ঘূর্ণিঝড় ফণী

এভাবেই দুর্যোগ মোকাবিলা করব

প্রকাশ | ০৫ মে ২০১৯, ১৫:৪৯

আরিফুর রহমান

সব উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা শেষে প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ফণী তার যাত্রা শেষ করেছে। বাংলাদেশ পেরোতে পেরোতে সে উৎসস্থল থেকে প্রায় আড়াই হাজার পথ পাড়ি দিয়েছে। আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ঘূর্ণীঝড়টি বাংলাদেশ পেরিয়ে ভারতের মেঘালয় হয়ে হিমালয়ে গিয়ে তার য্ত্রাা শেষ করার কথা। যদিও ইতিমধ্যে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ফণী তার বেশির ভাগ শক্তিই হারায়।

কোনো ঘূর্ণিঝড়ের এত দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়ার নজির এই উপমহাদেশে বিরল। শুক্রবার সকাল নয়টায় ভারতের ওডিশায় আঘাত হানার ২১ ঘণ্টা পর শনিবার সকাল ছয়টার দিকে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল অতিক্রম করে ফণী। আরও উত্তর দিকে চলে গিয়ে সকাল নয়টার দিকে ফরিদপুর ও আশপাশের অঞ্চল দিয়ে এটি আরও উত্তর-পূর্ব দিকে সরে যায়।

এই যাত্রাপথে ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আটজন নিহত এবং অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। এর আগে ওডিশায় ও পশ্চিমবঙ্গে তা-ব চালিয়ে বাংলাদেশে আসার সময় সেখানে প্রাণ নিয়েছে আটজনের। বাড়িঘর-গাছপালা ধ্বস্ত তো করেছেই। ঝরিয়েছে প্রবল বর্ষণ। ফণীর প্রভাবে ভেঙেছে বাঁধ, জলোচ্ছ্বসে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম।

ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ফণী গত কয়েক দিন ধরে শক্তি সঞ্চয় ও গতিপথ পাল্টে যেভাবে এগিয়ে আসছিল তাতে বাংলাদেশে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছিল। এই আশঙ্কা যে অমূলক ছিল না তার প্রমাণ ওডিশায় প্রায় ২০০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে ফণী।

সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া, শক্তিশালী ফণীর ছোবলে ভারত-বাংলাদেশে যত ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত তা থেকে আল্লাহ সবাইকে রক্ষা করেছেন। এর মধ্যে যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের স্বজন এবং ক্ষতিগ্রস্ত অন্যদের প্রতি আমাদের সমবেদনা রইল।

আসলে ঘূর্ণিঝড় মানেই উপকূলীয় এলাকার জন্য এক সাক্ষাৎ আতঙ্ক। বাংলাদেশে ১৯৭০, ১৯৮৫ ও ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। মারা যায় গরু-ছাগলসহ লাখ লাখ গৃহপালিত প্রাণী। বাড়িঘর, পাছপালা উপড়ে পড়ে হাজার হাজার। জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যায় সব। সে ছিল এক ভয়ানক আর বীভৎস দৃশ্য।

সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ করে একবিংশ শতকের শুরু থেকে ঘূণিঝড়ে এ ধরনের ক্ষয়ক্ষতি কমে আসে। এর পেছনে ভূমিকা রাখছে দুর্যোগ মোকাবিলা ও ব্যবস্থাপনায় আমাদের সরকারের নানা উদ্যোগ। মানুষের সচেতনতা। যথাযথ আবহাওয়া পূর্বাভাস।

১৯৯১ সালের আবহাওয়া পূর্বাভাস নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল, এত বিপুল ক্ষয়ক্ষতির জন্য আবহাওয়া পূর্বাভাসের সঙ্গে সঙ্গে তখকার সরকারের ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগও উঠেছিল।

আমরা দেখে আসছি গত প্রায় দুই দশক ধরে সরকার বেশ দক্ষতার সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করে আসছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডন সফরে থাকলেও সেখান থেকে তার প্রশাসনকে নিয়মিত নির্দেশনা দিয়ে গেছেন ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায়।

এবার ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবিলায় সরকারের সব বিভাগ সমন্বিতভাবে কাজ করেছে বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। আর এর ফলে সফলভাবে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সফল হয়েছি আমরা। উপকূলীয় এলাকা থেকে লাখ লাখ মানুষ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র ও নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ায় হতাহত কম হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী ও উদ্ধার তৎপরতার জন্য বিভিন্ন বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকরা তৈরি ছিলেন। এমনকি কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায়ও ইউনিয়ন-উপজেলা পর্যায়ে স্থানীয় সরকার, প্রশাসন ও সাধারণ মানুষ প্রস্তুত ছিল ঘূর্ণিঝড়ে সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তার জন্য।

একসময় বাংলাদেশ পরিচিত ছিল ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে। বিদেশি সাহায্য তখন আমাদের জন্য অত্যাবশ্যক ছিল। সে অবস্থা এখন আর নেই। বাংলাদেশ দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশ্বে অনন্য, এটা এখন বিশ্বে স্বীকৃত। তাই ঘূর্ণিঝড়ের কাছে এখন আমরা বিনাযুদ্ধে আত্মসমর্পণ করি না। তাকে মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকি।