌসুমে হ্রদের পানি দিয়ে ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা থাকে।

কাপ্তাই হ্রদ যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি মিঠা পানির মাছ উৎপাদনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বর্তমানে যে সংকট দেখা দিয়েছে এখনই হ্রদ খননে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে এলাকায় মারাত্মক সংকট সৃষ্টি করবে- বলছেন হ্রদ ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের রাঙামাটি ব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান বলেন, কাপ্তাই হ্রদে পাঁচটি বড় নদী হয়ে পলি আসে। এগুলো সাগরে যেতে পারছে না। ফলে হ্রদের তলদেশ ভরাট হচ্ছে। নির্মাণের সময় এ হ্রদের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ৯০ বছর। ইতোমধ্যে ৬০ বছর পার হয়ে গেছে। ফলে তলদেশ ভরাট হয়ে অকেজো হওয়ার উপক্রম হচ্ছে। এলাকার পরিবেশ ঠিক রাখতে হলে মূল নদীগুলো চিহ্নিত করে খনন করতে হবে। না হলে এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন, মৎস্য উৎপাদন যোগাযোগসহ সব দিকে সমস্যার সৃষ্টি হবে।

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশীদ বলেন, ‘হ্রদ খনন অত্যন্ত জরুরি। এ ব্যাপারে তারা বার বার সরকারকে চিঠি দিয়ে যাচ্ছেন। গত বছর নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দল এসে হ্রদ খননের জন্য সমীক্ষা করে গেছে। এ সময় তারা খননের মাটি রাখার জায়গা চেয়েছিল। এটি ঠিক করে তাদের জানানো হয়েছে। কিন্তু এরপর আর সুখবর আসেনি। এবারও আমি চিঠি লিখেছি।’

১৯৬০ সালে কাপ্তাই এলাকায় কর্নফুলী নদীতে বাধ দিয়ে নির্মিত হয় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। বাঁধে প্রায় ৭০ হাজার হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গেলে সৃষ্টি হয় হ্রদ। পরিচিতি পায় কাপ্তাই হ্রদ। কিন্তু সৃষ্টির পর থেকে হ্রদের কোথাও খনন হয়নি। বাঁধ নির্মাণের ৯০ বছর পর হ্রদের তলদেশ ভরাট হয়ে অকেজো হওয়ার কথা বলেছিল নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানটি।

(ঢাকাটাইমস/২৭এপ্রিল/প্রতিবেদক/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :