দেশে জঙ্গি হামলা

ঝুঁকি ও আশঙ্কা দুটোই বিবেচনায় রাখুন

প্রকাশ | ২৮ এপ্রিল ২০১৯, ১৫:৫৩

আরিফুর রহমান

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সব সময়ই উদ্বিগ্ন হওয়ার বিষয়। নিউজিল্যান্ড একটি শান্তির দেশ হিসেবে আমরা জানি। কিন্তু সেখানেও এই ধরনের ঘটনা ঘটল। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সরকার দেশীয় জঙ্গিবাদকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। কিন্তু জঙ্গিবাদ নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর এসব বক্তব্য বাস্তবতারই প্রতিফলন। আমরাও মনে করি দেশ থেকে জঙ্গি নির্মূল হয়ে গেছে এমন আত্মতৃপ্তিতে ভোগার কোনো সুযোগ নেই। নতুন নতুন ক্ষেত্রে নতুন নতুন মাত্রায় জঙ্গি কিংবা সন্ত্রাসী হামলা হচ্ছে এটা ভুলে গেলে চলবে না। অতিসম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় যেমন হয়েছে। শুক্রবার ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান টাইমস এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে আইএসআইয়ের হামলার হুঁশিয়ারির কথা জানায়।

মাঝে মাঝে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দাবি করে দেশ থেকে জঙ্গি নির্মূল হয়ে গেছে। জঙ্গি হামলার আশঙ্কা নেই। গতকাল যেমন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, বৈশ্বিক ঝুঁকির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ঝুঁকিতে থাকলেও হামলার কোনো আশঙ্কা নেই। দেশে কোনো হুমকি বা হামলার তথ্য এখন পর্যন্ত তাদের কাছে নেই।

আমরা পুলিশের এই কর্তার আশ্বাসে ভরসা রাখতে চাই। অতীতে তারা অনেক জঙ্গি হামলা ঠেকিয়েছে, জঙ্গি আস্তানা ধ্বংস করেছে। নিশ্চয়ই তারা এখনো নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছেন।

কিন্তু আমাদের ভয়, এই আশ্বাস না আবার তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা হয়ে যায়। তাহলে কোনো হুঁশিয়ারির প্রতি অবহেলা দেখানো হবে। আলস্যে তাদের চোখে তন্দ্রা আসা কিংবা সতর্কতা ও নজরদারি আলগা হয়ে পড়তে পারে।

ভুলে গেলে চলবে না, এখন পর্যন্ত যত জঙ্গি-সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, তার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আগে থেকে কোনো তথ্য মেলেনি। যে কয়টি ক্ষেত্রে পাওয়া গেছে, সেগুলো অবহেলা করা হয়েছে, কিংবা প্রতিরোধের যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিশ্বে জঙ্গি হামলা যেভাবে নতুন রূপে, নতুন অবয়বে হাজির হচ্ছে তাতে যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে হামলার আশঙ্কা থাকেই।

কাজেই আমরা মনে করি, জঙ্গি বিষয়ে কোনো আভাস কিংবা তথ্যকে অবহেলা করা যাবে না। আবার শুধু গোয়েন্দা তথ্যের জন্য বসেও থাকাও কাজের কথা নয়। সঠিক সময়ে তথ্য পাওয়ার নিরবচ্ছিন্ন জাল বিস্তারের পাশাপাশি আমাদের এমন নজরদারি ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে রাখতে হবে, যাতে জঙ্গিরা হামলার কোনো ধরনের সুযোগ তৈরি করতে না পারে।

জঙ্গি-সন্ত্রাস অতীতে ছিল, এখনো আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। তার প্রকৃতি আর ধরন বদলাবে। গত কয়েক দশক ধরে আমরা আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া থেকে শুরু করে আমেরিকা, ব্রিটেন, ভারত, পাকিস্তান, ইউরোপসহ নানা দেশে দেখে আসছি। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়।

তাই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলতে চাই, শুধু গোয়েন্দা দিয়ে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। জঙ্গিবাদ সম্পর্কে সরকার, প্রশাসন ও জনগণকে যথেষ্ট সজাগ থাকতে হবে। সবাই মিলে কাজ করতে হবে।