চট্টগ্রাম বন্দরে কমছে পণ্য খালাস ব্যয়-সময়

প্রকাশ | ৩০ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:১৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো, ঢাকা টাইমস

চট্টগ্রাম বন্দরে আসার পর জেটিতে পণ্যবাহী জাহাজ ভিড়তে সময় বেশি লেগে যাওয়ার কারণে পণ্য খালাসে ধীরগতি ছিল এতোদিন। ফলে জাহাজজটের কবলে পড়াসহ বহির্নোঙরে অপেক্ষার সময় বাড়ায় অতিরিক্ত মাশুল দিতে হচ্ছিল আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীদের। সময়মতো খালাস করতে না পারায় পণ্য নষ্ট হওয়াসহ ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখেও পড়তে হচ্ছিল তাদের।

বন্দর কর্তৃপক্ষের নতুন নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপন, দক্ষতা ও নজরদারিসহ নানা উদ্যোগে সেসব দুর্ভোগের অবসান ঘটতে শুরু করেছে। সরকারের নির্দেশনা অনুসারে কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস ও টাইম অব ডুয়িং বিজনেস কমাতে নেওয়া এসব উদ্যোগের সুফলও মিলছে। বন্দরের সক্ষমতা বেড়েছে, কমছে কস্ট অব ডুয়িং বিজনেসও।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে ২০ ফুট দীর্ঘ (টিইইউ’স) কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ৪৩ ডলার ও ৪০ ফুট দীর্ঘ কনটেইনারে খরচ পড়ে ৬৫ ডলার। এর সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত হয়। চারদিন ফ্রি টাইম দিয়ে থাকে চট্টগ্রাম বন্দর। এর মধ্যে কার্গো ডেলিভারি না নিলে তার খরচ নির্ভর করে আমদানিকারকের সিদ্ধান্তের ওপরে। ফ্রি টাইমের পর চার্জ যুক্ত হতে থাকে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে পুরো বাংলাদেশে একটি কনটেইনার হ্যান্ডলিং ব্যয় ২৯৮ ডলার। এর সঙ্গে পরিবহন ব্যয়, আমদানিকারকের সরবরাহ নিতে বিলম্ব এবং বিস্ফোরক অধিদপ্তর, কৃষি বিভাগ ও কাস্টমসহ বিভিন্ন দপ্তরের অনুমোদন আনার সময় জড়িত হয়।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ ব্যয় ভারতের সমপরিমাণ ১৯৮-২০০ ডলারে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রপ্তানির জন্য ৩৬ ঘণ্টা সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ভেতরে রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে সময় লাগে এক ঘণ্টা কয়েক মিনিট। বাকি সময়টা অফডক থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের গেট পর্যন্ত। আমদানির ক্ষেত্রে সময় বেধে দেওয়া হয়েছে ১৬৮ ঘণ্টা বা সাতদিন।

তুলনামূলক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৮ সালের জুলাই মাসে শূন্য দিনে জেটিতে ভিড়েছিল পাঁচটি জাহাজ। আর বন্দর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগের ফলে এ বছরের মার্চে ভিড়তে পেরেছে প্রায় সাতগুণ ৩২টি। জুলাইয়ে একদিনে বন্দর জেটিতে ভিড়েছিল ছয়টি, মার্চে ৫৯টি। দুইদিনে আগে ছিল তিনটি, মার্চে ১৯টি। তিনদিনে ছিল আটটি, মার্চে ১০টি। চারদিনে ছিল পাঁচটি। গত জুলাই মাসে ১৪ দিনে জাহাজ ছিল একটি।

বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ বলেন, ‘একটি জাহাজ কত কনটেইনার নিয়ে আসছে, তা নজরদারি করছি। আগে দুই হাজার কনটেইনার ধারণক্ষমতার জাহাজ ৬০০-৭০০ কনটেইনার নিয়ে আসতো। অথচ এ ধরনের তিনটি জাহাজের ধারণক্ষমতা একটিতেই রয়েছে। অহেতুক বেশি জাহাজ আসা বন্ধ হলে বন্দরে কনটেইনারবাহী জাহাজের জট থাকবে না। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ৬০ শতাংশের কম কনটেইনার নিয়ে আসতে পারবে না জাহাজ।’

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম জানান, ‘কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস ও কস্ট অব ডুয়িং টাইম কমাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছি। এর সুফল ইতোমধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। যেসব কনটেইনার জাহাজ শূন্য দিনে কিংবা একদিনে জেটিতে ভিড়েছে, সেগুলো যদি বহির্নোঙরে অপেক্ষমান থাকতো, তাহলে দৈনিক ১০ হাজার ডলার চার্জ আসতো। বন্দরের সক্ষমতা বাড়ায় এটি সাশ্রয় হচ্ছে। যা কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস কমানোর উদ্যোগেরই অংশ।’

তিনি বলেন, ‘বন্দর কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদেরও খরচ সাশ্রয়ে উদ্যোগী হতে হবে। বন্দরের যে কর্মযজ্ঞ, তাতে অনেক অংশীজন রয়েছে। সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। বর্তমানে দেশে কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস কমানোর ক্ষেত্রে বড় বাধা পরিবহন ব্যয়। এটিও বিবেচনায় নিতে হবে।’

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) পরিচালক খায়রুল আলম সবুজ বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর চট্টগ্রাম বন্দরে কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস ও কস্ট অব ডুয়িং টাইম কমেছে। এটি নিঃসন্দেহে স্বস্তিদায়ক। তবে দীর্ঘমেয়াদে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর, বিভিন্ন ইকোনমিক জোন, মেগা প্রকল্প, বিনিয়োগ ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে বে-টার্মিনালসহ অন্যান্য পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে।’

(ঢাকাটাইমস/৩০এপ্রিল/ব্যুরো/এআর)