সুনামগঞ্জে বাঁধ ভেঙে হাওরে ঢুকছে পানি

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৫ মে ২০১৯, ১৫:১৭

ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে অতিবৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা উপজেলার কয়েকটি বাঁধ ভেঙে ও বাঁধ উপচে বিভিন্ন হাওরে পানি প্রবেশ করছে।

এর ফলে হালির হাওর, খরচার হাওর, গোরাডুবা, বোয়ালা, লালুগোয়ালা, গোরমা, মাটিয়ান হাওর, বেহেলি, শনির হাওরসহ কয়েকটি হাওর প্লাবিত হয়ে ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, গত শনিবার (৪ মে) রাত ১২টায় জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী ও রহমতপুর এলাকা দিয়ে শনির হাওরে এবং বদরপুর ও নিতাইপুর এলাকা দিয়ে হালির হাওরে পানি প্রবেশ করে। এতে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সবাই।

এলাকাবাসীর অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি ও স্থানীয় মেম্বার মনছারের নেতৃত্বে বাঁধটি মজবুত করে তৈরি না করে বালু দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। যার ফলে বাঁধটি পানির চাপে সহজে ভেঙে গেছে।

এ ঘটনায় রবিবার সকালে প্লাবিত এলাকা পরিদর্শনে আসেন জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা পাল। এ সময় তিনি বলেন, বাঁধ নির্মাণে কোন গাফিলতি হয়েছে প্রমাণ পাওয়া গেলে ছাড় পাবে না কেউ। কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে হালির হাওরের পিআইসি কমিটির সভাপতি মনেছা বলেন, আমি সঠিকভাবে কাজ করেছি। দুই থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে বৌলাই নদীর পানি অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গিয়ে বাঁধ ভেঙে গেছে।

বিভিন্ন হাওর পাড়ের বাসীন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে সীমান্তের ওপারে ও সুনামগঞ্জে ভারী বর্ষণ হয়। এ কারণে মেঘালয় পাহাড় থেকে পাহাড়ি ঢল যাদুকাটা, সুরমা নদী দিয়ে নেমে আসায় বৌলাই, রক্তি, পাটলাইসহ কয়েকটি নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। আর উজান থেকে নেমে আসা পানি ভাটির দিকে প্রবল বেগে ধাবিত হতে থাকে। এতেই হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের ডিজাইন লেভেল অতিক্রম করে পানি কয়েকটি হাওরে প্রবেশ করে। আর কয়েকটি বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশে করে।

স্থানীয়রা বলেন, এতো বেশি পরিমাণ জায়গা দিয়ে পানি ঢুকছে তা কোনো ভাবেই আটকানো সম্ভবন নয়। হাওর পানি ঢোকায় কৃষক অনেকটা বিপদে পড়েছেন।

কৃষক মালেক মিয়া বলেন, হাওরে পানি প্রবেশ করায় কাটা ধান খলায় এখনও রয়েছে। কাটা ধান ও খড় গুলো বৃষ্টি আর এখন পানির কারনে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে।

বেহেলী ইউপি চেয়ারম্যান অসীম তালুকদার ও সদস্য খোকন মিয়া বলেন, কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে মানুষ ধান খড় কোনোটাই শুকাতে পারেননি। সেগুলো শুকানো ও মাড়াইয়ের কাজসহ খড় শুকানো নিয়ে চিন্তা করছেন কৃষকরা। এখন পানি হাওরে প্রবেশ করায় কৃষকরা ধান ও খড় শুকানো নিয়ে বিপদে আছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল মন্নাফ বলেন, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, শাল্লা, দিরাই, জগন্নাথপুর, জামাগলঞ্জ এসব এলাকার হাওরের শতভাগ জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা তাকে জানিয়েছেন হালির হাওর ও শনির হাওরের শতভাগ জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। এখন কিছু জমি রয়েছে যেগুলো অবস্থান বেশ উঁচু এলাকায়। হাওরে পানি প্রবেশ করায় ধানের কোনও ক্ষতি হবে না। দেরিতে রোপন করায় পাকতে দেরি হচ্ছে বলে কিছু ধান কাটা বাকি রয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, চলতি বোরো মওসুমে জামালগঞ্জ উপজেলায় ২৪ হাজার ৬৬০ হেক্টর ও তাহিরপুর উপজেলায় ১৮ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়। হালির হাওর ও শনির হাওরের ২০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছিল। বেশীর ভাগ ধান কাটা হয়েছে। এ পর্যন্ত হাওর এলাকায় মোট এক লাখ ৭২ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে এক লাখ ৬১হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে।

আর হাওর ছাড়া মোট ৫২ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে কাটা হয়েছে ২৬ হাজার হেক্টর জমির ধান।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়া বলেন, হাওরে পানি প্রবেশ করার খবর পেয়ে সকাল থেকে বিভিন্ন হাওরের বাঁধ পরিদর্শন করেছি। হাওরের ধান কাটা শেষ পর্যায়ে। কিছু জমি এখনো বাকি আছে সেগুলো কাটছেন কৃষকরা। পানি বাড়ার আগেই ধান গুলো কাটা শেষ হয়ে যাবে।

ঢাকাটাইমস/০৫মে/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :