এলজিইডিতে একজনের বিরুদ্ধে আরেকজন

প্রকাশ | ০৭ মে ২০১৯, ০৯:৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর-এলজিইডিতে শীর্ষ এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিইডি) মন্ত্রীর কাছে নানা অভিযোগ জমা পড়েছে আরেক শীর্ষ কর্মকর্তার নামে।

দুজনই এলজিইডির একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্বে আছেন। আর সংস্থাটির বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে আগে দুই অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর দ্বৈরথ সংস্থাটিতে নানা আলোচনা তৈরি করেছে। আবুল কালাম আজাদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৮ মে। শেষ বেলায় তার বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে পদোন্নতি, বিএনপি সম্পৃক্ততাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে, যদিও তিনি মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টায় আছেন।

এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার এলজিইডিমন্ত্রী তাজুল ইসলামের কাছে লিখিত একটি অভিযোগ জমা পড়ে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আহসান হাবিবের সইসহ। তার অভিযোগ সহকর্মী এ কে আজাদের বিরুদ্ধে।

চিঠিতে এ কে আজাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, বিএনপিপন্থি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা ও চারিত্রিক স্খলনসহ নানা অভিযোগ আনা হয়েছে।

স্থানীয় সরকারবিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি, এলজিইডি প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতির কাছেও এই অভিযোগের অনুলিপিও দেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে চিঠিতে বলা হয়, এ কে আজাদ এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর পদ বাগিয়ে নিতে ‘অবৈধ টাকার বস্তা’ নিয়ে মাঠে নেমেছেন।

চিঠিতে এ কে আজাদের বিরুদ্ধে বিশাল ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, টাঙ্গাইল সদরের অধিবাসী এ কে আজাদের পরিবার পুরোপুরি বিএনপিপন্থি। তার ভাই বিএনপির সক্রিয় নেতা। সম্প্রতি তিনি উপজেলা নির্বাচন করেছেন। বর্তমান প্রধান প্রকৌশলীর মদদপ্ষ্টু এ কে আজাদ  বিগত এক বছরে নানা নানা অপকর্ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে গড়েছেন টাকার পাহাড়। ঢাকার মিরপুর ও শ্যামলীতে তার দুটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট আছে।

চিঠিতে বলা হয়, এ কে আজাদের একাধিক স্ত্রী রয়েছেন, যাদের মধ্যে দুজন ঢাকায় আলাদা বাসায় বসবাস করেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে আজাদ তিনটি সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন। এর মধ্যে দুটি গাড়ি চালান তার দুই স্ত্রী।

এ কে আজাদ বর্তমান প্রধান প্রকৌশলীর বিভিন্ন অপকর্মের সাক্ষী- এমনটা দাবি করে চিঠিতে বলা হয়, প্রধান প্রকৌশলীর জন্য নিয়োগ, বদলি, প্রকল্প গ্রহণ, আউটসোর্সিং, পিডি নিয়োগ, নিজস্ব ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিয়ে বিপুল অংকের ঘুষ গ্রহণ করে আসছেন গত এক বছর ধরে।

আজাদ এর আগে প্রাথমিক শিক্ষা প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। তখন তার ইশারাতে প্রশাসনিক সব কাজ পরিচালিত হতো বলেও অভিযোগ করা হয়েছে মন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে।

আজাদের নিজস্ব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, যা তার অর্থায়নে তার ভাইদের দ্বারা পরিচালিত হয়। তার সেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিগত এক বছরে টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলায় তার প্রচ্ছন্ন মদদে এলজিইডির বড় বড় কাজ অবৈধভাবে বাগিয়ে নিচ্ছে।

এ ধরনের একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী পদে নিয়োগ পেলে এই প্রতিষ্ঠানটির জন্য তা আত্মহত্যার শামিল হবে বলেও মনে করেন আহসান হাবিব।

এলজিইডির ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের স্বার্থে বর্তমান প্রধান প্রকৌশলীর অবসরের পর একজন সৎ, যোগ্য, পরিশ্রমী ও দক্ষ অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীকে পদোন্নতি দেয়ার দাবি করা হয় চিঠিতে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুই অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এ কে আজাদ ও আহসান হাবিব-কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। দুই জনের কেউ ফোন ধরেননি।