আসছে বিগ বাজেট

আমজনতার পকেটে আটবে তো!

অরুণ কুমার বিশ্বাস
 | প্রকাশিত : ০৬ মে ২০১৯, ১৮:০০

আসছে বাজেট। আর মাত্র মাস খানেক পরে জুন মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় বাজেট ঘোষণা হয়ে থাকে। তবে এবারে ঈদ আনন্দের মাঝে বাজেট ঠিক কত তারিখ ঘোষিত হওয়া সংগত, তা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা হতে পারে। কানাঘুষায় শোনা যায়, এবার নাকি হাতিকায় (হাতির মতোন বিশাল) ও বৃহদাকার এক বাজেট নিয়ে আসছেন কর্তব্যক্তিরা।

বাজেট বড় হোক, তাতে আপত্তি নেই খোকা মিঞার। ছাপোষা মানুষ তিনি, দুবেলা দুমুঠো মুখে দিতে পারলেই খোকা খুশি হন। সত্যি বলতে, বাজেট ব্যাপারটা ঠিক কেমন হয়, কেন হয়, আর কীভাবেই বা হয়ে থাকে- এসব ব্যাপারে তার ধারণা মোটেও স্বচ্ছ নয়। চৌরাস্তার মোড়ে খোকার একখানা মুদিখানার দোকান আছে। সেই দোকান চালাতে গিয়ে তাকে দৈনন্দিন ও মাসকাবারি, দুই রকম হিসাব কষতে হয়। হিসাব না মিললে খোকা খুব অখুশি হন, তিনি বুঝতে পারেন, বাজেটে কোথাও গরমিল ছিল, তাই হিসাব মেলেনি।

আমরা আপাতত খোকা মিঞার বাজেট নিয়ে কিঞ্চিত আলোকপাতের চেষ্টা করি। তার বাজেট মাসকাবারি হলেও সরকারের বাজেট কিন্তু ফি বছর একবার করে হয়। খোকা মিঞার ভাষায় সরকার অনেক বড় মাপের মানুষ, তাকে সারা দেশ নিয়ে ভাবতে হয়, তাই তার মাথা বড়, মগজও বেশি। সরকারের নাকি আবার উন্নয়ন বাজেট থাকে, সেই সূত্রে ‘খাটতি বাজেট’ বলে একটা শব্দও খোকা শুনেছেন।

উন্নয়ন বাজেট মেলাতে মেলা টাকার দরকার। সরকার বাহাদুরকে দেশব্যাপী হরেক রকম উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করতে হয়, তারও একটা হিসাব-নিকাশ থাকে। এসব উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য যে বাজেট প্রস্তুত হয়, তাই হলো গিয়ে উন্নয়ন বাজেট। এ কাজে সরকার বিদেশ থেকেও টাকা আনে। অর্থাৎ ঋণ করে। কিন্তু তাতে খোকা মিঞার কী! ফি বছর এমন অনেক উন্নয়নের জোয়ার-জলোচ্ছ্বাস বইছে শোনা যায়, কিন্তু তাতে খোকাদের মতো সাধারণ মানুষের কপালের কোনো হেরফের হয় না, তারা সেই ছাপোষাই রয়ে যান।

খোকার সংসারে একুনে চারজন মানুষ। স্ত্রী আর ছেলেমেয়ে আছে দুটো। তার মাসকাবারি খরচ হিসাব করলে হাজার আষ্টেক ধার্য হয়। খোকা বুঝমান মানুষ। তিনি জানেন, ঋণ করে কখনো ঘি খেতে নেই। তাতে শরীর বাড়লেও মনের স্বাধীনতা নষ্ট হয়। হালের অনেক ঋণখেলাপির মতোন ছেঁচড়া ও নির্লজ্জ তিনি হতে পারবেন না। লোকে তার দিকে আঙুল তুলে বলবে ওই দ্যাখো ব্যাংকচোর যাচ্ছে, এমন কথা তিনি শুনতে পারবেন না।

খোকা মিঞা তার অভিজ্ঞতায় দেখেছেন, বাজেটের সময় কিছু কিছু জিনিসের দাম বাড়ে, আবার কিছু কমেও। এই যেমন বিড়ি-সিগারেট, তামাক-গুল-খৈনি, দামি টেলিভিশন ও গাড়ি, এসব জিনিসের দাম বাড়ে। খোকার তাতে কিছু এসে যায় না। কারণ তিনি খৈনিখোর নন, তিনি পান-তামাক বা সিগারেটও খান না। এসকল বস্তু স্বাস্থ্যের জন্য চরম হানিকর। তাই এসকল জিনিসের দাম বাড়লো কি কমলো, তাতে খোকা দোকানির কিচ্ছু এসে যায় না।

খোকার ঘরে একটা সাদাকালো টেলিভিশন আছে। থাকা দরকার, নইলে তার ছেলেপুলে দেশ-বিদেশের খবর জানবে কী করে! সরকার বাহাদুর বডড বিবেচক। তাই সাদাকালো টিভির দাম কখনও বাড়ান না। কিন্তু ওই যে কৃষিকাজের সরঞ্জাম, তার কী হবে! বা সারের দাম বাড়লে খোকার মতো মানুষের খুব ক্লেশ বাড়ে। সারের দাম না কমালে চাষাবাদ হবে কী করে! তার পকেটে তোর আর অঢেল টাকা নেই যে চাউল-আটা-ডাল কিনে খাবেন! না না, খোকা তা পারবেন না। খোকা তাই বাজেটের দিকে তাকিয়ে আছেন, এসকল গিফেন দ্রব্যের দাম যাতে একদম না বাড়ে।

খোকা মিঞা মুদি দোকানি বটে, তাই বলে তিনি অবিবেচক নন। তার কিছু সঞ্চয় আছে। জেলাশহরে গিয়ে একটা ব্যাংকে তিনি হিসাব খুলেছেন। তাতে উদ্বৃত্ত টাকা জমা রাখছেন, ছেলেপুলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে। কিন্তু কানাঘুষায় শোনা যায়, ব্যাংক হিসাবের উপরে নাকি একরকম কর ধার্য আছে, তাই নাকি আবার বৃদ্ধি পাবে। শুনেঅব্দি খোকার মন ভালো নেই। দুটো টাকা, তাও যদি আবার ব্যাংকবাবুরা আপসে কেটে নেন, তাহলে খোকা মিঞার কী হবে! খোকা চান যে, ব্যাংক হিসাবের উপরে ফিবছর যে আবগারী কর ধার্য করা হয়, ওটা যেন না বাড়িয়ে আরো কমানো হয়। তুলে দিলে আরো ভালো হয়। গরিবের সঞ্চয় বাঁচে।

খোকার কিছু টাকার সঞ্চয়পত্রও কেনা আছে। যাকে বলে সেভিংস সার্টিফিকেট। না না, তত বড় অংকের টাকা নয়, তাও আছে তো। কে যেন এক দুর্মুখ এসে বলল, সেই সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কামনো হবে! বললেই হল! এই কাজ করলে সরকার বাহাদুর গরিবের সঙ্গে খুব অন্যায় করবেন। কারণ সঞ্চয়পত্র কেনে কারা! খোকার মতো স্বল্প আয়ের মানুষ, আর যারা চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন তারা। বুড়োবুড়ি পেনশনের সামান্য কটা টাকা নেড়েচেড়ে খান, সেই টাকায় কেনা সঞ্চয়পত্রের সুদ যদি কমানো হয় তাহলে তো তারা চরম আতান্তরে পড়বেন। এটা করা কি ঠিক হবে! গরিবের উপর খাঁড়ার ঘা!

আরেকটা কথা অবশ্য শোনা যায়, সঞ্চয়পত্রের সুদ নাকি এখন থেকে ক্রেতার ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হবে। হবে তো! খোকা মিঞার ঠিক পেত্যয় হয় না। ইদানীং যা সব চুরি-ডাকাতির কথা শোনা যায়! হাজার হাজার কোটি টাকা নাকি ব্যাংক থেকে লোপাট হচ্ছে। এসব যাদের দেখার কথা, তারা করেটা কী শুনি! চোখে ঠুলি এঁটে আছেন বুঝি!

মুদি দোকানি খোকা মিঞা মেলা ভেবেচিন্তে শেষে দেখলেন, বাজেট বড় হোক, তাতে ক্ষতি নেই। কিন্তু সেই বাজেট জনবান্ধব হবে তো! নাকি সরকার বাহাদুর কেবল বড়লোকের কথাই ভাববেন! তাহলে গাঁও-গেরামের অতি নগণ্য প্রান্তিক চাষিদের কী অবস্থা হবে! কিংবা যারা ক্যানসারের রোগী, তাদের অসুখবিসুখে যে প্রাণদায়ী ওষুধ, তার দামও তো কমানো দরকার। আবার যাদের কিডনির সমস্যা আছে, নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে হয়, তাদের চিকিৎসার জন্যও সুখবর আসুক এই বাজেটে। বাড়ি-গাড়ি-হোমথিয়েটার বড়লোকের ব্যাপার, মদ-গাঁজা কারা খায় সে কথা নাই-বা বলল, এসব বিলাস সামগ্রীর দাম বাড়লেও তাতে খোকা মিঞার কোনো আপত্তি নেই। তার শুধু একটাই ভাবনা- ধেয়ে আসছে বিগ বাজেট, আমজনতার পকেটে আটবে তো!

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :