সাইবার অপরাধ বাড়ছে

আগাম ধারণাই পারে প্রতিরোধ করতে

প্রকাশ | ২৭ এপ্রিল ২০১৯, ১৮:২৮

অনলাইন ডেস্ক

বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের যুগে বাস করছি আমরা। এর সুবিধাও আমরা পাচ্ছি প্রতিনিয়ত। কম্পিউটার ও ইন্টারনেট এখন মানুষের হাতের মুঠোয় পুরেছে সারা বিশ্বকে। মানুষকে করেছে পরস্পরের কাছে। এর নাম দাঁড়িয়েছে সোসাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম।

যে কেউ এখন ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব ইত্যাদির মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান, ভাব বিনিময়, ভাবনা-চিন্তা কোটি কোটি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারে। গড়ে তুলতে পারে নিবিড় যোগাযোগ। ঘরে বসেই মানুষ বিশ্বগ্রামের অধিবাসী। সাইবার দুনিয়ায় তার অবাধ ঘোরাফেরা প্রতিনিয়ত।

এই অবারিত সুবিধার উল্টো পিঠও আছে। সেটা অন্ধকার জগৎ। কেউ কেউ সেখানে অপরাধে জাড়ায়, আর কেউ কেউ শিকার হয়।

বিশ্বে এখন এক আলোচিত অপরাধের নাম- সাইবার ক্রাইম। সাধারণত ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, গুগল, স্কাইপ-এ ভুয়া আইডি খুলে বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল ও ব্লগে মিথ্যা ও মানহানিকর তথ্য প্রচার, অশ্লীল ছবি ও ভিডিও আপলোড এবং মেসেজ পাঠিয়ে প্রতারণার ঘটনা ঘটছে অহরহ।

বিভিন্ন তথ্যসূত্রের পরিসংখ্যান, রাজধানীসহ দেশজুড়ে সাইবার অপরাধের ঘটনা বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। প্রতি ২০ সেকেন্ডে একটি করে সাইবার অপরাধ ঘটছে। পুলিশসহ সরকারি সংশ্লিষ্ট সেলে প্রতিদিন জমা পড়ছে শত শত অভিযোগ। সাইবার অপরাধের ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগই নারী। অনেকে লিখিত অভিযোগ দিলেও বেশির ভাগই মোখিক অভিযোগ করেন, যা রেকর্ডভুক্ত হয় না। স্বভাবতই অপরাধের নথির হিসাব বাস্তবতার ধারে-কাছেও নেই।

পুলিশের ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (সিডিএমএস) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত তিন বছরে সারা দেশে ২ হাজার ৯৭২টি সাইবার অপরাধের অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ৭৭৫টি।

সাইবার অপরাধ দমনে সরকার ও প্রশাসন নানাভাবে অনেক জোরালোভাবে কাজ করছে বলে জানি। কিন্তু ভুক্তভোগীদের অভিযোগের বিচার ও শাস্তির হার খুবই কম। ফলে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও লোকলজ্জা, ভয়ভীতি ও হয়রানির ভয়ে অভিযোগ করে না। তাছাড়া স্বচ্ছ ধারণা না থাকা ও প্রতিকার পেতে সময়ক্ষেপণ হওয়ার কারণে অনেকে অভিযোগ করায় অনীহা দেখায়।

সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো সাইবার জগৎও অপরাধের বাইরে থাকবে না, এটা আমাদের মনে রাখতে হবে। একে এড়িয়ে যাওয়া বা অবহেলা করার সুযোগ নেই। তাই সম্ভাব্য অপরাধ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে সবাইকে। সাইবার অপরাধ নিয়ে বেশি বেশি সতর্কতামূলক প্রচারণা ও ব্যবহারকারীদের সচেতন করে তুলতে হবে সরকার ও প্রশাসনকে।

আমরা জানি যে, দেশে সাইবার অপরাধ দমনে তথ্যপ্রযুক্তি আইন হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনসহ (বিটিআরসি) সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ করছে এই ক্ষেত্রে। তারা বহু সফলতার প্রমাণ রাখছে। কিন্তু তার পরও সাইবার দুনিয়ায় প্রতিনিয়ত নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। অপরাধীরা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

এ ব্যাপারে আমাদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর আরও বেশি উদ্যোগী হতে হবে। অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত ও বিচারের মুখোমুখি করতে পারলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। তবে আমরা মনে করি, আর সব সমস্যার মতো এখানেও প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ অনেক শ্রেয়।

এটা ঠিক যে সাইবার দুনিয়ায় নতুন নতুন প্রযুক্তি যোগ হচ্ছে। অপরাধীরা নিত্যনতুন নানা ভার্চুয়াল যন্ত্র ব্যবহার করে অপরাধ সংঘটিত করছে। সে ক্ষেত্রে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদেরও আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি জোগাড় ও ব্যবহার করতে হবে। আগামী দিনে কী ধরনের সাইবার অপরাধ সংগঠন হতে পারে তার আগাম ধারণা থাকাও দরকার। সে জন্য প্রযুক্তি ও দক্ষতায় অপরাধীদের চেয়ে এগিয়ে থাকতে হবে আমাদের প্রতিষ্ঠান ও তার লোকবলের। অপরাধ দমনে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে হবে এখনই।