মিতুর ‘ভাগ্যবান’ খুনিরা

প্রকাশ | ০৭ মে ২০১৯, ০৮:৫৮

আশিক আহমেদ

পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার স্ত্রী খুন হলো, কিন্তু বাহিনীটির কেমন যেন গা ছাড়া ভাব। প্রকাশ্যে খুন, ভিডিও রেকর্ডও আছে, কিন্তু খুনিরা শনাক্ত হয়নি, বিচার পাচ্ছে না পরিবার। তিন বছরেও সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুর খুনিদের বিচারের মুখোমুখি করতে পারেনি পুলিশ। যদিও হত্যার পর বেশ ‘জেহাদি’ মনোভাব দেখিয়েছিল বাহিনীটি। এর মধ্যে আরও বিস্ময় ছড়িয়েছে বাবুলের চাকরিচ্যুতি। এর কোনো ব্যাখ্যা আসেনি পুলিশের পক্ষ থেকে। তিনি এই ঘটনায় সম্পৃক্ত কি না, এ নিয়ে নানা গুঞ্জন থাকলেও কোনো প্রশ্নেরই জবাব পাওয়া যায়নি।

২০১৬ সালের ৫ জুন নগরীর জিইসি মোড়ে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গুলি করে মিতুকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ তদন্ত করলেও পরে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়।

হত্যার পর পুলিশের সে সময়কার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছুটে গিয়েছিলেন চট্টগ্রামে, বলেছিলেন শাস্তি হবে দৃষ্টান্তমূলক। তবে বিচার শুরু তো দূরের কথা, তদন্ত প্রক্রিয়া কতটুকু আগাল, তা নিয়েও কথা বলতে নারাজ কর্মকর্তারা। কবে নাগাদ তদন্ত শেষ হবে তা সুনির্দিষ্টভাবে কিছুই বলতে পারছেন না পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ- কমিশনার মো. কামরুজ্জামান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘দেখুন এটি একটি স্পর্শকাতর মামলা। অনেক গুরুত্বপূর্ণ আসামি গ্রেপ্তার হতে এখনও বাকি। সুতরাং এমন একটি স্পর্শকাতর মামলাকে সময়সীমার মধ্যে বেঁধে দেওয়া ঠিক হবে না।’

পুলিশ সদর দপ্তরের কোনো নির্দেশনা রয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘সব ধরনের স্পর্শকাতর মামলায়ই বেশকিছু নির্দেশনা থাকে।’ তবে সেই নির্দেশনার কথা জানা যায়নি এখনো।

মেয়ে হত্যার বিচারের দাবিতে সোচ্চার মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন ও মা শাহেদা মোশাররফ এখন ক্ষুব্ধ। কারণ, তারাও জানতে পারছেন না তদন্তের অগ্রগতি।

এই মামলায় এ পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরা হলেন আনোয়ার, ওয়াসিম, এহতেশামুল হক ভোলা, সাইদুল ইসলাম সিকদার ওরফে সাকু, শাহজাহান, আবু নাসের গুন্নু ও শাহজামান ওরফে রবিন।

এদের মধ্যে আবু নাসের গুন্নু ও শাহজামান ওরফে রবিনের এ হত্যায় সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। অপর চারজনের মধ্যে সাইদুল ইসলাম ওরফে সাকুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, হত্যায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি তিনিই সরবরাহ করেছেন তার বড় ভাই মুসা সিকদার ওরফে আবু মুসাকে।

গ্রেপ্তারদের মধ্যে ওয়াসিম ও আনোয়ার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মুসার পরিকল্পনায় তারা মিতুকে খুন করেছেন বলে জবানবন্দিতে তারা দাবি করেন।

মুসা এ মোটরসাইকেল চালিয়েই হত্যায় নেতৃত্ব দেন বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। অপর তিনজনের মধ্যে এহতেশামুল হক ভোলা হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র সরবরাহকারী। শাহজাহান, ওয়াসিম ও আনোয়ার হত্যায় সরাসরি জড়িত বলেও তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

হত্যায় সন্দেহভাজনদের মধ্যে রাশেদ ও নবী নামে দুজন পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। বর্তমানে পলাতক মুসা সিকদার ও কালু নামে দুজন। মুসাকে ধরতে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ-সিএমপি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাহমুদা খানম মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমার জানামতে পুলিশ এখনো এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি। আমাদের কিছু জানায়ওনি।

হত্যার পর বাবুল আক্তার ঢাকায় মিতুদের বাসায় উঠেছিলেন। এর মধ্যে তিনি পুলিশের চাকরি হারিয়েছেন। আবার শ্বশুর বাড়িতে এখন থাকেনও না। জামাতার দিকেও সন্দেহের তীর মিতুর বাবার। বলেন, ‘প্রথমে আমরা পুলিশ ও সরকার তার (মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার) প্রতি পজেটিভই ছিলাম। পরে ডিবি অফিসে জিজ্ঞাসাবাদের পর যখন দেখা গেলে এই ঘটনায় তিনি (বাবুল) জড়িত তখনই তিনি চাকরি থেকে বরখাস্ত হলেন, আমাদের কাছ থেকে চলে গেলেন, বাচ্চাদের এখন আমাদের সাথে দেখা করতে দেয় না।’

‘কারণ বাচ্চাদের কাছ থেকে কিছু তথ্য বেরিয়ে এসেছিল। তাই বাবুল আক্তার এখন বাচ্চাদের কারও সঙ্গে দেখা করতে দেয় না।’

বাবুল আক্তার বর্তমানে বেসরকারি হাসপাতাল আদ দ্বীনের ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেন। নিজের বৃত্তের বাইরে যান না বললেই চলে। আর যেটা ‘নিয়ম করে’ করেন, সেটা হলো গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলা। তিন বার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এমন অভিজ্ঞতা গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বারবার হয়েছে।